Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কংগ্রেসকে চাঙ্গা করতে অধীরের অস্ত্র পঞ্চ-বাণ

তৃণমূলের বিপুল সাফল্য আর বিজেপির উত্থানের মধ্যেও ৪টি লোকসভা আসন বাঁচিয়ে রাজ্যে মানরক্ষা হলেও দেশের বাকি অংশে কংগ্রেসের প্রায় প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার দশা। বিধানসভা ভোটের আগে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে এখন থেকেই পাড়ায় পাড়ায় মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইছে কংগ্রেস।

সঞ্জয় সিংহ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০৩:২৮
Share: Save:

তৃণমূলের বিপুল সাফল্য আর বিজেপির উত্থানের মধ্যেও ৪টি লোকসভা আসন বাঁচিয়ে রাজ্যে মানরক্ষা হলেও দেশের বাকি অংশে কংগ্রেসের প্রায় প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার দশা। বিধানসভা ভোটের আগে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে এখন থেকেই পাড়ায় পাড়ায় মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইছে কংগ্রেস। আর এই লক্ষ্যে পৌঁছতে দলের নেতা-কর্মীদের জন্য পাঁচ দফা নির্দেশিকার দাওয়াই দিচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

অধীরের প্রথম দাওয়াই, এলাকাভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে আন্দোলন করা। তবে তার মানেই সব সময়ে সংঘাত নয়। মানুষের সমস্যা নিয়ে বিডিও বা পুর-চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানানো, ছোট ছোট পথসভা করা। জনমানসে এই ধারণা তৈরি করা যে, দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা হলে কংগ্রেসকে পাশে পাওয়া যাবে।

বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যে পুরভোট রয়েছে। আগামী বছর কলকাতায়। তারও আগে রয়েছে অন্য ১৭টি পুরসভার ভোট। রয়েছে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের উপনির্বাচনও। অধীরের দ্বিতীয় দাওয়াই, প্রার্থী ঠিক হবে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের আলোচনার ভিত্তিতে। পঞ্চায়েতে সিদ্ধান্ত নেবে দলের অঞ্চল কমিটি। পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে প্রার্থী বাছবে দলের ব্লক কমিটি, জেলা পরিষদে জেলা কমিটি। আর পুরসভার ক্ষেত্রে দলের শহর কমিটি। ফলে, স্থানীয় ভাবে দলের প্রার্থীদের সঙ্গে এলাকার বাসিন্দাদের একটা সম্পর্ক থাকবে। অধীরের কথায়, “বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সম্পর্ক তৈরি হওয়াটা জরুরি।” কংগ্রেসে উপর থেকে প্রার্থী চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রায়শই। সেই ব্যবস্থা ভাঙতে চাইছেন প্রদেশ সভাপতি।

অধীরের তৃতীয় নির্দেশিকা, শুধু বিধানসভা বা পুরভোট নয়, দলকে রাজনৈতিক ভাবে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলতে স্কুল-কলেজের পরিচালন সমিতি থেকে শুরু করে সমবায় সংগঠনের ভোটেও অংশ নিতে হবে। গড়ে তুলতে হবে জনসম্পর্ক। তবে অধীর মনে করেন, এ বারের লোকসভা ভোট বা তার আগে পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলের সন্ত্রাসের মুখে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা কার্যত গুটিয়ে গিয়েছেন। এই অবস্থা কাটাতে বুথ স্তর থেকে কমিটি গঠন করা, অধীরের চার নম্বর দাওয়াই। দলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “বুথ কমিটির প্রতিটি কর্মীকে মনে রাখতে হবে, প্রতিরোধ তাঁদেরই গড়তে হবে।” অধীরের পঞ্চম নির্দেশিকা, আগে দু’টো আঞ্চলিক দল সিপিএম এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার করা হতো। এখন রাজ্যেও বিজেপির মতো জাতীয় দলের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার করতে হবে। প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের কাজ ও ব্যর্থতা নিয়ে সজাগ থাকতে হবে।

লোকসভা ভোটের ফলে দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে হতাশা এসেছে তা কাটানোর লক্ষ্যেই পাঁচ দাওয়াই দিয়েছেন অধীর। তাঁর বক্তব্য, “কংগ্রেস কর্মীদের এই হতাশ মানসিকতা কাটাতে স্থানীয় স্তর থেকে সংগঠন গড়ার প্রক্রিয়া এখন থেকেই শুরু করা দরকার।” প্রদেশ সভাপতির ব্যাখ্যা, স্থানীয় সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করলে এলাকার মানুষ আবার আকৃষ্ট হতে পারেন। কংগ্রেস কর্মীরা যদি নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির উপরে আস্থা রাখেন, তবে মানুষও কংগ্রেসের উপরে আশা-ভরসা রাখবেন।

দলীয় নেতৃত্বের বড় অংশই মনে করেন, কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতা অধীরের খাসতালুক মুর্শিদাবাদ ও গনি পরিবারের ছত্রছায়ায় থাকা মালদহের বাইরে ছড়িয়ে দেওয়াটা জরুরি।

এখন এই অধীর-টনিকে গোটা রাজ্যে কংগ্রেস কতটা চাঙ্গা হয়, এখন সেটাই প্রশ্ন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sanjay sinha adhir chowdhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE