ট্রেন পনেরো ঘণ্টা ‘লেট’। কেন?
রেল কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রেলের তরফে যে উত্তর পেয়েছিলেন, তা নিতান্তই ‘মিথ্যাচার’ বলে দাবি করে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছিলেন রাজ্যের পরিবেশ দফতরের প্রাক্তন মুখ্য-আইন অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। সম্প্রতি আদালত তার রায়ে রেলকে ভর্ৎসনা করে জানিয়েছে, ট্রেনের ভাড়া এবং মামলার যাবতীয় খরচ ফিরিয়ে দিতে হবে বিশ্বজিৎবাবুকে। নির্দেশ মেনে নগদে সে ক্ষতিপূরণ মিটিয়েও দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
ভারতীয় রেলের ভাল-মন্দের সঙ্গে দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক ধরে জড়িয়ে রয়েছে ‘ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কমিউনিটি’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদের পক্ষে সুধীর আগরকর বলছেন, “পৃথিবীর বৃহত্তম রেল-ব্যবস্থা ভারতে, এটা যেমন সত্যি তেমনই সীমাহীন অব্যবস্থার প্রশ্নেও ভারতীয় রেলের জুড়ি নেই। এই রায় তাই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।”
বিশ্বজিৎবাবু জানান, ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর হরিদ্বার থেকে ডাউন ১৩০০১০ দুন এক্সপ্রেসে এসি টু-টিয়ার কামরায় কলকাতা ফিরছিলেন তিনি। তাঁর অভিজ্ঞতা, “মোগলসরাই ছাড়িয়ে রাতের অন্ধকারে থমকে যায় ট্রেন।” কামরায় থাকা টিকিট পরীক্ষককে বারবার জিজ্ঞাসা করেও কারণ জানা যায়নি। বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, “উল্টে যাত্রীদের সঙ্গে দুর্বব্যবহার করে ওই টিকিট পরীক্ষক একটু পরেই উধাও হয়ে যান।”
রাত বাড়তেই শুরু হয় নানা সমস্যা। ফুরিয়ে যায় ট্রেনের জল। থমকে যায় বাতানুকূল ব্যবস্থাও। তাঁর দাবি, এই অবস্থায় প্রায় তেরো ঘণ্টা কামরার মধ্যেই ছিলেন যাত্রীরা। পরের দিন বেলা ৯টা নাগাদ ট্রেন ছাড়ে, নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় পনেরো ঘণ্টা পরে হাওড়ায় পৌঁছয়।
ক্ষুব্ধ বিশ্বজিৎবাবু রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখে তাঁদের দুর্ভোগের কথা জানান। পাল্টা উত্তর-ও আসে। তবে, সে চিঠিতে পূর্ব-মধ্য রেলের ডিভিশনাল কর্মাশিয়াল ম্যানেজার জানান, ওই রাতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য মোগলসরাইয়ের কাছে লাইনের উপরে গাছ পড়ে যাওয়ায় ট্রেন চলাচলে থমকে গিয়েছিল।
রেলের উত্তর পেয়ে বিস্মিত বিশ্বজিৎবাবু প্রশ্ন তোলেন সেই রাতে দুর্যোগ কোথায়? আবহাওয়া দফতরের স্থানীয় পূর্বাভাস এবং পরের দিনের স্থানীয় খবরের কাগজের ‘কাটিং’ পাঠিয়ে পাল্টা চিঠিতে রেল কর্তৃপক্ষকের কাছে তিনি জানতে চান ‘এই মিথ্যাচার কেন?’ তার উত্তর অবশ্য মেলেনি।
এরপরেই রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে রেলের এই ‘মিথ্যাচারের’ বিরুদ্ধে মামলা করেন বিশ্বজিৎবাবু। ডিসেম্বরের গোড়ায়, রেল কর্তাদের তলব করে আদালত। গত ৬ ডিসেম্বর, দু’পক্ষের মতামত শুনে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের তিন বিচারক বি ডি নন্দা, শর্মী বসু এবং অমর মুখোপাধ্যায় রায়ে বলেন ‘রেল কর্তৃপক্ষ যে সত্যি কথা বলছেন না, তা প্রমাণিত।’
তাঁদের নির্দেশ, মোগলসরাই থেকে হাওড়া এসি টু-টিয়ার কামরার ভাড়া এবং মামলার যাবতীয় খরচ বিশ্বজিৎবাবুকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ফিরিয়ে দিতে হবে। আদালতের রায় মেনে ২৯ ডিসেম্বর নগদে টাকা মিটিয়ে দেয় রেল। কেন ওই ‘মিথ্যাচার’ করা হয়েছিল?
এ ব্যাপারে ডিআরএম (পূর্ব-মধ্য)-র কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে জানিয়ে রেল বোর্ডের এক কর্তা বলেন, বিষয়টি “তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্ত টিকিট পরীক্ষককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy