Advertisement
E-Paper

এ বার ইউরো, জালে আরও এক লগ্নি সংস্থার কর্তা

সারদা কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পরে-পরেই অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। অর্থলগ্নি সংস্থার নামে বাজার থেকে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহের খবর পেয়েছিল পুলিশ। তবু তদন্তকারীদের নজর এড়িয়ে এত দিন বহাল তবিয়তেই ছিলেন ‘ইউরো গ্রুপ অফ কোম্পানিজ’-এর অন্যতম কর্ণধার বিশ্বপ্রিয় গিরি। শনিবার তাঁকে গ্রেফতার করেছে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৭
ধৃত ইউরো কর্তা বিশ্বপ্রিয় গিরি।  —নিজস্ব চিত্র

ধৃত ইউরো কর্তা বিশ্বপ্রিয় গিরি। —নিজস্ব চিত্র

সারদা কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পরে-পরেই অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। অর্থলগ্নি সংস্থার নামে বাজার থেকে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহের খবর পেয়েছিল পুলিশ। তবু তদন্তকারীদের নজর এড়িয়ে এত দিন বহাল তবিয়তেই ছিলেন ‘ইউরো গ্রুপ অফ কোম্পানিজ’-এর অন্যতম কর্ণধার বিশ্বপ্রিয় গিরি। শনিবার তাঁকে গ্রেফতার করেছে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ।

শুক্রবার রাতে সেক্টর ফাইভের একটি অফিসের সামনে থেকে ধরা পড়েন বিশ্বপ্রিয়। ইতিমধ্যেই ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় তাঁর নামে ৮টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। যার মধ্যে রেবা মজুমদার নামে এক মহিলার দায়ের করা ১০ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগও রয়েছে। দমদমের বাসিন্দা রেবাদেবী ইউরোর এজেন্ট। শনিবার বিশ্বপ্রিয়কে আদালতে তোলা হলে তাঁকে ১১ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

তবে এ দিন আদালতে দাঁড়িয়ে ১৫০০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহের কথা মানতে চাননি বিশ্বপ্রিয়। তাঁর দাবি, আমানতকারীদের ছ’কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ইউরোর। ২০২৪ সালে সেই মেয়াদ পূর্ণ হবে। এখনই সেই টাকা ফেরত দিতে তাঁরা প্রস্তুত। আমানতকারীদের সঙ্গে যে কোনও মূল্যে সমঝোতায় তিনি রাজি আছেন বলেও বিশ্বপ্রিয় জানান। তবে অভিযুক্তের মুখে স্রেফ ছ’কোটি টাকার কথা শুনে তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেন বিধাননগরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অপূর্বকুমার ঘোষ। তিনি বলেন, বিশ্বপ্রিয়রা বাজার থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা তুলেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। ইউরো কর্তা তা অস্বীকার করেন। ফলে মোট কত টাকা তোলা হয়েছিল, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতেই বিশ্বপ্রিয়কে জেরার দরকার বলে আদালতে জানায় পুলিশ।

যদিও প্রশ্ন উঠেছে, অভিযোগ পেয়েও এত দিন পুলিশ কেন হাত গুটিয়ে বসে ছিল। তদন্তকারীদের অবশ্য দাবি, বিশ্বপ্রিয়কে খোঁজা হচ্ছিল বছরখানেক আগে থেকেই। কিন্তু তিনি খুব একটা মোবাইল ব্যবহার করছিলেন না। ফলে গতিবিধি আঁচ করেও তাঁকে ধরা যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত জানা যায়, ইস্টার্ন বাইপাসের ধারের একটি আবাসনে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন ইউরো কর্তা। ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানার আইসি পিনাকী রায়ের নেতৃত্বে একটি দল তাঁর উপরে নজর রাখতে শুরু করে। এ দিন ইউরোর একটি জমি কেনাবেচার ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে সেক্টর ফাইভে গিয়েছিলেন বিশ্বপ্রিয়। তখনই তিনি ধরা পড়েন।

পুলিশ জানায়, ৩৬ বছরের বিশ্বপ্রিয় আদতে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির বাসিন্দা। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। ২০০৬ সাল থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল-সহ বিভিন্ন সামগ্রী বাজারে নিয়ে আসে ইউরো। অনেকটা সারদার ধাঁচেই ক্রমশ অর্থলগ্নি সংস্থা ও জমির ব্যবসা শুরু করে তারা। কলকাতা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা, বিশেষত মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে রমরমিয়ে ব্যবসা চলছিল ইউরোর। রাজ্যের বাইরে বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লিতে ডালপালা মেলেছিল তারা।

তবে সংস্থার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ জমা হচ্ছিল। ক্রেতা সুরক্ষা দফতর থেকেও অভিযোগ এসেছিল। আদালতের নির্দেশে এক বার সেক্টর ফাইভে ইউরোর একটি অফিস ‘সিল’ করেও দেওয়া হয়েছিল। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে ফের অফিস চালু করে সংস্থাটি। তদন্তকারীদের সন্দেহ, ইউরোর বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ বহু কোটি টাকা। বেশির ভাগ সম্পত্তিই কেনা হয়েছিল ইউরোর নামে। বিশ্বপ্রিয় ওই সংস্থার ডিরেক্টর হওয়ায় তাঁকেই প্রথমে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁকে জেরা করে ইউরো-র গোটা কর্মকাণ্ডের হদিস মিলবে বলে তদন্তকারীরা আশাবাদী।

bishyapriya giri sardha scam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy