বহু বছর পরে এলাকায় ফিরেই হুমকি পেতে শুরু করেছিলেন। প্রাণের ভয়ে দু’দিনেও তিনি থানায় গিয়ে অভিযোগ জানানোর সাহস পাননি। কার্যত গৃহবন্দি হয়েই দিন কাটছে লাভপুরে নিহত তিন সিপিএম সমর্থক ভাইয়ের মা জরিনা বিবির। শেষমেশ মঙ্গলবার লাভপুর থানায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে পরিবারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করলেন তাঁর এক নাতি ফিরোজ শেখ। তাতে অবশ্য লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের নাম নেই।
পরিবারের দাবি, এ দিনের অভিযুক্তদের প্রত্যেকেই ওই তিন ভাইয়ের খুনেও জড়িত। খুনের ঘটনায় দায়ের হওয়া এফআইআর-এ নাম থাকলেও শাসক দলের কর্মী হওয়ায় পুলিশ তাঁদের কোনও দিনই ধরেনি। বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
২০১০ সালের ৪ জুন লাভপুরের নবগ্রামে মনিরুল ইসলামের বাড়িতে এক সালিশি সভায় জাকের আলি, কোটন শেখ এবং ঔসুদ্দিন শেখ নামে তিন সিপিএম সমর্থক ভাই খুন হন। ওই হত্যাকাণ্ডে তৃণমূলের তৎকালীন জেলা সহ-সভাপতি মনিরুল-সহ ৫১ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। জরিনা বিবিদের দাবি, পরিবারের দুই সদস্যকে অপহরণ করে আদালতে লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুলকে ‘নির্দোষ’ হিসেবে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়। জবানবন্দিতে নাম নেই, এই যুক্তি দেখিয়ে পুলিশ মনিরুলের নাম চার্জশিট থেকে বাদও দিয়েছে। যদিও ইতিমধ্যেই পরিবারটি পুরনো জবানবন্দি প্রত্যাহার করে নতুন করে তা নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে হলফনামা জমা দিয়েছে।
পরিবারটি জানিয়েছে, গত বুধবার লাভপুরে ছেলে মজল শেখের বাড়িতে ফিরতেই জরিনা বিবিদের হুমকি দেওয়া শুরু হয়। সানোয়ারের ছেলে ফিরোজ বলেন, “এলাকায় দাপিয়ে বেড়ালেও কাকাদের খুনে অভিযুক্ত মনিরুলের অনুগামী যাদব শেখ-সহ আরও কয়েক জনকে পুলিশ আজও ধরেনি। ওরাই পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমে মুখ খুললে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। মামলা প্রত্যাহার করে না নিলে আমাদেরও একই অবস্থা হবে বলেও শাসাচ্ছে।” যাদবরা এলাকায় মনিরুলের অনুগামী হিসেবে পরিচিত হলেও হুমকির ঘটনায় পরিবারটি বিধায়কের নাম নেয়নি। কোনও কি চাপ ছিল? ফিরোজের দাবি, “মনিরুলকে তো হুমকি দিতে দেখিনি। তাই ওর নাম নিইনি।” হুমকির ঘটনায় অভিযুক্তদের সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি।
থানায় পৌঁছতে পারলেও তাতে কোনও সুরাহা দেখছেন না জরিনা বিবি। বৃদ্ধার ক্ষোভ, “নাতি অভিযোগ জমা দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু যে পুলিশ চার্জশিট থেকেই মনিরুলের নাম বাদ দেয়, তাদের দেখে ভরসা হয় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy