Advertisement
E-Paper

পঞ্চাশ হাজার সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যে বারো জেলায় প্রচার নামল এবিভিপি

লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপি-র ভোট বৃদ্ধি ইতিমধ্যেই কপালে ভাঁজ ফেলেছে তৃণমূল ও সিপিএমের। এ বার অনুকূল হাওয়ার ফায়দা নিতে আসরে নেমেছে বিজেপি-প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। জুলাই ও অগস্ট মিলিয়ে এ রাজ্য ৫০ হাজার সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সংগঠন। বিদ্যার্থী পরিষদ নেতাদের দাবি, ইতিমধ্যে সেই লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক পূরণ করে ফেলেছেন তাঁরা।

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৪৬

লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপি-র ভোট বৃদ্ধি ইতিমধ্যেই কপালে ভাঁজ ফেলেছে তৃণমূল ও সিপিএমের। এ বার অনুকূল হাওয়ার ফায়দা নিতে আসরে নেমেছে বিজেপি-প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। জুলাই ও অগস্ট মিলিয়ে এ রাজ্য ৫০ হাজার সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সংগঠন। বিদ্যার্থী পরিষদ নেতাদের দাবি, ইতিমধ্যে সেই লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক পূরণ করে ফেলেছেন তাঁরা।

বিদ্যার্থী পরিষদের পশ্চিমবঙ্গ শাখা সংগঠন সম্পাদক কিশোর বমন জানান, এখন পর্যন্ত ২০ হাজার নতুন সদস্য তাঁদের সংগঠনে যোগ দিয়েছেন। কিশোরবাবু বলেন, “কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার -সহ ১২টি জেলায় জেলা সম্মেলন অথবা ওয়ার্কশপ আয়োজিত হয়েছে।” বাকি জেলাগুলিতেও খুব শীঘ্রই ছাত্র সম্মেলন করা হবে। নভেম্বরে পঞ্জাবের অমৃতসরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে বাংলার নানা কলেজ থেকে ১০০ প্রতিনিধির যোগ দেওয়ার কথা।

পরিষদ সূত্রে খবর, কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সন্ত্রাস বন্ধ, অনলাইন ভর্তি চালু করা, ভর্তির নামে তোলাবাজি বন্ধের মতো কয়েকটি দাবিকে সামনে রেখেই তারা সদস্য সংগ্রহে নেমেছে। রাজ্যে পরিবর্তনের আগে টিএমসিপি করতেন, এ রকম অনেক ছাত্রনেতা বিদ্যার্থী পরিষদে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন বলেও দাবি করেছে এই সংগঠন। তেমন উদাহরণও রয়েছে। কলকাতার গড়িয়ার দীনবন্ধু অ্যান্ডুজ কলেজের বি কম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অর্কসারথি ঘোষ আগে সক্রিয় টিএমসিপি কর্মী ছিলেন। কিন্তু লোকসভা ভোটের পরে অর্ক-সহ কয়েক জন টিমসিপি কর্মী যোগ দিয়েছেন বিদ্যার্থী পরিষদে। অর্কের কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভাল লাগত। তাই টিএমসিপি করতাম। কিন্তু পরে বুঝলাম সিপিএম যে কায়দায় অত্যাচার করত, তৃণমূল তা-ই করছে! ছাত্রদের কোনও ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই। এসএফআইকে সহ্য করতে পারি না। তাই টিএমসিপি ছেড়ে এবিভিপিতে এসেছি।” এ ভাবেই অল্প হলেও কলেজ রাজনীতিতে দলবদল শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, বিজেপি-ও রাজ্যে তাদের নিজস্ব ছাত্র ও শিক্ষাকর্মী সংগঠন তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে।

এবিভিপি-র হাওড়া জেলা কমিটির সম্পাদক সুদীপ দেবনাথ বলেন, “দু’মাসের সদস্য সংগ্রহ অভিযানে হাওড়ায় এখনও পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি নতুন সদস্য হয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮০০।” বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজ তো বটেই, বেসরকারি কলেজ ও স্কুলেও তাঁদের সংগঠন তৈরি হয়েছে বলে দাবি করে সুদীপবাবু জানান, ধুলাগোড়ি ও উলুবেড়িয়ায় দু’টি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে তাদের ছাত্র সংগঠন তৈরি হয়েছে। হাওড়া জেলা এবিভিপির দাবি, সব ঠিক থাকলে ডোমজুড় আজাদ হিন্দ কলেজ, হাওড়া গালর্স কলেজ, নরসিংহ দত্ত কলেজ-সহ এই জেলার বেশ কয়েকটি কলেজে পুজোর আগেই ইউনিট খোলা হবে। যদিও হাওড়া জেলায় এবিভিপি-র এই দাবিকে গুরুত্ব দিতে রাজি নয় টিএমসিপি। হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) টিমসিপি সভাপতি তুষারকান্তি ঘোষ বলেন, “হাওড়ার ছাত্রছাত্রীরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি মেনে নেবেন না।” তাঁর দাবি, আগে যাঁরা এসএফআই করতেন, তাঁদেরই একাংশ এখন এবিভিপি করছেন। এসএফআইয়ে হাওড়া জেলা সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষের (টকাই) পাল্টা দাবি, “এসএফআই কর্মীরা আদর্শে বিশ্বাস করেন। তাঁরা ক্ষমতার জন্য সংগঠন বদল করেন না। বিক্ষুদ্ধ টিএমসিপি কর্মীরাই এবিভিপিকে মদত দিচ্ছেন।”

শুধু হাওড়া নয়, দক্ষিবঙ্গের নানা জেলাতেই এবিভিপি-র সদস্য হচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। এবিভিপি-র হুগলি জেলা কমিটির কর্তা অরবিন্দ নন্দীর দাবি, জেলার ৩৭টি কলেজের মধ্যে ১৭টি কলেজে তাদের সংগঠন তৈরি হয়েছে। অরবিন্দবাবু বলেন, “আপাতত জেলায় ৭০০ জন নতুন সদস্য হয়েছেন। এই সংখ্যা ১,৫০০ ছাড়িয়ে যাবে।” অগস্টের শেষ দিকে সংগঠনের জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে বিদ্যার্থী পরিষদের এই দাবিকে আমল দিতে চায়নি এসএফআই, টিএমসিপি। এসএফআইয়ের হুগলি জেলা সম্পাদক পার্থ দাস বলেন, “আমাদের সংগঠনের বদ রক্ত ২০১১ সালের পরেই বেরিয়ে গিয়েছে। লোকসভার পরে আমাদের জেলা এসএফআই থেকে এক জনও অন্য সংগঠনে যায়নি।” তবে একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেছেন, জেলার কয়েকটি কলেজে এবিভিপির পতাকা ও পোস্টার দেখা যাচ্ছে।

উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার কয়েকটি কলেজেও ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে দক্ষিণপন্থী এই ছাত্র সংগঠন। বারাসত কলেজ, জয়নগর কলেজ, জামতলা কলেজ, সন্দেশখালির পাঠানখালি কলেজ, রায়দিঘী কলেজের মত কয়েকটি কলেজে ইউনিট তৈরি করা গিয়েছে বলে দাবি করেছে বিদ্যার্থী পরিষদের রাজ্য নেতৃত্ব। এবিভিপি-র দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ইউনিটের নেতা বাপি মাঝির দাবি, শুধু জুলাই মাসেই দু’হাজার ছাত্র-ছাত্রী নাম লিখিয়েছেন তাঁদের সংগঠনে। বিদ্যার্থী পরিষদের সঙ্গেই বিজেপি-র যুব সংগঠন যুব মোর্চারও সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলছে। যুব মোর্চার ব্যারাকপুর মণ্ডলের সভাপতি সর্বেশ্বর প্রধান জানান, যে সব কলেজে বিদ্যার্থী পরিষদের সংগঠন নেই, সেখানে যুব মোর্চার কর্মীরাই কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আদর্শ প্রচার করবেন।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা এবিভিপি-র উত্থান নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “এ নিয়ে কিছু বলব না।” তবে টিএমসিপি-র এক শীর্ষ নেতা জানান, কলকাতা লাগোয়া নানা কলেজে এবিভিপির সদস্য সংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে, তার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন কলেজে টিএমসিপি-রও নতুন সদস্য বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসের বক্তব্য, “বিদ্যার্থী পরিষদ ওদের মতো কাজ করছে। তবে এসএফআইকে ভাঙানোর ক্ষমতা ওদের নেই।”

পরিবর্তনের আগে ছিল এসএফআই। এখন টিএমসিপি। বাংলার কলেজ গেটে কী এবার গেরুয়া নিশানের দেখা মিলবে? উত্তর দেবে ভবিষ্যৎই!

abvp bjp member abhishek chattopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy