গ্রামাঞ্চলে মাথায় ছাদের ব্যবস্থা করার কাজ শুরু হয়েছিল কিছু দিন আগেই। এ বার বিভিন্ন পুরসভার নির্বাচনের মুখে রাজ্য জুড়ে শহরাঞ্চলের গরিব পরিবারকে ‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’ প্রকল্পে ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা ঘোষণা করল রাজ্য সরকার।
নবান্নের খবর, যে-সব পরিবারের বার্ষিক আয় এক লক্ষ টাকার কম, তাদেরই এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। ৯৯ বছরের লিজের ভিত্তিতে ফ্ল্যাট পাবে তারা। একই পরিবারের মধ্যে নাম পরিবর্তন হলেও ওই ফ্ল্যাট বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না। সরকার ঠিক করেছে, প্রকল্প রূপায়ণের জন্য পাঁচতলা আবাসন তৈরি করা হবে। তাতে প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ২৭০ বর্গফুটের মতো।
কিন্তু গরিব পরিবার চিহ্নিত করা হবে কোন কোন মাপকাঠিতে?
পুর দফতরের এক কর্তা জানান, যে-সব পরিবার রাজ্যের বিভিন্ন শহরে সরকারি জমি জবরদখল করে বসবাস করছে, তারাই এই প্রকল্পের আওতায় আসবে। আর প্রকল্পের জন্য তাদের জবরদখল জমিই চিহ্নিত করা হবে। ফ্ল্যাট পাবে তারাই, যারা ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারির আগে সংশ্লিষ্ট জমিতে বসবাস করছে। অর্থাৎ তার পরে যারা বসবাস শুরু করেছে, তাদের পারিবারিক রোজগার বছরে এক লক্ষ টাকার কম হলেও তারা এই প্রকল্পে ফ্ল্যাট পাবে না।
নবান্ন সূত্রের খবর, গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রতিটি কর্পোরেশন ও পুর এলাকার জন্য পৃথক পৃথক জমি বণ্টন কমিটি গড়া হবে। কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে কমিটির শীর্ষে থাকবেন মেয়র। আর পুরসভার ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান। এ ছাড়াও ওই সব কমিটিতে থাকবেন স্থানীয় প্রশাসন, ভূমি সংস্কার, রেজিস্ট্রেশন বিভাগের প্রতিনিধিরা।
ঠিক হয়েছে, প্রকল্পের প্রথম ধাপে কর্পোরেশন ও পুরসভাগুলি জমি চিহ্নিত করে তার তালিকা রাজ্যের পুর দফতরের কাছে পাঠিয়ে দেবে। দফতর সেই তালিকা অনুমোদন করলে কর্পোরেশন ও পুরসভাগুলি উপভোক্তাদের নামের তালিকা তৈরি করে তা পাঠাবে জমি বণ্টন কমিটির কাছে। কমিটি পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। তার পরেই শুরু হয়ে যাবে আবাসন নির্মাণের কাজ।
‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’ প্রকল্পটি বাম আমলের। তবে আগের সরকার সেই প্রকল্প রূপায়ণে বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন সরকার গত সাড়ে তিন বছরে গ্রামাঞ্চলে প্রায় পৌনে দু’লক্ষ পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতায় এনেছে বলে দাবি নবান্নের। তবে খরচের অনেকটাই এসেছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক মুখপাত্র জানান, এই প্রকল্পে গ্রামে প্রতিটি পরিবারকে সর্বাধিক তিন কাঠা জমি দেওয়া হয়। আর সেই জমিতে বাড়ি তৈরি করার জন্য অনুদান দেওয়া হয় ৭০ হাজার টাকা।
শহরাঞ্চলের গরিব পরিবার অবশ্য এই প্রকল্পে জমি পাবে না। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, গ্রামাঞ্চলে সরকারের হাতে থাকা খাস জমির পরিমাণ অনেক বেশি। তা সত্ত্বেও প্রায় ২০ শতাংশ জমি কিনতে হয়েছে। কিন্তু শহরে জমিরই অভাব। উপরন্তু বিভিন্ন দফতরের হাতে থাকা এমন অনেক ফাঁকা জমি জবরদখল হয়ে গিয়েছে, যেখানে কোনও সরকারি প্রকল্প রূপায়ণ করার কথা। সেই সব জমি নেওয়া যাবে না। তাই একই প্রকল্পে গ্রামে জমি দেওয়া হলেও শহরে মিলবে ফ্ল্যাট।
কিন্তু শহরাঞ্চলে এই প্রকল্প রূপায়ণের কাজ শুরু হবে কবে?
“এটা হাত দেখেও বলা সম্ভব নয়,” রসিকতা সরকারি মুখপাত্রের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy