Advertisement
E-Paper

দরপত্র বড় নাকি বইয়ের মান, ধন্দ রাখল কোর্টের রায়

উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে পক্ষপাত হয়েছে বলে জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য নতুন করে দরপত্র চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া। তিনটি শিক্ষাবর্ষের জন্য বই ছাপার বরাত পেয়েছিল একটি নামী প্রকাশনা সংস্থা। সিঙ্গল বেঞ্চের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছে তারা। এ দিকে, মামলা-পাল্টা মামলায় ঝুলে রয়েছে নতুন বই প্রকাশের কাজ। কেন?

সাবেরী প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৮

উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে পক্ষপাত হয়েছে বলে জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য নতুন করে দরপত্র চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া।

তিনটি শিক্ষাবর্ষের জন্য বই ছাপার বরাত পেয়েছিল একটি নামী প্রকাশনা সংস্থা। সিঙ্গল বেঞ্চের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছে তারা। এ দিকে, মামলা-পাল্টা মামলায় ঝুলে রয়েছে নতুন বই প্রকাশের কাজ।

কেন?

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রের খবর, তারা ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের জন্য অপেক্ষা করছে। বরাত পাওয়া ইস্তক সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা সংস্থাটি একাদশ শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি বই এবং দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি বই ছেপে এসেছে। আগামী মাসে মাধ্যমিক শেষ হওয়ার পরেই এই সব বইয়ের চাহিদা তৈরি হবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। অথচ বাজারে সময় মতো নতুন পাঠ্যবই না পৌঁছলে আখেরে পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়বে বলে আশঙ্কা শিক্ষামহলের।

পাঠ্যবই ছাপার বরাত দেওয়ায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগেই কার্যত সরে যেতে হয়েছিল সংসদের তৎকালীন সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। যদিও কোনও পক্ষপাতিত্ব হয়নি বলেই মুক্তিনাথবাবু বরাবর দাবি করে এসেছেন। তাঁর যুক্তি, মান বিচার করেই বই প্রকাশনার বরাত দেওয়া হয়েছিল।

লিখিত রায়ে সিঙ্গল বেঞ্চ অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, পক্ষপাতিত্ব যে হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় নেই। বিচারপতি পাথেরিয়া বলেছেন, ২০১৩-য় তিন বছরের জন্য দরপত্র চেয়েছিল সংসদ। এর মধ্যে ২০১৩-’১৪ এবং ২০১৪-’১৫ শিক্ষাবর্ষ চলে গিয়েছে। ২০১৫-’১৬-র বই এখনও প্রকাশিত হয়নি। তাই ২০১৫-’১৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা সংস্থাটির নামে যে ওয়ার্ক অর্ডার রয়েছে, তা বাতিল করতে হবে।

ওই শিক্ষাবর্ষের জন্য বই ছাপার দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে, নতুন করে দরপত্র চেয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে সংসদকে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।

এই রায়ের বিরুদ্ধেই ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছে প্রকাশনা সংস্থাটি। ওরিয়েন্ট ব্ল্যাকসোয়ান নামে ওই সংস্থার আইনজীবী দীপ্তভানু দত্ত বলেন, “আমরা ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছি। আশা করছি, আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার মামলাটি আদালতে উঠবে।” এ কথা জানিয়ে চিঠি গিয়েছে সংসদেও।

২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম ঢেলে সাজা হয়। সেই বছরই বাংলা, ইংরেজি-সহ কয়েকটি বই ছাপার বরাত দেওয়া নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে সংসদের বিরুদ্ধে।

বিতর্কের প্রধান কারণ, সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা সংস্থাটি সংসদকে ২৫% রয়্যালটি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বই ছাপার বরাত পায়। অথচ প্রকাশনা সংস্থা পুনশ্চ-র তরফে ৩৫% রয়্যালটি দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। ওই দরপত্রের ভিত্তিতে সেটিই সর্বোচ্চ বলে সংসদ সূত্রের খবর। সে ক্ষেত্রে পুনশ্চকে বাদ দিয়ে অন্য সংস্থাটিকে ছাপার বরাত দেওয়া হল কেন, তা নিয়ে তখনই প্রশ্ন ওঠে। মুক্তিনাথবাবু অবশ্য তখনও দাবি করেছিলেন, যোগ্যতা ও দক্ষতার বিচারে অন্য প্রকাশনা সংস্থাটি অনেক এগিয়ে বলেই সংসদ তাদের ওই কাজের বরাত দিয়েছে।

বই ছাপার বরাতে অনিয়মের অভিযোগ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় পুনশ্চ। সেই মামলার রায়েই সংসদের পক্ষপাতিত্বের কথা বলেছেন বিচারপতি। রায় প্রসঙ্গে মুক্তিনাথবাবু বলেন, “আমি এখনও বলছি,

কোনও পক্ষপাতিত্ব হয়নি। সর্বোচ্চ রয়্যালটিই বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র বিবেচ্য নয়। আমরা চেয়েছিলাম, ভাল মানের বই ছাত্রছাত্রীদের হাতে পৌঁছে দিতে। সেই কারণেই নামী সংস্থাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।” যদিও পাঠ্যবই ছাপার ব্যাপারে পুনশ্চ-র অভিজ্ঞতা নেই বলে যে যুক্তি সংসদ দেখিয়েছিল, তা খারিজ করে আদালত জানিয়েছে, ওই সংস্থা রাজ্যের মাদ্রাসা পর্ষদের বই প্রকাশ করেছে। ফলে তাদের অভিজ্ঞতা না থাকার অভিযোগ ভিত্তিহীন।

সংসদের বর্তমান সভাপতি মহুয়া দাস জানিয়েছেন, এই বরাত দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ, তিনি ওই সময়ে সংসদের দায়িত্বে ছিলেন না। মহুয়াদেবী বলেন, “আপাতত আমরা ডিভিশন বেঞ্চের সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে আছি। দেখা যাক, কী হয়!”

যদিও অনেকের মতে, হাইকোর্টের রায় সত্ত্বেও বিতর্ক একটা রয়েই গেল বইয়ের মানই শেষ কথা, নাকি দরপত্রের নিয়মকানুন?

saberi pramanik HS book
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy