Advertisement
E-Paper

পুলিশকর্তাদের নামে এ বার এফআইআর

পাড়ুই থানায় আগেই অভিযোগ হয়েছিল। এ বার বর্ধমানের বুদবুদ থানাতেও পাড়ুইয়ের বধূকে নির্যাতনের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ হল। তবে, বুধবার বুদবুদ থানায় বধূর মায়ের করা এফআইআরে বীরভূমের একাধিক পুলিশ অফিসার ও কর্মীর নামে অভিযোগ হয়েছে। যা হয়নি পাড়ুই থানার অভিযোগে। ঘটনার পরে বুদবুদ থানার এক অফিসার টাকা দিয়ে বিষয়টি মেটানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলেও বধূর মা অভিযোগ করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২১
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন পাড়ুইয়ের নির্যাতিতা মহিলা। ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন পাড়ুইয়ের নির্যাতিতা মহিলা। ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ।

পাড়ুই থানায় আগেই অভিযোগ হয়েছিল। এ বার বর্ধমানের বুদবুদ থানাতেও পাড়ুইয়ের বধূকে নির্যাতনের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ হল। তবে, বুধবার বুদবুদ থানায় বধূর মায়ের করা এফআইআরে বীরভূমের একাধিক পুলিশ অফিসার ও কর্মীর নামে অভিযোগ হয়েছে। যা হয়নি পাড়ুই থানার অভিযোগে। ঘটনার পরে বুদবুদ থানার এক অফিসার টাকা দিয়ে বিষয়টি মেটানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলেও বধূর মা অভিযোগ করেছেন।

এ দিন বুদবুদ থানায় মেয়ের উপরে পুলিশি অত্যাচার, শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিত বধূর মা। মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়ে থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। কলমডাঙার পাশের গ্রামে তাঁদের আত্মীয়কেও ঘটনার দিন পুলিশ মারধর করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন নির্যাতিতার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

বধূর স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে একটি মামলা রুজু করেছে বীরভূমের পাড়ুই থানা। তবে, সেই অভিযোগে কারও নাম ছিল না। ঘটনায় পুলিশ যে সব ধারা দিয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একটি বাদে সেই সব ধারার প্রতিটিই জামিনযোগ্য। মঙ্গলবারই নির্যাতিতার পরিবার প্রশ্ন তুলেছিল, মহিলার উপরে এমন আক্রমণের পরেও পুলিশ কেন ‘লঘু’ ধারা দিল? ঘটনায় পুলিশ এবং শাসকদলের কর্মীরা অভিযুক্ত হওয়াতেই এমনটা হল বলে তাঁদের দাবি। বুদবুদ থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগের ক্ষেত্রে কী হবে? বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “বুদবুদে জমা পড়া অভিযোগপত্রটি পাড়ুই থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

সোমবারই রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করে পাড়ুইয়ের ঘটনা সম্পর্কে তাঁকে বিশদে জানিয়েছিল বিজেপির প্রতিনিধিদল। এর পরেই রাজ্যপাল জিএমপি রেড্ডিকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন বলে দাবি বিজেপির। স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের করেছে কলকাতা হাইকোর্টও। তদন্তে পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষও প্রকাশ করেছে আদালত। ঘটনার তদন্ত চেয়ে জাতীয় মহিলা কমিশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য বিজেপি। ২৩ জানুয়ারি রাজ্যে আসছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। চাপের মুখে পড়ে অভিযুক্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও ব্যবস্থা নিয়েছে বীরভূম পুলিশ। বুধবারই নবান্নে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র সঙ্গে দেখা করেন বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। কী নিয়ে আলোচনা হয়, সে ব্যাপারে তাঁরা কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে, পাড়ুইয়ের ঘটনা নিয়েই বৈঠক হয় বলে নানা মহলের অনুমান।

এ দিন দুপুরে স্থানীয় বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বুদবুদ থানায় যান ওই বধূর বাবা-মা। লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, গত শনিবার বিকেলে বীরভূম পুলিশের যে দলটি তাঁদের বাড়িতে হানা দেয়, তাতে ছিলেন বোলপুরের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ, স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের (এসওজি) ওসি কার্তিকমোহন ঘোষ, পাড়ুই থানার ওসি অমরজিৎ বিশ্বাস, ইলামবাজার থানার ওসি মহম্মদ আলি, এসওজি-র দুই কনস্টেবল কাশীনাথ দাস ও দীপক বাড়ুই এবং ডি পি পাত্র নামে বুদবুদ থানার এক অফিসার। এলাকার ও বীরভূম জেলার তৃণমূল নেতা-কর্মীও পুলিশের সঙ্গে ছিলেন।

মহিলার অভিযোগ, তাঁর মেয়েকে বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি করা হয়। এমনকী ধর্ষণও করা হয়ে থাকতে পারে। মেয়ে ফেরার পরে তাঁরা দেখেন, তাঁর হাতের আঙুল ভাঙা, শিরা কাটা, শরীরে বিছুটি পাতা ঘষে দেওয়া হয়েছে। আরও অভিযোগ, রবিবার দুপুরে বুদবুদ থানার অফিসার ডি পি পাত্র তাঁদের বাড়ি গিয়ে মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেন। নির্যাতিতার মায়ের কথায়, “ওই পুলিশ আধিকারিক একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে যান। তবে আমরা যোগাযোগ করিনি।” সেই নম্বরে এ দিন বারবার ফোন করা হলেও কেউ ধরেনি। বুদবুদ থানা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ওই রাতে তাদের কেউ বীরভূম পুলিশের সঙ্গে ছিল না। টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগও ঠিক নয়। এমনকী, ডি পি পাত্র নামে কোনও অফিসার বা কর্মীও এই থানায় নেই।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিনও অভিযোগ করেন, এই ঘটনায় জড়িত পুলিশকর্মীদের আড়াল করতে চাইছে রাজ্য প্রশাসন। তিনি দাবি করেন, “তৃণমূলের তরফে ১৫ লক্ষ টাকা ও চাকরির লোভ দেখানো হয়েছে। কিন্তু ওই মহিলা কোনও অবস্থাতেই মামলা প্রত্যাহার করবেন না। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।”

তৃণমূল অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) সম্পাদক তথা জেলা পরিষদ সদস্য দেবদাস বক্সীর বক্তব্য, “পুলিশের অভিযানে আমাদের দলের কারও থাকার প্রশ্নই নেই। দলের তরফে টাকা বা চাকরির লোভ দেখানোর কথাও ঠিক নয়।”

parui torture housewife police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy