পুষ্পেন্দু ঘোষের বাড়িতে তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বালিতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
ছেলের মুক্তির খবরটা সোমবার রাতেই এসে পৌঁছেছে হাওড়ার বাড়িতে। তবে তাতে উৎকণ্ঠা কমেনি। পড়শি মহাদেশ থেকে ছেলের গলার আওয়াজটা এক বার শোনার জন্য আনচান করছিলেন বাবা-মা। অবশেষে রাত সওয়া বারোটা নাগাদ ছেলের ফোন পেয়ে হাসি ফিরল বালির পঞ্চাননতলার তিনতলা বাড়িটায়। ততক্ষণে অবশ্য সে বাড়িতে শুরু হয়ে গিয়েছে পড়শি-আত্মীয়-বন্ধু-সংবাদমাধ্যমের আনাগোনা।
সিডনির লিন্ড চকোলেট কাফেতে জঙ্গি হামলায় ইনফোসিসের তথ্য প্রযুক্তি কর্মী পুষ্পেন্দু ঘোষের পণবন্দি হওয়ার খবরটা অফিসেরই এক প্রতিনিধি ফোন করে জানিয়েছিল। তার পর এক মুহূর্তের জন্যও টিভির পর্দা থেকে চোখ সরেনি পরিবারের। রাতেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, সহকর্মী বিশ্বকান্ত অঙ্কিতরেড্ডির সঙ্গে পুষ্পেন্দুকেও নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেরে হাওড়াতেও।
পুষ্পেন্দুর মা স্মৃতিকণাদেবী মঙ্গলবার জানালেন, দেশ বিদেশের যে ঘটনা এত দিন টিভির পর্দায় দেখে এসেছেন, তা যে এক দিন নিজের ছেলের সঙ্গেই ঘটবে তা স্বপ্নেও ভাবেননি। জানালেন, খারাপ খবরটা পেয়েই মনে মনে মানত করেছিলেন। সেই মতো এ দিন পুজোও দিয়েছেন গৃহদেবতার কাছে। তিনি বলেন, “সারা দিন টিভি দেখেছি আর গুরুর নাম জপ করেছি। এ বার এক দিন সত্যনারায়ণের পুজো দেব।” বাড়িতে সংবাদমাধ্যমের আনাগোনায় খানিকটা বিরক্ত পুষ্পেন্দুর বাবা পুষ্পল ঘোষ। পুষ্পলবাবু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। বাড়িতে ক্যামেরার ফ্লাশের ঝলকানিতে বিরক্ত হয়ে বললেন, “আমার ছেলে কি নোবেল পেয়েছে নাকি!” জানালেন, সোমবার সারা দিন ছেলের কোনও খবর না পেয়ে পুষ্পলবাবুকে সিডনি চলে যাওয়ার জন্য জোর করেছিলেন স্মৃতিকণাদেবী। ইচ্ছে থাকলেও উপায় তো ছিল না!
সোমবার রাতে এক বন্ধুর ফোন থেকে সুস্থ থাকার খবরটা বাড়িতে জানিয়েছিলেন পুষ্পেন্দু। তবে ভাল করে কথা হল মঙ্গলবার। ফোনের ওপার থেকে মায়ের সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন। কাফে থেকে বেরিয়ে আসার পর মাটিতে শুয়ে পড়েছিলেন কেন? কোথাও চোট লেগেছে কি না? শরীর খারাপ হয়েছে কি না মায়ের যাবতীয় চিন্তা হাসিমুখে নির্মূল করলেন ছেলে।
এ দিন সকাল থেকে পুষ্পেন্দুর বাড়িতে ভিড় করলেন রাজ্যের নেতা মন্ত্রীরাও। বার্তা এল মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকেও। প্রথমে শোনা যায়, পুষ্পেন্দুর বাড়িতে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে রাজ্য সরকার। খানিক ক্ষণের মধ্যেই খবর আসে, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও আসছেন।
বেলা গড়াতেই বালির ঘোষবাড়িতে পা রাখলেন স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর মহাদেব কর্মকার, প্রাক্তন বিধায়ক কণিকা গঙ্গোপাধ্যায় এবং চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁদের কথা বলা শেষ হতে না হতেই হাজির তৃণমূল বিধায়ক সুলতান সিংহ। এলেন সিপিএম চেয়ারম্যান অরুণাভ লাহিড়ীও। নিজে না এলেও পুষ্পলবাবুর সঙ্গে ফোনে বেশ খানিকক্ষণ কথা বললেন সূর্যকান্ত মিশ্র। জানালেন, বিশেষ কাজ পড়ে যাওয়ায় আসতে পারছেন না।
নেতাদের দেখা সাক্ষাতের পর পরই পুষ্পেন্দুর বাড়িতে আসেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। পুষ্পলবাবু ও স্মৃতিকণাদেবীর মাঝে বসে মন্ত্রী জানান, তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি হয়ে এসেছেন। তাঁর আশ্বাস, পুষ্পেন্দু ও তাঁর পরিবার চাইলে ইনফোসিসের কলকাতা অফিসে তাঁর বদলির ব্যবস্থা করতে মন্ত্রী অমিত মিত্রর মাধ্যমে ইনফোসিসের সিইও-র সঙ্গে কথাও বলা যেতে পারে। আশ্বাসে খুশি পুষ্পলবাবু ও স্মৃতিকণাদেবীর সহাস্য উত্তর, “আপনি এসেছেন বলে ভাল লাগল। প্রয়োজনে নিশ্চয়ই বলব।”
কথা শেষ করে ভিজিটিং কার্ডে ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটা লিখে পুষ্পলবাবুকে দেন সেচমন্ত্রী। বললেন, “দরকার হলেই জাস্ট একটা ফোন করবেন।” মন্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংবাদমাধ্যমের প্রস্থানের পথও দেখিয়ে দিলেন পুষ্পলবাবু। হাসিমুখে বললেন, “এ বার আমরা মুক্ত তো!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy