Advertisement
E-Paper

খেটে টাকা পাচ্ছেন কি বন্দিরা, রিপোর্ট চায় কোর্ট

অপরাধমূলক নানা ঘটনায় দণ্ডিত হয়ে জেলে থাকাকালীন বন্দিদের বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়। কিন্তু সশ্রম দণ্ডপ্রাপ্ত সেই সব বন্দিকে নির্দিষ্ট হারে পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছে কি? প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৫

অপরাধমূলক নানা ঘটনায় দণ্ডিত হয়ে জেলে থাকাকালীন বন্দিদের বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়। কিন্তু সশ্রম দণ্ডপ্রাপ্ত সেই সব বন্দিকে নির্দিষ্ট হারে পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছে কি? প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট।

শুধু প্রশ্ন তোলাই নয়। বিচারপতি অসীম রায় বুধবার রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রেসিডেন্সি-সহ পশ্চিমবঙ্গের ছ’টি সেন্ট্রাল জেল বা কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বন্দিরা তাঁদের শ্রমের বিনিময়ে কী হারে কত টাকা পান, আদৌ পান কি না, অবিলম্বে সেই বিষয়ে রিপোর্ট দিতে হবে হাইকোর্টে। ওই ছ’টি জেলে ক’জন বন্দি আছেন, রিপোর্টে তা-ও উল্লেখ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একটি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশের পরেও এক আসামিকে জেল থেকে প্রতি মাসে নিম্ন আদালতে টানাহেঁচড়া করায় উচ্চ আদালতের কোপে পড়েন প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার। শুধু হয়রানি নয়, জেলে পরিশ্রম করা সত্ত্বেও সেই কয়েদিকে টাকা দেওয়া হচ্ছে না জেনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি রায়। তিনি ওই জেলের সুপারকে আদালতে হাজির হয়ে এর ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে ডিআইজি (কারা) সুদীপ্ত চক্রবর্তী আদালতে জানান, ওই সুপারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রেসিডেন্সি জেলের ভার তাঁকেই (ডিআইজি-কে) সামলাতে হচ্ছে। বিচারপতি তখন ডিআইজি-কে ওই আসামির বিষয়টি হলফনামা দিয়ে জানানোর নির্দেশ দেন। সেই মামলার জেরেই ছ’টি জেলের বন্দি-সংখ্যা এবং তাঁরা টাকা পাচ্ছেন কি না, জানাতে বলা হয়েছে।

খুনের মামলাটি হাওড়ার জগাছা থানা এলাকার। সেই ঘটনায় অরূপ রায় ও রাজীব দত্ত নামে দুই যুবককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেয় হাওড়া আদালত। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অরূপ-রাজীব হাইকোর্টে আপিল করেন। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি না-থাকায় কয়েক দফা শুনানির পরে তাঁদের আইনজীবীরা আর মামলা লড়েননি। ইতিমধ্যে মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি রায়ের আদালতে আসে। কিন্তু দুই বন্দির পক্ষে কোনও আইনজীবী দাঁড়াননি। বিচারপতি রায় তখন অরূপ-রাজীবকে তাঁর আদালতে আনার নির্দেশ দেন। ২২ জানুয়ারি জেল থেকে তাঁদের হাইকোর্টে হাজির করানো হলে আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল ও জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠিয়ে ওই দুই বন্দির হয়ে মামলা লড়তে বলেন বিচারপতি।

জেলে কাজ করে টাকা পান কি না, অরূপ-রাজীবের কাছে তা জানতে চান বিচারপতি। অরূপ জানান, কাজ করলে তিনি প্রতিদিন ২২ টাকা পান। রাজীব জানান, তিনি টাকা পান না।

বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে রাজীব জানান, ২০০৭ সালে নিম্ন আদালত তাঁকে সাজা দেওয়ার পরে হাইকোর্টে আবেদন করে ২০০৯ সালে তিনি জামিন পান। জামিনের বিরোধিতা করে সরকার পক্ষ পাল্টা মামলা করে। সেই মামলায় ২০১০-এ তাঁর জামিন খারিজ হয়ে যায়। তার পর থেকে তিনি প্রেসিডেন্সি জেলেই রয়েছেন। কিন্তু মাসে এক বার তাঁকে হাওড়া আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কাজ করিয়েও পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কোনও মামলা আছে কি না, জানতে চান বিচারপতি। রাজীব জানিয়ে দেন, তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কোনও মামলা নেই।

দণ্ডিত বন্দির এই হেনস্থায় বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি। তাঁর বুধবারের নির্দেশের পরে বিষয়টি আর শুধু রাজীবের মামলায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। বিচারপতির নির্দেশ, প্রেসিডেন্সি, আলিপুর, দমদম, জলপাইগুড়ি, বহরমপুর ও মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে ক’জন বন্দি আছেন এবং তাঁদের মধ্যে ক’জন জেলে পরিশ্রম করে কত টাকা পান, অবিলম্বে হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ করে তা জানাতে হবে প্রশাসনকে।

কারা দফতর সূত্রের খবর, সশ্রম দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের কর্মদক্ষতা অনুযায়ী তিনটি হারে পারিশ্রমিক দেওয়া কথা।

১) দক্ষ শ্রমিক হলে রোজ ৩৫ টাকা দিতে হবে।

২) অর্ধদক্ষ শ্রমিক ৩০ টাকা।

৩) অদক্ষ শ্রমিক ২৬ টাকা।

আইনজীবী শিবিরের বক্তব্য, এক বন্দির টাকা না-পাওয়ার বিষয়টি উচ্চ আদালতে ওঠায় সারা রাজ্যের সশ্রম দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাই উপকৃত হবেন।

inmate income wages
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy