চক্ষে আমার তৃষ্ণা/ওগো, তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে...
মোবাইলের কলার টিউনে পরিচিত গানের দু’কলি বাজতেই নেতার বাজখাঁই গলা শোনা গেল, ‘‘বলুন।’’
মজা করে জানতে চাইলাম, এই গরমে কীসের তৃষ্ণা?
কথা থামিয়ে দিয়ে মধ্য-পঞ্চাশের নেতার উত্তর, “কলার টিউনে মেয়ে গানটা তুলে দিয়েছে।” তার পর অনেকটা খবর দেওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, “আজ গরমটা কম। মাঝেমধ্যে হাওয়া দিচ্ছে। শুনলাম, বৃহস্পতিবার বৃষ্টিও হবে। হলে একটু তৃষ্ণা মেটে। রোজ ভোর থেকে প্রার্থীকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়া...। তার পরে আবার রাতে চক্কর কেটে, জরুরি কাজকর্ম সেরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১২টা। গরমের ধাক্কায় প্রতিদিনের শিডিউলটাই বদলে গিয়েছে। আর পারা যাচ্ছে না!”
সোমবার কলকাতার তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। কমেছে অস্বস্তিও। হাওয়া অফিস বলছে, বুধবার পর্যন্ত কলকাতার তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে ঘোরাফেরা করবে। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে তাপপ্রবাহ চলতে পারে। তবে তার পরেই একটু আশার আলো দেখা যেতে পারে। সেটা কী?
“বৃহস্পতিবার ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। সেটা হলে তাপমাত্রাও কিছুটা কমবে,” আশ্বাস দিলেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ।
আবহাওয়া অধিকর্তার বার্তা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল টালা থেকে টালিগঞ্জ। ভোটের প্রচারে কেউ তখন রাস্তায়, কেউ দলীয় কার্যালয়ে, কেউ বা ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে সবে বাড়ি ঢুকেছেন। একটু হাওয়া, গরম একটু কম, বৃষ্টির সম্ভাবনা সোমবার দুপুরের পর থেকেই এমন কয়েকটি শব্দের হাত ধরে প্রচারের সময়সূচি বদলের পরিকল্পনাও শুরু হয়ে গিয়েছে যুযুধান শিবিরগুলিতে। এক প্রার্থীর কথায়, “যদি এমন হয়, তা হলে প্রচারের সময় বেশি পাওয়া যাবে। সাতসকালে বেরোনোর কষ্ট থেকেও মুক্তি পাব।”
কিন্তু সে তো ভবিষ্যতের কথা। গত কয়েক দিনের মতো সোমবারেও রাজনৈতিক দলগুলির প্রচার শুরু হয় সকাল ৮টায়। বেলা ১১টার মধ্যে দিনের প্রথম দফার প্রচার শেষ। বিকেলের প্রচার শুরু হয়েছে সূর্য পাটে বসার পরে। লাল-সবুজ-গেরুয়া পতাকার রং যা-ই হোক, ভোটের ময়দানে প্রার্থীদের এই প্রচার-ধারায় কোনও অমিল নেই। যা দেখে অনেকেরই মন্তব্য, রোদ চড়তেই মিইয়ে যাচ্ছে ভোটযুদ্ধের উত্তাপ!
সবিস্তার...
গরমের ব্যাটে এ বার মার্চেই স্লগ ওভারের মেজাজ। রবিবার কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল প্রায় ৩৯.৯ ডিগ্রিতে। শুরু হয়ে গিয়েছিল তাপপ্রবাহ। এ দিন তা কিছুটা কমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রি। মাঝেমধ্যে হাওয়া দিয়েছে। ফলে কিছুটা কমেছে অস্বস্তিও। তবু দুপুরের মধ্যে প্রচার সেরে বাড়ি ঢুকে পড়েছেন প্রার্থীরা। এ বার কলকাতার দুই কেন্দ্রে (উত্তর ও দক্ষিণ) বয়স্ক প্রার্থী বলতে কংগ্রেসের সোমেন মিত্র, তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সী এবং বিজেপি-র তথাগত রায়।
টানা প্রচারের ধকল অনেক দিন সইতে হবে। তাই দুপুরটা কার্যত গৃহবন্দি হয়েই কাটাচ্ছেন সুদীপবাবু। স্ত্রীর নির্দেশ, যা-ই হোক না কেন, বেলা ১টার মধ্যে বাড়ি ফিরতেই হবে। “দুপুরে দু’ঘণ্টা বিশ্রাম না-নিলে রাত পর্যন্ত কাজ করতে পারব না,” বলছেন সুদীপবাবু। নজর দিয়েছেন খাওয়াদাওয়াতেও। দুপুরে ফুটি, পেঁপে, শশার মতো ফল।
উত্তরের আর এক প্রার্থী, কংগ্রেসের ‘ছোড়দা’ সোমেন মিত্র বলছেন, “গরমের জন্য দুুপুরে প্রচার করতে পারছি না।” গরমের দাওয়াই হিসেবে সোমেনবাবুর পছন্দ ঠান্ডা জল। উত্তর কলকাতার বাম প্রার্থী রূপা বাগচী আবার সোমবার প্রচারে বেরিয়ে তৃষ্ণা মেটাতে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন ঘোলের দোকানে। দক্ষিণের কংগ্রেস প্রার্থী মালা রায়কে ভরসা জুগিয়েছে ডাবের জল-গ্লুকোজ।
দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী তথাগত রায় অবশ্য গরমকে বিশেষ আমল দিচ্ছেন না। এক সময় পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংকে। তথাগতবাবুর এক শিক্ষক তাঁকে মজা করে বলতেন, গরমের দুপুরে দু’টি প্রাণী মাঠে ঘুরে বেড়ায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আর ছাগল। “তাই রোদকে আমি ডরাই না। তবে শরীর বাঁচাতে জল খাই, টুুপি পরি,” জানালেন বিজেপি প্রার্থী।
তা হলে দুপুরের প্রচার বন্ধ কেন?
তথাগতবাবু বলছেন, “ভরদুপুরে প্রচার চালালে ভোটারদের অসুবিধা হতে পারে। তাই....।”
দক্ষিণের বাম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। ক্লাস থাকায় প্রথম থেকেই বাদ রেখেছেন দুপুরের প্রচারকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy