Advertisement
E-Paper

পুলিশের শান্তি বৈঠকেই বসে অভিযুক্তেরা, বিতর্ক

সংঘর্ষে রক্ত ঝরেছে এলাকার সাত গ্রামে। ইতিমধ্যেই দু’পক্ষের ছ’জন খুন হয়েছেন। খুচখাচ গণ্ডগোল লেগেই রয়েছে। তপ্ত সেই পাড়ুই থানা এলাকায় শান্তি ফেরাতে শুক্রবার যে সর্বদল বৈঠক করল পুলিশ, তাতেও হাজির রইলেন খুন ও রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযুক্ত শাসকদলের তিন নেতা! পুলিশ তাঁদের ধরেনি।

মহেন্দ্র জেনা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৯
বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসছেন মাখড়া-কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শেখ মুস্তফা (বাঁ দিকে)। পাশে ইমাদপুর-কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা মুস্তাক হোসেন (সাদা পাঞ্জাবি) ও নুরুল ইসলাম (একেবারে ডান দিকে)।  ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসছেন মাখড়া-কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শেখ মুস্তফা (বাঁ দিকে)। পাশে ইমাদপুর-কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা মুস্তাক হোসেন (সাদা পাঞ্জাবি) ও নুরুল ইসলাম (একেবারে ডান দিকে)। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

সংঘর্ষে রক্ত ঝরেছে এলাকার সাত গ্রামে। ইতিমধ্যেই দু’পক্ষের ছ’জন খুন হয়েছেন। খুচখাচ গণ্ডগোল লেগেই রয়েছে। তপ্ত সেই পাড়ুই থানা এলাকায় শান্তি ফেরাতে শুক্রবার যে সর্বদল বৈঠক করল পুলিশ, তাতেও হাজির রইলেন খুন ও রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযুক্ত শাসকদলের তিন নেতা! পুলিশ তাঁদের ধরেনি। কেন অভিযুক্তেরা বৈঠকে হাজির, সে প্রশ্ন তুলে পাড়ুই থানায় বৈঠক শেষ হওয়ার আগে একে একে বেরিয়ে যান জেলার সিপিএম ও বিজেপি নেতারা। ভেস্তে যায় বৈঠক। বাধে বিতর্ক।

জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া অবশ্য সে বিতর্কে দাঁড়ি টানেননি। তিনি এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে জেলা পুলিশের এক কর্তার মন্তব্য, “অভিযুক্ত হলেই তাঁকে ধরতে হবে, এটা ঠিক নয়। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই তদন্ত চলছে। তদন্তে কী পাওয়া গেল, তা দেখে তবে তো গ্রেফতার করার প্রশ্ন উঠবে।”

বিতর্ক তৈরি হয়েছে যে তিন জনের উপস্থিতি নিয়ে তাঁরা হলেনতৃণমূলের পাড়ুই থানা কমিটির চেয়ারম্যান মুস্তাক হোসেন, সিউড়ি ২ ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলাম এবং সাত্তোর অঞ্চল সম্পাদক শেখ মুস্তফা। এঁদের মধ্যে মুস্তাক ও নুরুল ইমাদপুরে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলায় অভিযুক্ত। আর মুস্তফার বিরুদ্ধে পাড়ুইয়ের কসবা পঞ্চায়েতের নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষকে হত্যা এবং মাখড়ায় বিজেপি সমর্থক শেখ তৌসিফ আলিকে খুনের অভিযোগ রয়েছে। এ দিনের দু’ঘণ্টার শান্তি-বৈঠকে আগাগোড়া হাজির ছিলেন তাঁরা।

লোকসভা ভোটের পর থেকেই রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়েছে ইলামবাজার ব্লকের পাড়ুই ও লাগোয়া এলাকা। ভোটের পরেই কানুর গ্রামে এক বিজেপি কর্মীর খুনের পর থেকে বিভিন্ন গ্রামে তৃণমূল-বিজেপি-র সংঘর্ষ লেগে রয়েছে। গত ২৪ অক্টোবর চৌমণ্ডলপুরে বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্ত হন পাড়ুই থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত। ২৭ অক্টোবর মাখড়া গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষে তিন জনের প্রাণ গিয়েছে। দিন কয়েক আগে শিরশিট্টা গ্রামে সংঘর্ষের পরে খুন হয় বিজেপি সমর্থক এক কিশোর। এত কিছুর পরেও এলাকার বেআইনি অস্ত্র ভাণ্ডার নষ্ট করতে পুলিশ সফল হয়নি। উল্টে পুলিশের নাকের ডগায় দু’দলের আশ্রিত সমাজবিরোধীরা বোমা-বন্দুক-মাস্কেট নিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ।

এই পরিস্থিতিতেই জেলা পুলিশের উদ্যোগে এ দিন ডাকা হয়েছিল শান্তি বৈঠক। পুলিশের দাবি, তাতে সব রাজনৈতিক দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে কংগ্রেসের ক্ষোভ, বৈঠকে তাদের ডাকা হয়নি। বেলা ১১টা নাগাদ সিআই (বোলপুর) চন্দ্রশেখর দাস এবং পাড়ুইয়ের নতুন ওসি অমরজিৎ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে বৈঠক শুরু হয়। উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ভরত পাল, তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় এবং বিজেপি-র জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। বৈঠক এক ঘণ্টা গড়াতেই বেরিয়ে যায় সিপিএমের প্রতিনিধি দল। ভরতবাবু বলেন, “অভিযুক্তদের নিয়ে পুলিশ শান্তি বৈঠক করছে। আমাদের কথা শুনছে না। এই বৈঠকের ফল কী হবে, বুঝতে পারছি!”

পুলিশ সূত্রের খবর, এর পরেই বিজেপি-র প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পুলিশ ও তৃণমূল নেতাদের জোর বিতণ্ডা শুরু হয়। দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার করার দাবিতে অনড় থাকে বিজেপি। পুলিশ দাবি করে, ঘটনায় জড়িতদেরই ধরা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে তৃণমূল কর্মীরাই সংখ্যায় বেশি। এই সময় তৃণমূল দাবি করে, বিজেপি প্রতিহিংসার বশে কোনও কিছু ঘটলেই মুস্তাক বা মুস্তফাদের মতো তৃণমূল নেতাদের নাম এফআইআরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ফের তর্ক বাধে। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আগেই দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ বিজেপি নেতারা বেরিয়ে যান।

বিজেপি-র জেলা সভাপতির বক্তব্য, “এলাকায় শান্তিরক্ষার স্বার্থে আমরা হামলা-খুনে অভিযুক্তদের উপস্থিতি সত্ত্বেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। পরে বুঝলাম, পুলিশও আসলে শাসক দলের সুরেই কথা বলছে। এই শান্তি বৈঠক হচ্ছে অভিযুক্তদের আড়াল করতে। অভিযুক্তদের নিয়ে হওয়া বৈঠকে আমাদের পক্ষে থাকা সম্ভব হয়নি।”

হামলা-খুনে অভিযুক্ত তিন তৃণমূল নেতাই দাবি করেছেন, “রাজনৈতিক কারণে আমাদের নাম বিভিন্ন অভিযোগে জড়ানো হয়েছে। আমরা জড়িত বলে তদন্তে প্রমাণ মিললে, পুলিশ নিশ্চয়ই আমাদের ধরত।” তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয়বাবুর অভিযোগ, এলাকায় শান্তি ফেরাতে আগ্রহী নয় বলেই বিজেপি বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। এর পরেও পুলিশ সুপার দাবি করেছেন, “বৈঠক সফল। কারণ, তাতে সামিল হওয়া রাজনৈতিক দলগুলি এলাকায় শান্তি রক্ষা করতে পুলিশ-প্রশাসনকে সব রকমের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।” মাখড়ায় নিহত শেখ তৌসিফ আলির বাবা শওকত আলির হতাশা, “যারা অশান্তি করল, বৈঠকে যদি তারাই হাজির থাকে, তা হলে শান্তি আসবে কী করে?”

parui bjp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy