Advertisement
E-Paper

উচ্চশিক্ষা সংসদের শীর্ষে ফিরছেন মন্ত্রীই

ক্ষমতায় আসার আগে শিক্ষাকে রাজনীতিমুক্ত করার ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। দীর্ঘ বাম শাসনে শিক্ষার ‘অনিলায়ন’-এ ভুক্তভোগী বাংলা সেই প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখতে চাইছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভাঙতে দেরি হয়নি। ইদানীং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেই রাজনীতিরই আস্ফালন। তার উপরে রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান-পদে শিক্ষামন্ত্রীকে বসাতে চাইছে তৃণমূল সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৬

ক্ষমতায় আসার আগে শিক্ষাকে রাজনীতিমুক্ত করার ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। দীর্ঘ বাম শাসনে শিক্ষার ‘অনিলায়ন’-এ ভুক্তভোগী বাংলা সেই প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখতে চাইছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভাঙতে দেরি হয়নি। ইদানীং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেই রাজনীতিরই আস্ফালন। তার উপরে রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান-পদে শিক্ষামন্ত্রীকে বসাতে চাইছে তৃণমূল সরকার। এর মাধ্যমে সরকার আসলে শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়াতে চলেছে বলেই মনে করছে শিক্ষা শিবির।

এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতিমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভিন্ন সুরে গাইছে মমতার সরকার। বাম জমানার মতোই স্কুল-কলেজের পরিচালন সমিতিতে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রী-অনুগামীদের বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এমনকী বহু ক্ষেত্রেই শিক্ষাগত যোগ্যতা না-থাকলেও নিছক শাসক দলের নেতা-মন্ত্রী-অনুগামী হওয়ার সুবাদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন অনেকে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রেও বাম আমলের মতো তৃণমূল শাসনেও দলীয় আনুগত্য বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম নীতি নির্ধারক সংস্থা উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের পদে মন্ত্রীকে বসিয়ে দিয়ে শিক্ষায় রাজনীতিকরণের প্রক্রিয়াকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দেওয়া হল বলেই তাঁদের ধারণা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর রূপরেখা মেনে ১৯৯৪ সালে উচ্চশিক্ষা সংসদ তৈরি করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। এই সংক্রান্ত আইনে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীকেই সংস্থার চেয়ারম্যানের পদে রাখা হয়। কিন্তু ২০০৬ সালে, সপ্তম ফ্রন্টের আমলে দায়িত্ব পেয়ে এই ধারায় পরিবর্তন আনেন তৎকালীন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরী। আইন সংশোধন করে সংস্থার চেয়ারম্যানের পদ থেকে মন্ত্রীকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় শিক্ষাবিদকে। সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান শিক্ষাজগতের অনেকেই।

এত দিন সেই ভাবেই চলছিল। কিন্তু বিধানসভার চলতি অধিবেশনেই ওই আইনে ফের পরিবর্তন ঘটাতে চলেছে তৃণমূল সরকার। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা নিয়ে মেধা-তালিকা তৈরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নজরদারির ভার দেওয়া-সহ নানা পরিবর্তন ঘটানোর কথা বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিলে। ইতিমধ্যেই বিলটি বিধায়কদের মধ্যে বিলি করা হয়েছে। কবে তা অধিবেশনে পেশ করা হবে, আজ, মঙ্গলবার বিধানসভার কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সেই বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।

উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের পদটি এখন খালি। বিল পাশ হলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় হবেন তার চেয়ারম্যান। ভাইস চেয়ারম্যান (শিক্ষা)-এর পদে আসবেন কোনও শিক্ষাবিদ বা প্রশাসক। অন্তত ১০ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে তাঁর। তিন সদস্যের সার্চ কমিটির সুপারিশ মেনে ভাইস চেয়ারম্যান (শিক্ষা) নিয়োগ করবে রাজ্য সরকার। সংসদের দায়িত্ব সম্পর্কে বিলে বলা হয়েছে, সংসদ এক দিকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ছাত্র ভর্তির জন্য সাধারণ প্রবেশিকা পরীক্ষা নেবে। আবার বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজের মূল্যায়ন করে তাদের র্যাঙ্কও ঠিক করবে।

আদতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা দফতর এবং উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে ইউজিসি-র সমন্বয় গড়ে তোলার জন্য ওই সংসদ তৈরি হয়েছিল। এখন তাকে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বশাসিত সংস্থার ছাত্র ভর্তির পরীক্ষা নেওয়া থেকে সেগুলির উপরে নজরদারির কাজ করিয়ে নিতে চাওয়ায় সরকারের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। বিশেষত, সংসদের মাথায় যখন শিক্ষামন্ত্রী নিজে, তখন সংস্থার কাজেও দলীয় রাজনীতির প্রভাব পড়বে বলে প্রবীণ শিক্ষকদের অনেকেরই আশঙ্কা।

প্রাক্তন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সুদর্শনবাবুর কথায়, “এটা শিক্ষায় রাজনীতিকরণের উদ্যোগ তো বটেই। এই ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বশাসনকেও বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা এসইউসি-র বিধায়ক তরুণকান্তি নস্কর জানান, ওই বিলের কথা তিনিও শুনেছেন। “মূল আলোচনা বিধানসভাতেই করব। তবে আমরা এ ভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপের বিরোধী। এ তো দেখছি, উচ্চশিক্ষা সংসদকে উচ্চশিক্ষা দফতরের অংশ করে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে,” বললেন তরুণবাবু।

তৃণমূলের বিরুদ্ধে শিক্ষায় রাজনীতিকরণের যে-অভিযোগ উঠছে, এই বিল কি সেটাকেই আরও একটু পাকাপোক্ত করল না?

শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু অবশ্য মোটেই তেমনটা মনে করছেন না। তিনি বলেন, “ওই বিল নিয়ে কোনও কথা বলব না। তবে রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান প্রকল্প অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা সংসদকে আরও বেশি সক্রিয় করে তোলার প্রয়োজন রয়েছে।”

university grant commission higher education committee education minister partho chattopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy