Advertisement
E-Paper

নীতি আয়োগে নেই, টাকা চাইতে দিল্লি যাবেন মমতা

দেশের একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রবিবার দিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছেন। সোমবার তা নিয়ে একটিও বাক্য খরচ না করলেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে দিল্লিতে দরবার করতে যাওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টাকা আদায়ের জন্য দরকার হলে ধর্নায় বসতে পারেন, দিলেন তেমনই ইঙ্গিত। কেন্দ্র টাকা কেটে নেওয়ায় সরকার চালাতে সমস্যায় পড়ছেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই অভিযোগ তুলছেন মুখ্যমন্ত্রী।

রানা সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৫
মাটিতীর্থ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার বর্ধমানে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

মাটিতীর্থ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার বর্ধমানে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

দেশের একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রবিবার দিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছেন। সোমবার তা নিয়ে একটিও বাক্য খরচ না করলেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে দিল্লিতে দরবার করতে যাওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টাকা আদায়ের জন্য দরকার হলে ধর্নায় বসতে পারেন, দিলেন তেমনই ইঙ্গিত।

কেন্দ্র টাকা কেটে নেওয়ায় সরকার চালাতে সমস্যায় পড়ছেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই অভিযোগ তুলছেন মুখ্যমন্ত্রী। সে কারণে ইচ্ছে থাকলেও সরকারি কর্মীদের বেতন বাড়াতে পারছেন না বলেও সম্প্রতি পানাগড়ে মাটি উৎসবে গিয়ে দাবি করেছিলেন তিনি। এ দিন বর্ধমানে ‘মাটিতীর্থ কৃষিকথা’ উৎসবের উদ্বোধন করে তিনি ফের বলেন, “দিল্লি টাকা দেয় না। ১০০ দিনের কাজের জন্য আমাদের পাওনা দেড় হাজার কোটি টাকা। সবাই বড় বড় কথা বলছে, আর কেন্দ্রীয় সরকার ২,৮০০ কোটি টাকা কেটে নিচ্ছে। আগে যারা পাপ করেছিল, তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে আমাদের। কই গুজরাট, দিল্লি, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহারের টাকা তো কাটা হচ্ছে না? রাজ্যের টাকা কেন কাটা হচ্ছে? এর উত্তর চাই।”

এর পরেই তিনি বলেন, “দিল্লিতে দরবার করতে যাব। আমি তো মাটির মানুষ। তাই মাটিতে বসেই এই প্রশ্নের উত্তর চাইব।” তবে নীতি আয়োগের বৈঠকে কেন গেলেন না, তার ব্যাখ্যা মেলেনি মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে।

মমতা মুখে এ কথা বললেও ঘটনা হল, নরেন্দ্র মোদীর সরকার ক্ষমতায় আসার পরে দিল্লিতে উন্নয়নের নীতি নির্ধারণ ও রাজ্যের প্রাপ্য আদায়ের নানা বৈঠকে তিনি গরহাজির থেকেছেন। কয়েকটিতে তাঁর হয়ে হাজির ছিলেন অমিত মিত্র। কিন্তু রবিবার নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের প্রথম বৈঠকে রাজ্য থেকে কেউই যাননি। অথচ, এই বৈঠকেই মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দেশের আর্থিক পরিকল্পনা ও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে মুখ্যমন্ত্রীদের ভূমিকা নেওয়া দরকার। নীতি আয়োগের অধীনে দারিদ্র দূরীকরণ ও কৃষিতে উন্নয়নের জন্য প্রত্যেক রাজ্যে দু’টি করে টাস্কফোর্স তৈরি করতেও মুখ্যমন্ত্রীদের অনুরোধ করেছেন তিনি।

সেই বৈঠকে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর না থাকা ‘বাংলার মানুষের সর্বনাশ’ বলে দাবি বিরোধীদের। এ রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের দাবি, নীতি আয়োগ একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। তাঁর মন্তব্য, “দুঃখের বিষয়, ছাগল-উৎসব (ছাগলের ঘর তৈরির জন্য এ দিন টাকা বিলি করেছেন মমতা) নিয়ে ব্যস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সেখানেই গেলেন না। অথচ, টাকা নেই বলে দাবি করছেন তিনি। সে জন্যই তো স্লোগান উঠেছে, দিদির পায়ে হাওয়াই চটি, ভাইয়েরা সব কোটিপতি।”

মমতার বক্তব্যের অনেকটা অংশ জুড়েই ছিল কেন্দ্রকে আক্রমণ। তাঁর কথায়, “যোজনা কমিশনের স্বপ্ন নেতাজি দেখেছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকার যোজনা কমিশন তুলে দিয়ে নেতাজিকে অপমান করেছে। এই অপমান আমরা মানতে পারব না।” তাঁর অভিযোগ, “আমাদের সঙ্গে এই বঞ্চনা আগে কংগ্রেস করেছে। এখন বিজেপিও করছে। নানা ধরনের কর বসিয়ে কেন্দ্র এই রাজ্য থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা তুলছে। কিন্তু আমাদের তার বদলে দেওয়া হচ্ছে ৮-১০ হাজার কোটি। আমরা চাই, এই কর আদায়ের দায়িত্ব রাজ্যের হাতে দেওয়া হোক। ফেডারেল (যুক্তরাষ্ট্রীয়) কাঠামো মেনে সেই করের টাকা রাজ্যের উন্নয়নে খরচ করতে দেওয়া হোক।” পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের কাজের ফিরিস্তি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন: “আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে সরকারি কর্মচারীদের বেতন, নানা উন্নয়নের কাজ বন্ধ হয়ে যেত। তা যায়নি কারণ, আমি ভূতের মত খাটি। আর সে জন্যই রাজ্যটা চলছে। মাত্র তিন বছরে তেরো বছরের কাজ করেছি।”

কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ শুনে বিরোধীদের প্রশ্ন, রাজ্যের জন্য দাবিদাওয়া আদায়ের কথা রবিবার প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে গিয়েই বলা যেত! সেখানে না গিয়ে মাঠে-ময়দানে বঞ্চনার কাঁদুনি গাওয়া কেন? সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের দুর্ভাগ্য, এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কোন কথা, কোথায় বললে কাজ হয়, সেটা গুলিয়ে ফেলছেন! স্থান-কাল-পাত্র নিয়ে কিছু না ভেবে তিনি শুধু নাটক পছন্দ করেন!” বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “কেন্দ্রের বঞ্চনা, বৈষম্যমূলক আচরণ এ সব শুনতে শুনতে রাজ্যের মানুষ ক্লান্ত।”

rana sengupta niti ayog mati tirtha mamata bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy