টোকাটুকির মোকাবিলায় ভিডিওগ্রাফির বন্দোবস্ত করা হয়েছিল মাধ্যমিকে। উচ্চ মাধ্যমিকে ভিডিওগ্রাফির সঙ্গে সঙ্গে গোপন ক্যামেরা রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। এ ছাড়া নকলের দাবিতে কোথাও যাতে গোলমাল না-হয়, তা নিশ্চিত করতে সব পরীক্ষা কেন্দ্রে পুলিশের পাশাপাশি সংসদের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। এত তোড়জোড় সত্ত্বেও নকল পুরোপুরি বন্ধ হবে কি না, সেই প্রশ্ন এবং সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
সংশয় কেন? এ বারের মাধ্যমিকে মূলত বাইরে থেকে নকল সরবরাহ ঠেকাতেই ভিডিওগ্রাফির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাকে ফাঁকি দিয়েই বহু কেন্দ্রে নকলবাজির নানান সরঞ্জাম দেদার সরবরাহ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কড়া নজরদারির প্রতিবাদে কোনও কোনও পরীক্ষা কেন্দ্রে ভাঙচুরও চালিয়েছে পরীক্ষার্থীরা। তাই উচ্চ মাধ্যমিকে কড়া নজরদারি, ভিডিওগ্রাফি, গোপন ক্যামেরা ইত্যাদির বন্দোবস্ত করে কাজের কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে। শুধু সংশয় নয়, এই সব বন্দোবস্ত নিয়ে প্রশ্নও থাকছে কিছু। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস সোমবার জানান, যে-সব পরীক্ষা কেন্দ্রে টোকাটুকির আশঙ্কা আছে বা যেখানে অতীতে নকলের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে গোপন ক্যামেরার সাহায্যে নজরদারি, ভিডিওগ্রাফি ইত্যাদির দায়িত্বে থাকছে পুলিশ। অথচ রাজ্যের পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, এ-রকম কোনও পুলিশি ব্যবস্থার কথা তাঁদের জানা নেই। জেলা স্তরে এই বিষয়ে কোনও রকম আলোচনা হয়েছে কি না, রাজ্য পুলিশের সদর দফতর ভবানী ভবনে বসে পুলিশকর্তারা তা বলতে পারছেন না। সংসদ-প্রধান এবং পুলিশকর্তাদের বক্তব্যের মধ্যে সামঞ্জস্য কোথায়?
নকলবাজি ঠেকানোর চেষ্টা এবং তা নিয়ে এমন প্রশ্ন ও সংশয়ের মধ্যেই কাল, বুধবার উচ্চ মাধ্যমিক শুরু হচ্ছে। চলবে ২৮ মার্চ পর্যন্ত। পরীক্ষা হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা সওয়া ১টা পর্যন্ত। গত বারের থেকে ৫০ হাজার বেড়ে এ বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা আট লক্ষ দু’হাজার ৩৫৬। এর মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা চার লক্ষ ১৫ হাজার ৬১ এবং ছাত্রী তিন লক্ষ ৮৭ হাজার ২৯৫।
ক’টি পরীক্ষা কেন্দ্রে গোপন ক্যামেরা রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে?
সংসদ-প্রধান মহুয়াদেবী জানান, অতীতের অভিজ্ঞতার নিরিখে সারা রাজ্যে প্রায় ৫০টি পরীক্ষা কেন্দ্রকে টোকাটুকির ব্যাপারে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করে সংসদের তরফে প্রশাসনকে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন বুঝে সেগুলিতে গোপন ক্যামেরা বা ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে। সংসদ সূত্রের খবর, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও দার্জিলিং ছাড়া সব জেলাতেই স্পর্শকাতর কেন্দ্র আছে। মালদহে এমন কেন্দ্র সব থেকে বেশি। তার পরেই আছে কলকাতা। মহুয়াদেবী বলেন, “এ বারের মাধ্যমিকেও আমরা দেখলাম, কিছু কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। অল্প বয়সের উত্তেজনায় অনেক সময় ছাত্রছাত্রীরা এমন কাজ করে ফেলে। কিন্তু এ ভাবে বিঘ্ন ঘটালে কড়া শাস্তি দেওয়া হবে।”
মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেছিলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে কড়া নজরদারির সঙ্গে সঙ্গে বাইরে থেকে নকল সরবরাহ বন্ধ করতে প্রশাসনের তরফে ভিডিওগ্রাফির ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু তাতেও গোলমাল ঠেকানো যায়নি। একই রকম পদক্ষেপ করে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ নকল বন্ধ করা যাবে বলে দাবি করছে কী ভাবে?
মহুয়াদেবী বলেন, “পাঁচিলে চড়ে, পাইপ বা গাছ বেয়ে উঠে সিনেমাও দেখে অনেকে। সেটা আটকানো যায় না। কিন্তু ওই ভাবে বাইরে থেকে নকলের সরঞ্জাম ছুড়ে দিলেই টুকলি হয়েছে বলে মানতে রাজি নই আমি। যে-পরীক্ষার্থীর উদ্দেশে সেটা দেওয়া হল, সে তা পেল কি না, শিক্ষকের নজর এড়িয়ে টুকতে পারল কি না, সেগুলোও তো দেখতে হবে!”
সংসদ জানিয়েছে, কোনও পরীক্ষার্থীই মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন না। যে-সব শিক্ষক-শিক্ষিকা নজরদারি চালাবেন, তাঁদেরও নিজের নিজের ফোন জমা রাখতে হবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা সংসদের প্রতিনিধিদের কাছে। নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠু পরীক্ষা পরিচালনার স্বার্থেই এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান সংসদের সচিব সুব্রত ঘোষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy