ধর্ষণ ও সালিশি সভা ডেকে তার গ্রাম্য ফয়সালার দু’টি ঘটনা নিয়ে সব তথ্য চাইল কলকাতা হাইকোর্ট। একটি ঘটনা মালদহের মানিকচকের। অন্যটি বীরভূমের মহম্মদবাজারের। দ্বিতীয় ঘটনায় সালিশির বিষয়টি পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে শেষ পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়নি ঠিকই। কিন্তু নারি-নির্যাতনের মতো অপরাধেও সালিশির দাপট ক্রমশ বেড়ে চলায় হাইকোর্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
গ্রামের মাতব্বরদের বাধায় পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে পারেননি মালদহের মানিকচকের এক গৃহবধূ। উল্টে মাতব্বরেরাই গ্রামে সালিশি সভা বসিয়ে তাঁকে কুলটা অপবাদ দেন। সেই অপমানে পরের দিন গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই গৃহবধূ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর মৃত্যু হয় সেখানেই। বিষয়টি জেনে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা শুরু করে। বুধবার শুনানির শেষে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, সে-দিন সালিশি সভায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের নাম-ঠিকানা, পেশা-সহ সব তথ্য বিস্তারিত ভাবে আদালতকে জানাতে হবে। ছ’সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারকে এই নির্দেশ পালন করতে বলা হয়েছে।
এ দিন শুনানির সময় আইনজীবী রবিশঙ্কর ভট্টাচার্য আদালতে বলেন, মানিকচকের পরেও এই ধরনের বেশ কিছু সালিশি সভার কথা প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। সেই সূত্র ধরে মহম্মদবাজারের ঘটনাটির উল্লেখ করেন তিনি। ডিভিশন বেঞ্চ ১৫ দিনের মধ্যে ওই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে বীরভূমের জেলাশাসককে।
মানিকচকে ঘটনার সূত্রপাত গত ৩১ মার্চ। সে-দিন ওই এলাকার ভুতনির বসন্তটোলায় এক বধূর ঘরে জোর করে ঢুকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রামেরই এক যুবককে হাতেনাতে ধরে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরের দিন ওই গৃহবধূ এবং তাঁর স্বামী থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে গ্রামের মাতব্বরেরা বাধা দেন। সে-দিনই সালিশি সভা ডাকা হয়। পুলিশি সূত্রের খবর, ১ এপ্রিলের সেই সালিশি সভায় অভিযুক্ত যুবককে কেবল কান ধরে ওঠবোস করিয়ে এবং নির্যাতিতা বধূর পা ধরে ক্ষমা চাইয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু গৃহবধূকে কুলটা অপবাদ দেন মাতব্বরেরা। সেই অপমানে ওই বধূ ২ এপ্রিল গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। দগ্ধ বধূকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ৩ এপ্রিল তিনি মারা যান।
তার পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে মালদহের ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বিভাস পট্টনায়ক তদন্ত করতে বসন্তটোলায় যান। পুলিশও নড়েচড়ে বসে। তারা অভিযুক্ত নবীন মণ্ডলকে বিহারের পূর্ণিয়া থেকে গ্রেফতার করে মালদহে আনে। পরে নবীনের মা রেখা মণ্ডলকেও গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের জেরা করে পুলিশ সাত দিনের মধ্যে সালিশি সভায় উপস্থিত দুই মাতব্বর বীরেশ্বর মণ্ডল ও মন্টু মণ্ডলকে গ্রেফতার করে। অন্য তিন মাতব্বর রতন মণ্ডল, গৌরাঙ্গ মণ্ডল ও মনোজ মণ্ডল এখনও অধরা। এই ঘটনায় ধৃত চার জনই এখন মালদহ জেলে। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট জমা দিতে পারেনি।
বীরভূমের মহম্মদবাজারে ‘গণধর্ষণ’-এর ঘটনায় বুধবার সিউড়ি আদালতে গোপনে জবানবন্দি দিয়েছে নির্যাতিতা স্কুলছাত্রী। তবে অভিযুক্ত তৃতীয় ছাত্রটিকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তের খোঁজ চলছে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত নাবালক ছাত্রের গ্রেফতারি ও শাস্তির দাবিতে সরব বিভিন্ন সংগঠন। আদিবাসীদের কিছু সংগঠনের পাল্টা দাবি, মেয়েটির অভিযোগ ঠিক নয়। পুলিশ অবশ্য ওই রাতেই দু’জনকে গ্রেফতার করে। সোমবার তাদের সিউড়ি জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে হাজির করায় পুলিশ। আদালত ১৩ জুন পর্যন্ত অভিযুক্তদের বহরমপুরের একটি হোমে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy