Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কুণাল থেকে জমি, সবেতেই জবাব: মাফ করুন মাফ করুন

জমি অধিগ্রহণ আইন নিয়ে সবে প্রশ্নটা শুরু করেছিলেন এক সাংবাদিক। শেষ হওয়ার আগেই হাত জোড় করে তাঁর বিগলিত জবাব, “মাফ করুন, আজ এ নিয়ে কিছু বলব না।” শিল্পের দাবি মতো জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন কি তুলে দেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য? তিনি ফের বললেন, “মাফ করুন, এটা নিয়ে কিছু বলব না।” রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে প্রতিদিনই খারাপ হচ্ছে, শ্রমিকদের হাতে মারা যাচ্ছেন শিল্প কর্তা? এ বারও তাঁর উত্তর, “মাফ করবেন, আজ এ সবের দিন নয়।”

দিল্লির বাণিজ্য মেলায়। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।

দিল্লির বাণিজ্য মেলায়। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৬
Share: Save:

জমি অধিগ্রহণ আইন নিয়ে সবে প্রশ্নটা শুরু করেছিলেন এক সাংবাদিক। শেষ হওয়ার আগেই হাত জোড় করে তাঁর বিগলিত জবাব, “মাফ করুন, আজ এ নিয়ে কিছু বলব না।”

শিল্পের দাবি মতো জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন কি তুলে দেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য? তিনি ফের বললেন, “মাফ করুন, এটা নিয়ে কিছু বলব না।”

রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে প্রতিদিনই খারাপ হচ্ছে, শ্রমিকদের হাতে মারা যাচ্ছেন শিল্প কর্তা? এ বারও তাঁর উত্তর, “মাফ করবেন, আজ এ সবের দিন নয়।”

সারদা কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হওয়া কুণাল ঘোষ যে আজ জেলে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলেন? জবাবে তিনি অনড়, “মাফ করুন, এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।”

তিনি একাধারে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী এবং শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র। শুক্রবার দিল্লি এসেছিলেন ৩৪তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় পশ্চিমবঙ্গের প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করতে। কিন্তু শিল্প থেকে আর্থিক কেলেঙ্কারি, সব প্রশ্নই এড়িয়ে তাঁর একমাত্র জবাব: মাফ করুন!

শিল্প মহল বলছে, মাফ চেয়ে জবাব এড়ানো ছাড়া আর কী-ই বা করতে পারতেন অমিত! তিনি যে সরকারের মন্ত্রী, সেটা রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে প্রায় সাড়ে তিন বছর। এই সাড়ে তিন বছরে রাজ্যের শিল্পের গ্রাফ ক্রমশই নিম্নমুখী হয়েছে! বিরোধী আসনে বসে যে জমি নীতি নিয়েছিল তৃণমূল, শাসকের গদিতে বসেও তাকেই আঁকড়ে থেকেছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে শাসক দলের সিন্ডিকেট রাজ আর তোলাবাজির দাপট।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ না-করার নীতিতে অনড় থাকায় নতুন শিল্প তো আসেইনি, উল্টে তৃণমূলের ছোট-বড়-মাঝারি নেতাদের অত্যাচারে রাজ্য ছাড়া হয়েছে একের পর এক শিল্প। হলদিয়া থেকে এবিজি গোষ্ঠীর পাততাড়ি গোটানো থেকে যার সূত্রপাত। এর পর একে এক বন্ধ হয়েছে হিন্দমোটর, শালিমার, অসংখ্য চটকল... তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে প্রতিদিন।

এখানেই শেষ নয়, সিন্ডিকেটের চক্রে নাভিশ্বাস উঠেছে একাধিক তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের। জঙ্গি শ্রমিক আন্দোলনে মারা গিয়েছেন নর্থব্রুক চটকলের সিইও এইচ কে মহেশ্বরী। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে লগ্নির গন্তব্য থেকে এ রাজ্যের নাম মুছে ফেলেছে বহু সংস্থা। একাধিক ‘বেঙ্গল লিডস’ বা শিল্প সম্মেলন করেও কোনও লাভ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সিঙ্গাপুর সফরেও আখেরে কিছুই হবে

না বলে মত শিল্পপতিদের অনেকের।

এহেন পরিস্থিতিতে বাণিজ্যমেলায় একের পর এক অস্বস্তিকর বাউন্সারের মুখে দাঁড়িয়ে আর কী-ই বা করতে পারতেন অর্থমন্ত্রী। এক শিল্প কর্তার কথায়, “বুক চিতিয়ে খেলার দম ওঁর নেই! তাই ‘ডাক’ করেই মাথা বাঁচিয়েছেন!” মাঝে মধ্যে নমো নমো করে দু’এক বার যা ব্যাট বাড়িয়েছেন, তাতে হাসির খোরাকই মিলেছে। যেমন, ‘তৃণমূল সরকারের আমলে প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে পশ্চিমবঙ্গে। এর মধ্যে প্রায় আশি হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হওয়া শুরু হয়েছে’। বা ‘রাজারহাটে টিসিএস-র নতুন প্রকল্পে যে সম্প্রসারণ চলছে তাতে আরও কুড়ি হাজার কর্মসংস্থান হবে’। শিল্প মহল বলছে, এত টাকা লগ্নি হলে তো রাজ্যের সামগ্রিক ছবিতে একটা ছাপ পড়ার কথা। কিন্তু তেমনটা তো দূরবীন দিয়েও দেখা যায় না!

সাংবাদিকদের সব প্রশ্ন এড়িয়ে এ দিন মিনিট পনেরো পশ্চিমবঙ্গের প্যাভেলিয়নে ঘুরলেন অর্থমন্ত্রী। সাজিয়ে রাখা দুর্গা প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে প্রণাম করলেন ভক্তিভরে। যা দেখে রাজ্যেরই এক অফিসারের টিপ্পনি, “পশ্চিমবঙ্গের এখন যা দশা, তাতে শুধু মা দুর্গাই ভরসা!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE