Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দাপট হারিয়েছে শীত, বাড়ছে রোগের আশঙ্কা

সকালের ট্রেনেও হাতকাটা সোয়েটার পরে হাঁসফাঁস করছিলেন এক যুবক। ‘দুচ্ছাই’ বলে শেষমেশ খুলে ব্যাগে ভরে রাখলেন সোয়েটারটা। একটু বেলায় রীতিমতো পাখা ঘুরতে দেখা গিয়েছে লোকাল ট্রেনে! নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এমন হুড়মুড় করে তাপমাত্রা কমেছিল যে মনে হচ্ছিল ডিসেম্বরের গোড়াতেই কলকাতায় বসে শীতে কাঁপতে হবে। কিন্তু ডিসেম্বর যত এগিয়েছে, কমার বদলে বাড়তে শুরু করেছে তাপমাত্রা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৭
Share: Save:

সকালের ট্রেনেও হাতকাটা সোয়েটার পরে হাঁসফাঁস করছিলেন এক যুবক। ‘দুচ্ছাই’ বলে শেষমেশ খুলে ব্যাগে ভরে রাখলেন সোয়েটারটা। একটু বেলায় রীতিমতো পাখা ঘুরতে দেখা গিয়েছে লোকাল ট্রেনে!

নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এমন হুড়মুড় করে তাপমাত্রা কমেছিল যে মনে হচ্ছিল ডিসেম্বরের গোড়াতেই কলকাতায় বসে শীতে কাঁপতে হবে। কিন্তু ডিসেম্বর যত এগিয়েছে, কমার বদলে বাড়তে শুরু করেছে তাপমাত্রা। দিনে অস্বস্তি, দুপুরে অস্বস্তি, এমনকি অস্বস্তি রাতেও। লেপ-কম্বল বার হয়েছে বটে, কিন্তু তা রাখতে হয়েছে পাট করে।

যে উত্তুরে হাওয়া নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ঢুকতে শুরু করেছিল তার পথে পাঁচিল তুলে দিয়েছে জলীয় বাষ্পের আস্তরণ। তার জেরে কুয়াশা থাকছে বেলা পর্যন্ত, কমেছে সূর্যের আলোর তীব্রতা। এই মেঘলা, অস্বস্তিকর আবহাওয়ার পুরো সুযোগ নিয়েছে রোগ-জীবাণুরা। মশা, মাছির মতো রোগ-জীবাণু বহনকারী পতঙ্গদের বংশবিস্তারের হারও বেড়ে গিয়েছে। আর তাতেই ডিসেম্বরেও শহরে ঘাঁটি গেড়েছে ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গি। পরজীবী বিজ্ঞানীরা মানুষকে সতর্ক থাকতে বলে দিয়েছেন। পুরসভা সূত্রে বলা হয়েছে, তাদের মশানিধনকারী কর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চলছে মশা মারার অভিযান।

চিকিৎসকেরা বলছেন, শুধু ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গিই নয়, সর্দি-কাশির সঙ্গে ভাইরাল জ্বরও ছড়াচ্ছে দ্রুত হারে। শীতের মুখে আন্ত্রিক- সহ বিভিন্ন পেটের রোগও বেড়ে গিয়েছে। পরজীবী বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রা যত কমবে, ততই রোগ-জীবাণু নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। শীতের জন্য অপেক্ষা করে থাকা ছাড়া উপায় নেই।

নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মহানগরীর তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রিতে নেমে গিয়েছিল। তা শুক্রবার বেড়ে হয়েছে ১৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি বেশি। এখন এমন ‘গরম’ কেন?

আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে একটি উচ্চচাপ বলয় (একটি নির্দিষ্ট এলাকা যেখানে বায়ুর চাপ আশপাশের এলাকা থেকে বেশি। এখানে জলীয় বাষ্পের আধিক্যও থাকে।) তৈরি হয়েছে। ফলে সেখান থেকে দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। বাধা তৈরি হয়েছে উত্তুরে হাওয়ার পথে। তার ফলেই তাপমাত্রা বাড়ছে। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, আপাতত এমনই থাকবে শীতের দশা।

শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, শীতের বেহাল দশা প্রতিবেশী বিহার-ঝাড়খণ্ডেও। নভেম্বরের গোড়া থেকেই রাঁচি-পটনা-গয়ায় হাড় কাঁপানো ঠান্ডা পড়েছিল। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে সেখানেও পারদ চড়ছে। এ দিন পটনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি, রাঁচিতে ১০.৬ ডিগ্রি! দু’টোই স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি! শুধু প্রতিবেশী রাজ্যই নয়, শীতের দৌড়ে প্রথম সারিতে থাকা এ রাজ্যের শ্রীনিকেতন, বাঁকুড়াতেও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে নামছে না।

মৌসম ভবন সূত্রের খবর, ভারতে শীত নিয়ে আসে আফগানিস্তান, পাকিস্তানের উপর দিয়ে বয়ে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। কাশ্মীরের উপরে থাকা ঝঞ্ঝাটি সরে গিয়েছে। এখন আর কোনও ঝঞ্ঝা নেই। তার উপরে বঙ্গোপসাগরে উচ্চচাপ বলয়টি রয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন শীতের অনুকূলে নেই।

তা হলে ফের কবে মিলবে শীতের কামড়?

মৌসম ভবন সূত্রের খবর, আগামী সোমবার নাগাদ উচ্চচাপ বলয়টি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। ওই দিনই কাশ্মীরে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ঢোকার কথা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “সোমবার রাত থেকেই দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি শীতের দাপট মালুম হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

winter disease risk of disease temperature rising
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE