Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অন্ডালকে সিঙ্গুরের দর দিতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী

সিঙ্গুর আর অন্ডাল এক নয় আসানসোলে জনসভায় দাঁড়িয়ে বলে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ধমানের অন্ডালে প্রস্তাবিত বিমাননগরীর জন্য অধিগৃহীত জমি নিয়ে অনেকটা সিঙ্গুরের ধাঁচেই আন্দোলন শুরু হয়েছে। অনিচ্ছুক চাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিজেপি। অন্ডালের কৃষিজমি রক্ষা কমিটি ইতিমধ্যে সিঙ্গুরের চাষিদের কাছ থেকে সমর্থনও চেয়েছেন।

আসানসোলের পুলিশলাইন মাঠে বিভিন্ন প্রকল্পের চেক দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: শৈলেন সরকার।

আসানসোলের পুলিশলাইন মাঠে বিভিন্ন প্রকল্পের চেক দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: শৈলেন সরকার।

সুশান্ত বণিক ও সুব্রত সীট
আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৯
Share: Save:

সিঙ্গুর আর অন্ডাল এক নয় আসানসোলে জনসভায় দাঁড়িয়ে বলে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বর্ধমানের অন্ডালে প্রস্তাবিত বিমাননগরীর জন্য অধিগৃহীত জমি নিয়ে অনেকটা সিঙ্গুরের ধাঁচেই আন্দোলন শুরু হয়েছে। অনিচ্ছুক চাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিজেপি। অন্ডালের কৃষিজমি রক্ষা কমিটি ইতিমধ্যে সিঙ্গুরের চাষিদের কাছ থেকে সমর্থনও চেয়েছেন।

কিন্তু বৃহস্পতিবার আসানসোলে পুলিশ লাইন মাঠে মমতা বললেন, “কেউ কেউ সিঙ্গুর আন্দোলনের নাম নিচ্ছে। কিন্তু জেনে রাখুন, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম একটাই ছিল।” আজ, শুক্রবার দুর্গাপুরের কর্মিসভায় মমতার সঙ্গে দেখা করার আর্জি নিয়ে ইতিমধ্যে দুর্গাপুর মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছে কৃষি জমি রক্ষা কমিটি। কিন্তু তার আগেই মমতা বলে দিলেন, “ওখানে বিমাননগরী তৈরি করতেই হবে। একটা প্ল্যাকার্ড লিখে কেউ বসে পড়ছে। এ সব মানব না।”

সঙ্গত কারণেই অন্ডালের অনিচ্ছুক জমিদাতারা প্রশ্ন তুলছেন, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের পরে কি কৃষি জমি আন্দোলনের যৌক্তিকতা শেষ হয়ে গিয়েছে? যে ঔপনিবেশিক আইনে সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তা বাতিল হয়ে গিয়েছে? অন্ডালে তো সিঙ্গুরের মতোই বাম আমলে ওই একই আইনে জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল। তা হলে কেন সিঙ্গুরের ক্ষেত্রে যা বৈধ এবং সঙ্গত, অন্ডালের ক্ষেত্রে সেটাই মানতে পারছেন না মমতা? সে কি এই কারণে যে সিঙ্গুরকে তুরুপের তাস করে তাঁর স্বার্থসিদ্ধি হয়ে গিয়েছে এবং শিল্পহীন রাজ্যে বিমাননগরীই আপাতত তাঁর আশা-ভরসা?

মমতার যুক্তি, “আমি খবর নিয়ে দেখেছি, ৯টি পরিবার আছে যাদের জমি নিয়ে সমস্যা আছে। ওখানে আমরা পুনর্বাসন দেব। পাঁচ কোটি টাকা খরচ হবে। কিন্তু জাতীয় সড়কের পাশে দেওয়া হবে না।” অর্থাৎ, সিঙ্গুরের ক্ষেত্রে যা ছিল বহু চাষির রুটি-রুজির সমস্যা, অন্ডাল সেই তুলনায় কিছুই নয়। এবং যতটুকু বা সমস্যা আছে, তার সমাধানও তিনি করে ফেলবেন। অথচ অন্ডাল ব্লক কৃষি জমি রক্ষা কমিটির হিসেব বলছে, জাতীয় সড়কের পাশে প্রায় ১০৯ একর জমির ছ’শোরও বেশি মালিক চেক নেননি। ক্ষতিপূরণ পাননি হাজার তিনেক বর্গাদার ও খেতমজুর।

বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের প্রতিক্রিয়া, “মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী সত্যের অপলাপ করতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। কোথা থেকে উনি ন’জনের কথা পেলেন বোঝা যাচ্ছে না। হয়তো ১০৯ একর সংখ্যাটা থেকে ৯ সংখ্যাটা পেয়েছেন! ক্ষমতায় আসার আগে যিনি জোর করে অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে ছিলেন, ক্ষমতায় বসেই তিনি কোন প্রলোভনে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন, সেটাই ধাঁধা।” জমি রক্ষা কমিটির সম্পাদক সুশীল ঘোষ বলেন, “আমরা মনে করি সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, বেদিক ভিলেজ, লোবা থেকে অন্ডাল সব এক। সব জায়গায় মানুষের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক ভূমি আইনে শিল্পপতি ও পুঁজিপতির স্বার্থরক্ষা করা হয়েছে।”

শাসকদল যে সিঙ্গুরের থেকে অন্ডালকে আলাদা করে দেখানোর চেষ্টায় মরিয়া, তা আগেই বোঝা গিয়েছিল। গত মাসেই অন্ডালের জমি আন্দোলন নিয়ে বিতর্কের জেরে দলের চাপের মুখে আসানসোলের নেতা তথা রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের দাবি, সিঙ্গুর আর অন্ডালের আন্দোলন এক নয়। এ দিন মমতা কার্যত সেই তত্ত্বেই সিলমোহর লাগালেন। কলকাতা থেকে কপ্টারে আসানসোল যাওয়ার পথে এক বার নির্মীয়মাণ বিমাননগরীতে ঘুরেও যান তিনি। যা শুনে আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের প্রতিক্রিয়া, “তৃণমূলের কোনও নীতি নেই। ওটা একটা সুবিধাবাদী দল, সমস্ত রকম অন্যায় ও অনিয়ম করছে।”

সুভাষবাবুর দাবি, “আমরা মনে করি, সিঙ্গুরের থেকে অন্ডাল অনেক বড় কেলেঙ্কারি। অন্ডালে জমি নিয়ে প্রোমোটারি ব্যবসা করতে দেওয়া হয়েছে।” বিমাননগরী নির্মাণকারী সংস্থা বেঙ্গল এরোট্রপলিসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পার্থ ঘোষ এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে সংস্থার এক কর্তার দাবি, প্রোমোটারির অভিযোগ ভিত্তিহীন। রাজ্য ও কেন্দ্রের তরফে প্রকল্প এলাকার মধ্যেই কোথাও শিল্প, কোথাও আবাসন, কোথাও হাসপাতাল গড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চাষিদের পুনর্বাসন দিতে আপত্তি নেই। তবে কেউ নিজের পছন্দের জমি চাইলে তা তাঁরা দিতে পারবেন না। সুশীলবাবু পাল্টা বলেন, “আমরা শিল্পের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু সরকারেরও দেখা উচিত, কেউ যেন বঞ্চিত না হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE