রাহুল গাঁধীর নির্দেশ শিরোধার্য করে শেষ পর্যন্ত লোকসভা ভোটে প্রার্থী হলেন প্রদেশ কংগ্রেসের দুই প্রবীণ এবং ওজনদার নেতা মানস ভুঁইয়া ও আব্দুল মান্নান। প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানসবাবু লড়বেন মেদিনীপুরের ঘাটাল থেকে। আর মান্নান লড়বেন হুগলির শ্রীরামপুর কেন্দ্রে।
শুক্রবার এই দুই নেতা-সহ পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের মোট ২১ জন প্রার্থীর নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে হাইকম্যান্ড। এ নিয়ে রাজ্যের মোট ৪২টি আসনের মধ্যে ৩৯টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল কংগ্রেস। বাকি তিনটি আসন হুগলি, কৃষ্ণনগর ও দুর্গাপুর-বর্ধমান। কংগ্রেস সূত্রে বলছে, হুগলি ও কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী যে দুই প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করেছিলেন, তাঁদের ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে ওই দুই জেলার দুই নেতা আব্দুল মান্নান ও শঙ্কর সিংহের। তাই এ নিয়ে ফের আলোচনা হবে। দুর্গাপুর-বর্ধমান কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতা রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে বুঝিয়ে প্রার্থীর করার চেষ্টাও অব্যাহত। এই তিন আসনে প্রার্থীর নাম রাহুলের কলকাতা সফরের আগেই ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
এ দিন মানস ও মান্নানের নাম ঘোষণার পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলেন, “মানসদারা শেষ পর্যন্ত রাজি হওয়ায় আমি খুব খুশি।”
রাহুল গাঁধী এ বারে প্রথম থেকেই চাইছিলেন, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ওজনদার নেতারা ভোটে লড়ুন। তাতে দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়বে। কিন্তু মান্নান ও মানসবাবু, কেউই এই প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না। মানসবাবু স্ত্রী গীতাদেবীর নাম প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন। পরে দলীয় নেতৃত্বের চাপে মান্নান প্রথমে রাজি হন। নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণার আগেই শ্রীরামপুরে প্রচারে নেমে পড়েন তাঁর অনুগামীরা। কিন্তু পাশের কেন্দ্র হুগলি নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য হয়। মান্নান প্রচারের কাজ থামিয়ে দেন। দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে এমনও বলেন, রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। এই খবর আনন্দবাজারে প্রকাশিত হওয়ার পরে তাঁর অনুগামী, শুভানুধ্যায়ীরা তাঁকে চাপ দিতে থাকেন, যাতে তিনি ভোটে দাঁড়ান। এ দিন তাঁরা প্রদীপ ভট্টাচার্য, সোমেন মিত্র, অমিতাভ চক্রবর্তীদের নিয়ে একটি সভাও করেন। এই নেতারাও বলেন, ভোটে লড়ুন মান্নান। তার পরে রাতে দিল্লি থেকে প্রকাশিত তালিকায় তাঁর নাম ঘোষণা হয়।
কিন্তু হুগলি আসনের জন্য যে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হল না? এই প্রশ্নের জবাবে মান্নান বলেন, “দিল্লি কী করবে না-করবে, সেটা তারাই ঠিক করবে। এ ব্যাপারে আমি কী বলব!” একই সঙ্গে নিজেকে দলের অনুগত সৈনিক বলে দাবি করে মান্নানের বক্তব্য, “দল যা বলবে তা আমি মানতে বাধ্য।”
ঘাটাল কেন্দ্রে নাম ঘোষণার পরে মানসবাবুও নিজেকে দলের অনুগত সৈনিক বলেই বর্ণনা করেছেন। তবে সবংয়ের বিধায়ক, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি মানসবাবু ঘাটালে প্রার্থী হওয়ার পরে সেখানে লড়াই জমে গেল বলেই মনে করছেন রাজ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই কেন্দ্রেই তৃণমূলের প্রার্থী দেব বা দীপক অধিকারী। দু’জনই ভূমিপুত্র। তারকার আলো নেই, তবে বামফ্রন্ট প্রার্থী সন্তোষ রাণাও ভূমিপুত্র। তাঁর আদি বাড়ি সবংয়ের দশগ্রামে। বর্তমানে সন্তোষবাবু সিপিআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক।
তাঁর নাম ঘোষণার পরে মানসবাবু বলেন, “শুরু থেকে আমার বিরুদ্ধে একটা অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল যে, আমি ভয় পাচ্ছি। কিন্তু তা সর্বৈব মিথ্যা। এটা ঠিকই যে, আমি চেয়েছিলাম স্থানীয় তৃণমূল স্তরের নেতাকে প্রার্থী করা হোক। তবে দল যখন প্রার্থী করেছে, আমি নিষ্ঠাবান সৈনিকের মতোই লড়ব।”
মানসবাবু প্রার্থী হওয়ায় এলাকার কর্মী-সমর্থকেরা কিন্তু দেবের বিরুদ্ধে উজ্জীবিত হয়ে লড়তে পারবেন বলেই মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব। সঙ্গে পরিসংখ্যান দেখিয়ে তাঁরা আরও বলছেন, গত লোকসভা নির্বাচনে জোটের প্রার্থী প্রায় দেড় লাখ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন বাম প্রার্থীর থেকে। এ বারে তাই দেবকে এনে চমক দিতে চাইলেও ঘাটালে লড়াই কঠিন হবে তৃণমূলের। তৃণমূল শিবিরের পাল্টা বক্তব্য, সেই ভোটের পরে পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। ক’দিন আগে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল একা লড়ে বিপুল ব্যবধানে জিতেছে এই এলাকা থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy