Advertisement
E-Paper

দুঃসহ এমন দিনের কথা স্বপ্নেও ভাবিনি

সবে চন্দ্রকোনা ছেড়েছে বাস। আচমকা একটা ঝাঁকুনিতেই কেমন যেন সব ওলটপালট হয়ে গেল। কী হল প্রথমটায় বুঝতেই পারিনি। চারিদিকে তখন শুধু আর্তনাদ। হঠাৎ চেয়ে দেখি পাশের একজনের মাথা ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে। উল্টো দিকে তাকিয়ে দেখি একজনের হাত কেটে গিয়েছে। আমার কোলে তখন দশ মাসের বাচ্চা।

রাধা দোলুই

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:০৯

সবে চন্দ্রকোনা ছেড়েছে বাস। আচমকা একটা ঝাঁকুনিতেই কেমন যেন সব ওলটপালট হয়ে গেল। কী হল প্রথমটায় বুঝতেই পারিনি। চারিদিকে তখন শুধু আর্তনাদ। হঠাৎ চেয়ে দেখি পাশের একজনের মাথা ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে। উল্টো দিকে তাকিয়ে দেখি একজনের হাত কেটে গিয়েছে। আমার কোলে তখন দশ মাসের বাচ্চা। হাতে-পায়ে চোট। যেন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলাম। বাসে বহুবার উঠেছি। বাস দুর্ঘটনার কথাও শুনেছি। কিন্তু কোনও দুর্ঘটনার রূপ যে কত ভয়ঙ্কর এই প্রথম বুঝলাম। চোখের সামনে দেখলাম কয়েকজন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।

আমার বাড়ি কেশপুরের নেড়াদেউলে। স্বামী তাপস দোলুই চাষের কাজ করেন। সামান্য জমি রয়েছে। কাঠা পাঁচেক হবে। এক মেয়ে, এক ছেলে। মেয়ে পিউর বয়স তিন বছর তিন মাস। ছেলে রনির বয়স দশ মাস। ক’দিন ধরেই ছেলের শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। ডাক্তার দেখাতে ছেলেকে নিয়ে চন্দ্রকোনায় গিয়েছিলাম। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ নেড়াদেউল থেকেই চন্দ্রকোনা যাওয়ার বাস ধরি। দশটা নাগাদ চন্দ্রকোনায় পৌঁছে যাই। পরে ডাক্তারখানায় যাই। ডাক্তারবাবু অবশ্য এ দিন ছিলেন না। ডাক্তারখানা বন্ধ থাকবে বলে জানতাম না। জানলে এ দিন চন্দ্রকোনায় যেতামই না।

বাড়িতে মেয়েকে রেখে গিয়েছিলাম। তাই নেড়াদেউলে ফেরার তাড়া ছিল। ডাক্তারবাবু নেই দেখে চন্দ্রকোনা থেকে নেড়াদেউলে ফেরার বাস ধরি। বাসটায় প্রায় ৬০ জন ছিল। চন্দ্রকোনা থেকে ১২টা নাগাদ বাসটা ছাড়ে। বাসটা বেশ জোরেই চলছিল। চন্দ্রকোনা ছাড়ার কিছু পরেই ঘটে বিপত্তি। বুড়াপাট পাঁচখুরির সামনে আচমকা একটা ঝাঁকুনি দেয়। বাস উল্টে যায়। বাস উল্টে রাস্তার পাশের জমিতে গিয়ে পড়ে। আমিও কোলে বাচ্চা নিয়ে বাসের মধ্যে উল্টে যাই। সম্বিত ফিরতে ধরপড়িয়ে উঠে পড়ি।

প্রথমে বুঝতে পারিনি কী হয়েছে। পরে শুনেছি, বাসের সামনের দিকের একটা চাকা খুলে গিয়েছিল। তাই বাসটা উল্টে যায়। আমারও হাতে- পায়ে চোট লেগে যন্ত্রণা হচ্ছিল। বাচ্চাটার মাথাতেও সামান্য আঘাত লাগে। দুর্ঘটনার পরে এলাকার মানুষজন ছুটে আসেন। একে একে বাসের দরজা- জানলা দিয়ে সবাইকে বের করা হয়। এলাকার মানুষজন অন্য একটা বাসে করে আমাদের বেশ কয়েকজনকে মেদিনীপুরের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। চোখের সামনে দেখেছি, কতজনের শরীর থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। কতগুলো বাচ্চা সমানে কেঁদেই চলেছে।

এক মহিলা তো তার বাচ্চাকে পাগলের মতো খুঁজছিলেন। জানি না ওই মহিলা তার বাচ্চার খোঁজ পেয়েছেন কি না। কোনও দিন এমন ঘটনার মুখে পড়ব, এ ভাবে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসব, কখনও ভাবিনি। এরপর বাসে উঠতে সত্যিই ভয় করবে। দুর্ঘটনার সময়কার কথা মনে পড়লে হাত- পা কাঁপছে। মনে হচ্ছে, ঘটনার কথা যত তাড়াতাড়ি ভুলতে পারি, ততই ভাল।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy