Advertisement
E-Paper

দুপুর দু’টো অবধি দেখাই নেই রাকেশের

সকাল থেকেই তিনি নিখোঁজ! জেলায় জেলায় সকাল সাতটায় শুরু হয়ে গিয়েছে ভোট। বেলা ন’টা থেকেই বিবাদী বাগে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও)-এর দফতরে ভিড় জমিয়েছেন বিরোধী দলের নেতারা। ভোট লুঠ হচ্ছে বলে অভিযোগ জানাতে চান ওঁরা। কিন্তু জানাবেন কার কাছে? ভোটের সেনাপতিই তো অনুপস্থিত। যাঁর সঙ্গে তাঁর লড়াই, বীরভূমে গিয়ে গত সপ্তাহেই যাঁকে তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এসেছেন, সেই অনুব্রত মণ্ডল মাঠে নেমে পড়েছেন। কিন্তু অনুব্রতর চ্যালেঞ্জার কোথায়?

কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০৪:৩৪

সকাল থেকেই তিনি নিখোঁজ!

জেলায় জেলায় সকাল সাতটায় শুরু হয়ে গিয়েছে ভোট। বেলা ন’টা থেকেই বিবাদী বাগে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও)-এর দফতরে ভিড় জমিয়েছেন বিরোধী দলের নেতারা। ভোট লুঠ হচ্ছে বলে অভিযোগ জানাতে চান ওঁরা। কিন্তু জানাবেন কার কাছে? ভোটের সেনাপতিই তো অনুপস্থিত।

যাঁর সঙ্গে তাঁর লড়াই, বীরভূমে গিয়ে গত সপ্তাহেই যাঁকে তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এসেছেন, সেই অনুব্রত মণ্ডল মাঠে নেমে পড়েছেন। কিন্তু অনুব্রতর চ্যালেঞ্জার কোথায়?

বিরোধী দলের নেতারা তাঁকে খুঁজছেন। সাংবাদিকেরা খুঁজছেন। জেলার পর্যবেক্ষকেরা খুঁজছেন।

ঘড়িতে বেলা ১২টা বেজে গিয়েছে। পাঁচ ঘণ্টা হয়ে গিয়েছে ভোটের। কোথাও কোথাও ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়ে গিয়েছে। সিইও-র অফিসে সবাই আছেন। কিন্তু নেই এক জন। সকাল থেকে যাঁর সিইও অফিসে বসে জেলায় জেলায় ভোট পরিচালনা করার কথা। সিইও-র অফিসে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ ভাবলেন, কাউকে না জানিয়ে তিনি হয়তো হানা দিয়েছেন কোনও জেলায়। অবাধ নির্বাচন করানোর জন্য সেটাই বোধ হয় তাঁর দাওয়াই।

কিন্তু ঠিক তখনই জানা গেল, নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ রয়েছেন কলকাতাতেই। কিন্তু কোথায়?

সিইও অফিসের এক আধিকারিক জানালেন, “কোথায় আবার? কলকাতায় তাঁর অস্থায়ী ডেরায়। গোলপার্কের বেদীভবনে।”

তা হলে কি খেলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই হার স্বীকার করে নিলেন রাকেশ? দিন কয়েক আগেই রাকেশ বলেছিলেন, “আমাদের কাছে সব ধরনের ওষুধ আছে। আমরা জানি, কোন রোগে কী দাওয়াই।” তাঁর সেই কথায় রাজনৈতিক দল তো বটেই, সাধারণ ভোটারও ভরসা পেয়েছিলেন। কিন্তু যিনি ওষুধ দেবেন, তিনিই সকাল থেকে বেপাত্তা থাকায় সিইও-র অফিসে অপেক্ষমান সিপিএম নেতাদের ধৈর্যের বাঁধ ক্রমশ ভেঙে পড়ছিল। তিনি যে বেদীভবনে রয়েছেন, তা জানার সঙ্গে সঙ্গেই ফাইলপত্র নিয়ে সেখানে ছুটলেন সিপিএম নেতা রবীন দেব ও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন বেলা সাড়ে ১২টা হবে। ততক্ষণে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যও।

কিন্তু সমস্যার সমাধান মিলল না। রাকেশ তাঁদের ফেরত পাঠালেন সিইও-র দফতরে। তাঁর জন্য ফের অপেক্ষা শুরু হল রবীন দেবদের। শেষ পর্যন্ত তিনি যখন নির্বাচন কমিশনে হাজির হলেন, তখন দুপুর ২টো বেজে গিয়েছে। ভোট পড়ে গিয়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। বিশেষ পর্যবেক্ষকের উপর থেকে আস্থাও অনেকটাই উবে গিয়েছে বিরোধী দলগুলির।

রবীন দেব বলছিলেন, “কমিশন নানা ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু ভোটের দিনের বাস্তব ছবির সঙ্গে তার মিল নেই। কার্যকর কোনও ব্যবস্থাই চোখে পড়ছে না।” রাকেশের সঙ্গে কথা বলেও আক্ষেপ যায়নি তাঁর।

সাংবাদিকদের দাবি সময় দিতে হবে। তা-ই করলেন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক। দেখা গেল, তাঁর কাছে নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও খবরই নেই। মনে হল, বিভিন্ন কেন্দ্রের নানা ধরনের অভিযোগ এই প্রথম সাংবাদিকদের কাছ থেকেই শুনলেন তিনি। এর পরেই প্রথম বারের জন্য চার জেলার ভোটপর্ব দেখতে বসলেন রাকেশ। ওয়েব কাস্টিং-এর মাধ্যমে। মানে, যে সব বুথের ভোটপর্ব সরাসরি কমিশনের দফতরে বসে দেখা যাবে।

কিন্তু সব যে ঠিক চলছে না, টের পেলেন হাতে-নাতে। বেশির ভাগ কেন্দ্রের ছবিই দেখতে পেলেন না বিশেষ পর্যবেক্ষক। যদিও সেটাকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে “লিঙ্ক ফেলিওর” বলে প্রসঙ্গান্তরে চলে গেলেন।

বিকেলের দিকে সুধীরকুমার জানান, তাঁর কাছে এ দিন এসএমএস-এর মাধ্যমে অভিযোগ এসেছে প্রায় ১৫০টি। তবে তার প্রায় কোনওটিই ধোপে টেকেনি। তাঁর দাবি, এসএমএস-এর জবাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। তার পরে আর সাড়া মেলেনি। এ ছাড়াও, অভিযোগ এসেছে প্রায় ৩০০। বেশির ভাগই খতিয়ে দেখে তাঁরা বুঝেছেন, সেগুলির সারবত্তা নেই।

সাংবাদিকদের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ পেয়ে তিনি বলেন, “আমাকে ১৫ মিনিট সময় দিন, আপনাদের উত্তর দিয়ে দেব।” সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের ফোন। বুথের নম্বর জানিয়ে বললেন, “বুথে কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে কি না, কোনও ঘটনা ঘটেছে কি না দশ মিনিটের মধ্যে জানান।” উত্তরও এসে গেল। জেলাশাসকদের জবাব পেয়ে সন্তুষ্ট সুধীরকুমার।

এ দিকে জেলা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ক্রমাগত অভিযোগ জানিয়ে চলেছে ‘ভোটারদের বাধা দেওয়া হচ্ছে’, ‘বুথ দখল হয়ে গিয়েছে’, ‘এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে’, ‘শাসক দলের লোকেরা মারধর করছে’, ‘ভোটারদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে’। সে সবের প্রতিক্রিয়া আলাদা করে দেননি সুধীরকুমার। কেন তিনি এ দিন কোথাও ভোট দেখতে না বেরিয়ে বেশির ভাগ সময় বেদীভবনে আর কমিশনের দফতরে কাটালেন, তারও সদুত্তর দিলেন না।

কিন্তু সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ কমিশনের দফতর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, “ভোটগ্রহণ শান্তিতে হয়েছে কি না বলতে পারব না, তবে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে।” ততক্ষণে বিরোধীরা ৮২৬ টি বুথে ফের নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।

রাকেশের ওষুধ কিছু কাজ দিল? বিরোধী দলের এক নেতার হতাশ মন্তব্য, “মনে হল উনি রোগটাই ধরতে পারেননি! ওষুধ দেবেন তো তার পরে!”

kaji golam gous siddiqui lok sabha election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy