দেহ উদ্ধারে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।
সকাল ন’টার পরেও বাড়ির দরজা না খোলায় ডাকাডাকি শুরু করেছিলেন পড়শিরা। সাড়া না পেয়ে ঘরের একটি জানলা খুলে দিতেই ভেসে এল তীব্র গন্ধ। দরজা ভাঙতেই দেখা গেল ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে বাড়ির কর্তা রণবীর ঘড়ুইয়ের (৩৮) দেহ। মেঝেতে পড়ে তাঁর মেয়ে বীথিকার (১১) দেহ। পাশের ঘরে ঢুকেও আঁতকে ওঠেন পড়শিরা। সেখানে বিছানায় চাদর ঢাকা অবস্থায় পড়ে রয়েছে রণবীরের স্ত্রী পম্পা (৩২) এবং তাঁদের পোষ্য ল্যাব্রাডর কুকুরের মৃতদেহ। ঘরের আলমারি খোলা। মেঝেতে পড়ে রয়েছে রসগোল্লা এবং ল্যাংচা। দু’টি ঘরের মাঝে এ দিক-ও দিক ছড়িয়ে রয়েছে মুড়ি।
মঙ্গলবার হুগলির চণ্ডীতলার পাঁচঘ়়ড়া পঞ্চায়েতের জয়কৃষ্ণপুরের হরিসভা এলাকার বাসিন্দা রণবীরদের দেহগুলি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। তবে, ঠিক কী ভাবে এই মৃত্যু তা নিয়ে পুলিশ কিছুটা ধন্দে। অন্ধকারে রণবীরদের পড়শিরাও।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তিনটি শিশি উদ্ধার করেছে। পুলিশের অনুমান, ওই শিশিগুলিতে রাখা কীটনাশক খাইয়ে কুকুরটিকে মেরে তিন জন আত্মঘাতী হয়েছেন। রণবীর জমি কেনাবেচার কাজ করতেন। এ ছাড়া, পারিবারিক জমি বিক্রির টাকা ছিল তাঁদের। তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, নিয়মিত রোজগার না থাকলেও ঘড়ুই পরিবারে বিলাসিতা ছিল। দামি বিদেশি মদ খেতেন রণবীর। তাই বাজারে প্রচুর দেনা হয়ে যাওয়ায় এই আত্মহত্যা কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের দাবি, আগেও রণবীর বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
এসডিপিও (শ্রীরামপুর) সুবিমল পাল জানান, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার পিছনে সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রণবীররা দোতলা বাড়ির একতলার দু’টি ঘরে থাকতেন। পাড়ায় খুব বেশি মিশতেন না। বাড়িতে ছিল একটি ছোট গাড়ি এবং মোটরবাইক। বেশ কয়েক দিন ধরে রণবীর গাড়িটি বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। সেই কারণে রবিবার ডানকুনির একটি শোরুমেও গিয়েছিলেন। সোমবার দুই বন্ধুকে প্রথমে জানিয়েছিলেন, আগের রাতে তাঁর বাড়ির সদর দরজা কেউ বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছিল। সেই কারণে সে দিন তিনি রাত-পাহারার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু রাতে তিনি বন্ধুদের আসতে বারণ করে দেন।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে ভিড়। পাড়ার মোড়ে জটলা। ঘড়ুই বাড়ির এক তলার দু’টো ঘরের মধ্যে বারান্দা রয়েছে। সেখানেই রান্না করা হত। সেখানে বাসনের মধ্যে ভাত রাখা ছিল। ভাস্কর ঘোড়ুই নামে রণবীরের এক বন্ধু জানান, সোমবার রাত সওয়া ৮টা নাগাদ রণবীর তাঁকে দিয়ে গরম রসগোল্লা আনান। তার পরে ফোন করে পাহারার জন্য আসতে বারণ করেন। সকালে দেখেন এই ঘটনা।’’ রণবীরের দাদা সমীর ঘড়ুই বেগমপুরে থাকেন। এ দিন তিনি চণ্ডীতলায় আসেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভাই টুকটাক জমির কাজ করত। কী ভাবে কী হল বুঝতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy