Advertisement
E-Paper

দেওয়াল লেখার লড়াই জমে গিয়েছে ফেসবুকে

শিশু কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে প্রার্থী। নীচে লেখা, ‘সু-জনের সঙ্গে থাকুন’। যাদবপুর কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীর ছবি দেখে তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “সঙ্গে থেকে আর কী হবে, সেই তো প্রাক্তন সাংসদ হয়েই থাকতে হবে। তার থেকে ‘ঘরের জামাই ঘরেই থাক/ সুগত বোস দিল্লি যাক।”

রোহন ইসলাম

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৪ ০৫:১২

শিশু কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে প্রার্থী। নীচে লেখা, ‘সু-জনের সঙ্গে থাকুন’।

যাদবপুর কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীর ছবি দেখে তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “সঙ্গে থেকে আর কী হবে, সেই তো প্রাক্তন সাংসদ হয়েই থাকতে হবে। তার থেকে ‘ঘরের জামাই ঘরেই থাক/ সুগত বোস দিল্লি যাক।” প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এক সিপিএম সমর্থকের জবাব “দিল্লি যাক আর নাই যাক। বামপন্থীরা রাস্তায় থাকে মানুষের মধ্যে। বাট ওনার মতো হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হয়ে উপার্জনে ব্যস্ত থাকেন না।”

পথেঘাটে ভোটের লড়াই জমে ওঠার আগেই লড়াই জমে গিয়েছে ফেসবুকে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের এই সাইটে ‘ভোট ফর সুজন চক্রবর্তী’র পেজ-এ ঘনঘন ‘পোস্ট’ জমা পড়ছে। পাড়ায় দেওয়ালের সংখ্যা বাঁধাধরা, কিন্তু ফেসবুকের ‘ওয়াল’? সেখানে যে যত ইচ্ছে লিখতে পারে। কে কী লিখল, তা-ও সব সময়ে খেয়ালও করা হয় না প্রার্থীর। তাই এ ওর দেওয়াল দখল করা কেন্দ্র করে যেখানে সংঘর্ষ, এমনকী গোলাগুলি অবধি শুরু হয়ে গিয়েছে, সেখানে গায়ক-প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেনের ফেসবুকের ‘ওয়ালে’ এক মাঝবয়সী ব্যক্তি দিব্যি লিখে গিয়েছেন, “রাজনীতির ঘোলা জলে মাছ না ধরলেই চলছিল না?”

এই ধরনের পোস্টেই এখন ভরে গিয়েছে ফেসবুকের দেওয়াল।

অনেক ক্ষেত্রে কর্মীর সঙ্গে প্রার্থীর সংযোগ করাচ্ছে ফেসবুক। প্রার্থী ঘোষিত হওয়ার দু’হপ্তার মধ্যেই ব্যারাকপুরের সিপিএম প্রার্থী সুভাষিণী আলির ফেসবুক পেজের ‘ফলোয়ারের’ সংখ্যা আট হাজার ছুঁয়েছে। সেখানে হতাশ এক সিপিএম সমর্থকের মন্তব্য, “অধিকাংশ পার্টি সদস্যই সক্রিয় নন। লোকাল কমিটিকেও তেমন কাজ করতে দেখছি না। মনে হচ্ছে, আমরা যেন আগেই হেরে বসে আছি।”

উদ্বিগ্ন সুভাষিণী তাঁকে জানাচ্ছেন, “তুমি ঠিক কোন অঞ্চলে থাকো? আমাকে যদি বিস্তারিত জানাও, অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”

নালিশ আসছে সাধারণ মানুষেরও। তৃণমূল নেতা দীনেশ ত্রিবেদীর পেজে আক্ষেপ ঝরিয়েছেন জনৈক হেমন্ত সাউ। “ন্যাশনাল খেলতে গেলে কোনও আর্থিক সাহায্য পাই না। কিন্তু ক্লাবগুলোতে টাকা বিলোচ্ছেন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র।” দীনেশবাবু অবশ্য উত্তর দেননি।

বামপন্থী সমর্থকদের পেজ ‘নজর রাখছি।’ বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের কয়েকটা কার্টুন প্রচুর ‘লাইক’ পাচ্ছে এখানে। তারই একটিতে দেখা যাচ্ছে ‘বোম মারব’-খ্যাত তৃণমূলের ওই দাপুটে নেতাকে ‘সংস্কারী’ হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অভিনেতা অলোক নাথ।

‘তৃণমূল কংগ্রেস সাপোটার্স’ নামে একটি পেজে ফুট কেটেছেন এক সমর্থক “হাত হাতুড়ি কাস্তে তারা/ এ বার হবে ভারত ছাড়া।/ ফুটবে না আর পদ্মফুল/ নতুন ভারত গড়বে এ বার দিদির তৃণমূল।” তার নীচেই জনৈক সমর্থকের কমেন্ট বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাসিমুখ ছবি। ছবিতে লেখা ‘আইলা! তাই নাকি!’ আর এক কংগ্রেস নেতার ফেসবুকে দেবশ্রী রায়ের হাসিমুখ ছবির নীচে এক নেটিজেন-এর মন্তব্য, ‘অতিথি তুম কব যাওগে।’

অনেক প্রার্থী নিজের কাজ সম্পর্কে বিশদ জানাতে উদ্বোধন করেছেন নিজের ওয়েবসাইট। বারাসতের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার ‘www.winkakali.com” ওয়েবসাইট লঞ্চ করেছেন। তাঁর ফেসবুকে জনৈক সোম বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর্জি, “দিদি আমি লোকসভা ইলেকশনে হুগলি থেকে দাঁড়াতে চাই।” নাম ঘোষণা হতেই শুভেন্দু অধিকারীর ফেসবুক পেজে শিশির-শুভেন্দুর পোস্টারের নীচে উত্তেজিত এক সমর্থক পোস্ট করলেন “দেখা যাক, জেঠু বেশি পায় না দাদা!”

‘রায়গঞ্জে সেলিম’ পেজে সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে একটি দেওয়াল লিখনের ছবি দেওয়া হয়েছে। সেখানে শ্রমিকদের দৈনিক ৩৩০ টাকা মজুরি দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে। ওই ছবির নীচেই জনৈক ‘আমি আকাশ’ ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “দু’টো ঘটনা মনে পড়ে গেল। ঠিক এমনই একটা সময় আমি সিপিএম আর কংগ্রেসের জন্য দেওয়াল লিখেছিলাম। তারা দুই পার্টিই আমার রোদে পুড়ে পরিশ্রম করা টাকা মেরে দিয়েছিল। আজও তা পাইনি।” সেলিমেরই ওয়ালে অরিন্দম কাঞ্জিলাল নামে এক ব্যক্তির তাচ্ছিল্য, ‘লাল গয়া তেল বেচনে।’ তা গায়ে না-মেখে বাম সমর্থক অনির্বাণ মিশ্রর জবাব, “কংগ্রেস, বিজেপি-র মতো দেশ বেচার থেকে তেল বেচা ভাল

নয় কি?”

তৃণমূলের শতাব্দী রায়ের ফেসবুকে ভোটারদের চাইতেও ভক্তদের আকুতি বেশি। তবে ইতিমধ্যেই বীরভূম কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী সৈয়দ সিরাজ জিম্মির সমর্থনে ফেসবুকে প্রচার শুরু করেছে দলের কর্মীরা। প্রার্থীর ছবি দেওয়া পোস্টারে তাঁদের স্লোগান ‘নায়ক নই, নায়িকা নই/ ঘরের ছেলে, কাজের ছেলে সৈয়দ সিরাজ জিম্মি।’

অধীর চৌধুরীর সমর্থকেরা ফেসবুকে একটি ওপেন গ্রুপ খুলেছেন। সেখানে এক সদস্য লিখেছেন, “বহরমপুরের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেন বলছেন, তিনি নাকি ২০০ শতাংশ নিশ্চিত তিনি ২০১৪-র লোকসভা ভোটে বহরমপুর থেকে জিতবেন।” ওই পোস্টের তলায় পরামর্শ, “বাপি বাড়ি যা!”

ক’দিন আগেই বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষের পাশে দাঁড়িয়ে বাম কর্মী-সমর্থকদের বিরাগভাজন হয়েছেন কবি সুবোধ সরকার এবং অভিনেতা অরিন্দম শীল। সুবোধবাবুর ফেসবুক প্রোফাইলে তার প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। তাঁর দেওয়ালে এক জন লিখেছেন, “আজকে এ দল, কালকে ও দল/ তলার এবং গাছের/ এ সব নিয়ে কিছু মানুষ/ দিব্যি বেঁচে আছে’ আপনার লেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। হঠাৎ মনে পড়ল তাই শেয়ার করলাম।”

loksabha ellection face book rohan islam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy