Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কোর্ট-কর্মীদের বেতন নিয়েও ধাক্কা রাজ্যকে

বীরভূমের পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষ হত্যার তদন্ত থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কালের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় বারবার কলকাতা হাইকোর্টের তোপের মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। সোমবার উচ্চ আদালতে আবার ধাক্কা খেল তারা। এ বারের তোপ অবশ্য পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা বা অতি-সক্রিয়তার জন্য নয়। এ দিনের আইনি ধাক্কাটা এল রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে কর্মী নিয়োগ এবং বেতন-কাঠামোর ব্যাপারে সরকারের নিজেদের তৈরি একটি নিয়মবিধিকে কেন্দ্র করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৬
Share: Save:

বীরভূমের পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষ হত্যার তদন্ত থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কালের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় বারবার কলকাতা হাইকোর্টের তোপের মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। সোমবার উচ্চ আদালতে আবার ধাক্কা খেল তারা।

এ বারের তোপ অবশ্য পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা বা অতি-সক্রিয়তার জন্য নয়। এ দিনের আইনি ধাক্কাটা এল রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে কর্মী নিয়োগ এবং বেতন-কাঠামোর ব্যাপারে সরকারের নিজেদের তৈরি একটি নিয়মবিধিকে কেন্দ্র করে।

পুরনো বেতন-কাঠামো এবং শেট্টি কমিশনের সুপারিশ অগ্রাহ্য করে রাজ্য সরকার নিজেদের তৈরি নিয়ম অনুযায়ী আদালত-কর্মীদের বেতন দিয়ে আসছে বছর আড়াই ধরে। বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন নির্দেশ দিয়েছেন, আদালতে নিয়োগ বা বেতনের ক্ষেত্রে সরকারের ওই নিয়ম খাটবে না। কলকাতা হাইকোর্ট-সহ রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে কর্মীদের নিয়োগ নীতি ও বেতন-কাঠামো ঠিক করে দেবে কলকাতা হাইকোর্ট প্রশাসন। আর সেই নিয়োগ নীতি ও বেতন-কাঠামো ঠিক না-হওয়া পর্যন্ত ১৯৪১ সালের ‘বেঙ্গল সিভিল কোর্ট রুলস’ অনুযায়ী ওই সব কর্মীকে সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল কোর্ট এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্য, রাজ্য নিজেদের নিয়ম চালু করতে গিয়ে আগের বিধি অগ্রাহ্য করছিল। তাতে ছাঁটাই হয়ে গিয়েছিল কর্মীদের বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা। এ দিন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, পুরনো নিয়ম মেনে ২০১৩ সাল থেকে সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। এর ফলে হাইকোর্ট এবং রাজ্যের বিভিন্ন নিম্ন আদালতের কর্মীরা বাড়তি সুযোগ ও আর্থিক সুবিধা পাবেন বলে জানায় এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন।

দেশের সব হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালতে কর্মীদের নিয়োগ নীতি ও বেতন-কাঠামোয় সামঞ্জস্য আনার জন্য অভিন্ন নিয়ম চালু করতে ১৯৯৬ সালে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শেট্টির নেতৃত্বে একটি কমিশন গড়া হয়। সেই কমিশন ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করে। তারও বছর ছয়েক পরে, ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, সারা দেশেই শেট্টি কমিশনের সুপারিশ বলবৎ করতে হবে। কর্নাটক, মহারাষ্ট্র-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকার শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে নেয়।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সেই সুপারিশ কার্যকর হয়নি। তার বদলে ২০১৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এবং বাংলার সব নিম্ন আদালতে কর্মীদের নিয়োগ ও বেতন-কাঠামোর ব্যাপারে নিজস্ব একটি নিয়ম তৈরি করে রাজ্য সরকার। সেই নিয়ম অনুসারেই এখনও ওই কর্মীদের বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

শেট্টি কমিশনের সুপারিশ কার্যকর না-হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে ওয়েস্ট বেঙ্গল কোর্ট এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন। ওই সংগঠনের আইনজীবী পার্থসারথি ভট্টাচার্য জানান, সেই মামলায় বিচারপতি হরিশ টন্ডন গত ১১ ডিসেম্বর নির্দেশ দেন, হাইকোর্ট এবং রাজ্যের বিভিন্ন নিম্ন আদালতের কর্মীদের নিয়োগ নীতি ও বেতন-কাঠামোর ব্যাপারে শেট্টি কমিশনের সুপারিশ তিন মাসের মধ্যে রূপায়ণ করতে হবে। ইতিমধ্যে মামলাটি পাঠানো হয় হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদালতে। এ দিন সেই মামলারই শুনানি ছিল।

বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, রাজ্য সরকারের তৈরি নিয়ম হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালতগুলির কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। ওই নিয়ম অনুযায়ী ২০১৩ সাল থেকে আদালতের কর্মীদের একাংশের বেতন থেকে কিছু টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছিল। সেই টাকা রাজ্য সরকারকে ফেরত দিতে হবে বলেও এ দিন নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

court employee salary highcourt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE