Advertisement
E-Paper

উপাচার্যদের মুখে কুলুপ এঁটে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বুধবার প্রথম মুখোমুখি হলেন উপাচার্যদের। আর প্রথম বৈঠকেই তিনি তাঁদের পরিষ্কার বলে দিলেন, সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলা যাবে না। গত ২৮ মে শিক্ষা দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে এ দিন রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন পার্থবাবু।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৪ ০২:৫১

শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বুধবার প্রথম মুখোমুখি হলেন উপাচার্যদের। আর প্রথম বৈঠকেই তিনি তাঁদের পরিষ্কার বলে দিলেন, সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলা যাবে না।

গত ২৮ মে শিক্ষা দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে এ দিন রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন পার্থবাবু। প্রকাশ্যে সকলেই একে বলছেন সৌজন্য সাক্ষাৎ। তবে কার্যত উপাচার্যদের আচরণবিধি সম্পর্কে ইঙ্গিত দেওয়াই এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে শিক্ষা-প্রশাসন সূত্রের খবর।

প্রসঙ্গ ছিল, কলেজে অনলাইনে ছাত্র ভর্তি। সদ্য প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ২৭ মে সাংবাদিক বৈঠকে জানান, গোটা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে বিশ্ববিদ্যালয়-ভিত্তিক কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে সব কলেজে ছাত্র ভর্তি হবে। ২৮ মে শিক্ষা দফতরের দায়িত্ব নেন পার্থবাবু। পরে তিনি জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন ব্যবস্থা তাঁরা কখনওই চান না। অনলাইন হবে, তবে কলেজ স্তরে। যে-সব কলেজে পরিকাঠামো রয়েছে, তারা অনলাইনে ছাত্র ভর্তি করবে। আর যাদের পরিকাঠামো নেই, তারা ভর্তি করবে সাবেক প্রথায়। নতুন শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন চালু করার পরিকাঠামো বিশ্ববিদ্যালয়গুলিরও নেই। তারা একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ওই কাজ করতে চাইছিল, রাজ্য সরকার যেটা চাইছে না।

কিন্তু বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলিতে গত বছর অনার্সে কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ছাত্র ভর্তি হয়েছিল। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও এ বার তা চালু করার প্রস্তুতি চালিয়েছিল। গত ২৩ মে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস সাংবাদিক বৈঠকে জানান, কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ভর্তি চালু করতে তাঁরা তৈরি। কী ভাবে সেটা হবে, তা-ও ব্যাখ্যা করেন তিনি। যার অর্থ, পরিকাঠামো তৈরি নয় বলে শিক্ষামন্ত্রী যা বলছেন, তার সত্যতা নিয়েই সংশয়ের সুযোগ আছে। শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করছেন, এই অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি যাতে আগামী দিনে তৈরি না-হয়, সেই জন্যই পার্থবাবু উপাচার্যদের সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে নিষেধ করেছেন। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, মন্ত্রী এ দিন উপাচার্যদের জানান, সংবাদমাধ্যমে মুখ না-খোলাই ভাল। উপাচার্যেরা রাজনীতিবিদ নন। তাই কতখানি বলতে হবে, তা ঠিক বুঝতে পারবেন না। উল্টে সংবাদমাধ্যম অযথা বিতর্ক তৈরি করবে। সুরঞ্জনবাবু অবশ্য এ ব্যাপারে মন্তব্য করেননি।

মন্ত্রীর সামনে কিছু না-বললেও তাঁর এই পরামর্শে উপাচার্যদের অনেকেই অসন্তুষ্ট। বুধবার রাতে এক উপাচার্য বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসিত সংস্থা। তাই মন্ত্রী এই ধরনের পরামর্শ না-দিলেই পারতেন। নানা প্রয়োজনে সংবাদমাধ্যমকে দরকার হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক না-রাখলে বিশ্ববিদ্যালয়েরও অসুবিধা হবে।”

উপাচার্যদের এমন পরামর্শ কেন দিতে গেলেন পার্থবাবু?

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমি খেয়াল করেছি, উপাচার্যেরা এক-এক জন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এক-এক ভাবে কথা বলছেন। সরকারের তো একটা নির্দিষ্ট নীতি আছে! প্রতিষ্ঠানেরও তো সম্মান আছে! আমি ওঁদের বলেছি, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গেলে প্রস্তুত হয়ে কথা বলবেন।”

সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার দায়ে এর আগে মহাকরণে স্বরাষ্ট্র দফতরের এক অফিসারকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অনেক সময় আমলাদের ব্যাপারে এই ধরনের নীতি নিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সরকার এখন উপাচার্যদেরও ‘সেন্সর’ করার চেষ্টা করছে দেখে প্রবীণ শিক্ষকদের অনেকেই বিস্মিত।

অনলাইনে ভর্তি নিয়ে সরকারের নীতি এবং তার কারণ এ দিনের বৈঠকে ব্যাখ্যা করেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত এক উপাচার্য পরে বলেন, “মন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের ৭৫টি কলেজে ইন্টারনেট সংযোগ আছে, ৫১৯টিতে নেই। এ বছর তাই সর্বত্র অনলাইনে ছাত্র ভর্তি হচ্ছে না।” এই ৫১৯টি কলেজে ছ’মাসের মধ্যে নিজস্ব ওয়েবসাইট চালু করতে হবে বলে বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়-ভিত্তিক প্রক্রিয়া চালু না-হলে কলেজে কলেজে পছন্দমতো ছাত্র ভর্তি করতে ছাত্র সংসদের জবরদস্তি চলতেই থাকবে বলে শিক্ষামহলের একাংশের আশঙ্কা। তার কিছু নমুনাও মিলেছে ইতিমধ্যে। টোল-ফ্রি টেলিফোন নম্বর এবং এসএমএসের মাধ্যমে শিক্ষা দফতরে গত মঙ্গলবার যে-অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তাতে প্রথম দিনেই জমা পড়েছে ১২০৩টি অভিযোগ। সব ক’টিরই নিষ্পত্তি করা গিয়েছে, দাবি মন্ত্রীর। কিন্তু এক দিনেই এত অভিযোগ এল কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। সদুত্তর মেলেনি মন্ত্রীর কাছে।

ভর্তি নিয়ে কলেজগুলিতে সমস্যা হচ্ছে কি না, উপাচার্যদের অবশ্য তা-ও দেখতে বলেছেন মন্ত্রী। ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, অভিভাবকদের সঙ্গেও তাঁদের সমন্বয় গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

education minister partha chattapadhyay meeting with vice chancellor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy