Advertisement
E-Paper

জৌলুস হারিয়ে সেই মন্ডার বাজার মন্দা

‘আয় রে বোঝাই হাঁড়ি হাঁড়ি, মন্ডা মিঠাই কাঁড়ি কাঁড়ি...।’ ভূতের রাজার বরে তালি বাজিয়ে মন্ডা-মিঠাই পেয়েছিল গুপি-বাঘা। তখন তার আলাদা কদর। সেই ‘হুন্ডি’-ও নেই। হারিয়েছে মন্ডার সেই স্বাদও। উত্তর কলকাতার কয়েকটি বাঁধা দোকান এবং দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমান জেলার কয়েকটি অঞ্চল ছাড়া মন্ডার দোকান মেলা ভার। উত্তরবঙ্গে কেবল জেগে আছে কোচবিহারের ছোট্ট গঞ্জ প্রেমেরডাঙার একটি দোকান।

নিলয় দাস

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৪ ০৮:৩৩
—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

‘আয় রে বোঝাই হাঁড়ি হাঁড়ি, মন্ডা মিঠাই কাঁড়ি কাঁড়ি...।’

ভূতের রাজার বরে তালি বাজিয়ে মন্ডা-মিঠাই পেয়েছিল গুপি-বাঘা। তখন তার আলাদা কদর। সেই ‘হুন্ডি’-ও নেই। হারিয়েছে মন্ডার সেই স্বাদও।

উত্তর কলকাতার কয়েকটি বাঁধা দোকান এবং দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমান জেলার কয়েকটি অঞ্চল ছাড়া মন্ডার দোকান মেলা ভার। উত্তরবঙ্গে কেবল জেগে আছে কোচবিহারের ছোট্ট গঞ্জ প্রেমেরডাঙার একটি দোকান।

কারও মতে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা গ্রামের ময়রা গোপালচন্দ্র পাল স্বপ্নে ওই মিষ্টি আবিষ্কার করেন। আবার কারও দাবি, মন্ডার আবির্ভাব হয় বাঁকুড়ায়। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “সেই ছেলেবেলায় বাবার হাত ধরে মুক্তাগাছার জমিদার বাড়িতে গিয়ে মন্ডা খেয়েছিলাম। অন্য রকমের মিষ্টি। খেতে খুব ভাল। সেই স্বাদ আজও আবছা মনে আছে। তারপরে আর মন্ডা খাইনি। তবে, মন্ডা অন্য কোনও নামে বা আকৃতিতে হয়তো বাংলায় বেঁচে রয়েছে।”

সন্দেশে ছানা থাকে নরম, পাকও দেওয়া হয় কম। মন্ডা তৈরিতে ছানাকে বেশি বার পাক করতে হয়। মণ্ডা হল দানাদার ও সামান্য আঠাল।

মুক্তাগাছার গোপালচন্দ্র মোদকের দোকানের কারিগর যতীন্দ্রমোহন দে বাংলা বিভক্ত হবার পর কোচবিহার জেলার মাথাভাঙা ব্লকের প্রেমেরডাঙা গ্রামে বসবাস শুরু করেন। সেখানে মণ্ডার দোকান দেন তিনি। মন্ডা তখন রীতিমতো বনেদি মিঠাই। সেই মন্ডা তৈরির কৌশল যাতে কেউ না জানতে না পারে, সে জন্য তিনি কাউকে তা শেখাননি। ১৯৯২তে যতীন্দ্রমোহনবাবু মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি সে কৌশল শিখিয়ে যান নাতি তরুণকুমার ধরকে। তরুণবাবু প্রেমেরডাঙা থেকে কিলোমিটার দু’য়েক দূরের পূর্ব শিলডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ভোর বেলা খাঁটি দুধ সংগ্রহ করে তা থেকে ছানা তৈরি করে দোকানের ঝাঁপ নামিয়ে গোপনে মন্ডা তৈরি করেন। সারা দিন দোকান সামলান তাঁর স্ত্রী ইতিদেবী। তরুণবাবুর কথায়, “পাক দেওয়ার কৌশল শেখালে অনেকেই মন্ডা তৈরি করতে শুরু করবে। আমাদের কদর কমবে। আবার মন্ডার পাক দেবার কৌশল শিখে মিষ্টিটাকে বিকৃত করে ফেলার আশঙ্কাও রয়েছে। তাই আমি বাইরের কাউকে তা শেখাই না। ছেলে শিখতে চাইলে শিখবে। না হলে থাকবে না।”

পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টি ব্যবসায়ী সমিতির সহকারী সম্পাদক জগন্নাথ ঘোষের কথায়, “মন্ডা তৈরির জন্য যে ধরনের কৌশল প্রয়োজন, তা জানা নেই অনেক কারিগরেরই।” দেশে-বিদেশে মিষ্টি সরবরাহ করে ফেলু মোদকের দোকান। ষষ্ঠ প্রজন্মে প্রতিষ্ঠানটি চালান অমিতাভ মোদক। তিনি বলেন, “মন্ডার মত সাদামাটা মিষ্টি সে ভাবে চলে না। এখন মানুষ অন্য ধরনের স্বাদের মিষ্টি চান। মন্ডার মত বটফল বা বাতাসাও হারিয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে আছে কাজু বা কেশর মিশিয়ে মণ্ডা তৈরি করার।”

sweets
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy