Advertisement
E-Paper

পথে নামুন, পোস্টার সিপিএম অফিসে

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ছড়িয়েছে এমনই পোস্ট। বিতর্কটা দলের মধ্যে ছিলই। কিন্তু এত দিন ছিল ছাইচাপা। লোকসভা ভোটে বামফ্রন্টের পর্যুদস্ত হওয়ার ক্ষোভ বার আনল সেই আগুনকে!

রোহন ইসলাম ও রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০৩:২৯

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ছড়িয়েছে এমনই পোস্ট।

বিতর্কটা দলের মধ্যে ছিলই। কিন্তু এত দিন ছিল ছাইচাপা। লোকসভা ভোটে বামফ্রন্টের পর্যুদস্ত হওয়ার ক্ষোভ বার আনল সেই আগুনকে!

বাঁকুড়া শহরে স্কুলডাঙায় সিপিএমের জেলা কার্যালয়ের দেওয়ালে পোস্টার সাঁটিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের জীবনযাত্রা নিয়ে রবিবার কার্যত ‘জেহাদ’ ঘোষণা করলেন কিছু সিপিএম কর্মী। ফেসবুকে ফলাও করে সে কথা পোস্ট করে ছড়িয়েও দেওয়া হল। দলীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকালে স্কুলডাঙায় পার্টি অফিসের গায়ে তিনটি পোস্টার সাঁটিয়ে দেন স্থানীয় কিছু কমবয়েসী সিপিএম কর্মী। তাতে বামপন্থী আর্দশ মেনে আচরণ করতে বলা হয়েছে নেতাদের উদ্দেশে। গাড়ি ছেড়ে বাসে যাতায়াত, পার্টি অফিসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর ছেড়ে জনগণের মাঝে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই পোস্টারে। জেলা নেতৃত্ব তা জানতে পেরেই পোস্টারগুলি সরিয়ে দেন। কিন্তু কিছু কর্মী ফেসবুকে তা উল্লেখ করে বিষয়টি ছড়িয়ে দিয়েছেন। এতেই অস্বস্তি বেড়েছে জেলা সিপিএমের অন্দরে।

সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক এবং রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র অবশ্য বিষয়টি সাজানো বলেই দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “এ রকম কোনও পোস্টারই পড়েনি!” ফেসবুকের পোস্টকেও ‘সাজানো ছবি’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে একই সঙ্গে তাঁর স্বীকারোক্তি, “দলেরই কিছু কর্মী ফেসবুকে ওই ছবি পোস্ট করেছেন।”

বস্তুত, দলীয় গাড়ি ব্যবহার করাকে কেন্দ্র করে সিপিএমের ভিতরে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। দলীয় কর্মসূচিতে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের যাওয়ার জন্য বাঁকুড়া জেলা সিপিএমের ৮টি গাড়ি ভাড়া নেওয়া আছে। এক শ্রেণির সিপিএম কর্মীদের দাবি, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের অনেকেই পার্টির গাড়ি নিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করছেন। তার জন্য গাড়ি পোষার খরচও বেড়ে গিয়েছে। সিপিএমের এক জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যের কথায়, “প্রতি মাসে পার্টির সংগ্রহ করা লেভি থেকে আড়াই লক্ষ টাকা গাড়ির পিছনে খরচ হয়। আমরা একাধিক বার বিভিন্ন বৈঠকে এ নিয়ে আপত্তি তুলেছি। কিন্তু কিছুই হয়নি।” দল সূত্রের খবর, অমিয়বাবু নিজেও গাড়ির ব্যয় সঙ্কোচে উদ্যোগী হয়েও পারেননি। দলের ওই ক্ষুব্ধ অংশই পোস্টার দেওয়ার পিছনে আছে বলে খবর।

অমিয়বাবুর বক্তব্য, “অপচয় যে হয় না, একেবারেই তা বলা যায় না। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলীয় কর্মসূচিতেই গাড়ি নেওয়া হয়।” তাঁরা কি এ বার সত্যিই গাড়ি ছেড়ে বাসে চাপবেন? অমিয়বাবুর জবাব, “দলীয় কিছু কর্মসূচি থাকে, যেখানে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যেরা গাড়ি ছাড়া অন্য কোনও ভাবে যেতে পারবেন না। গাড়ি ছাড়ার উপায় নেই।” বাঁকুড়ায় জেলা কার্যালয়ে অমিয়বাবুর চেম্বার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। তাঁর দাবি, “এখানে অনেক ধরনের মানুষ আসেন। তাঁদের সুবিধার জন্য এসি চালানো হয়। তবে সব সময় এসি চলে না।” তবে এ নিয়ে বিরক্ত অমিয়বাবুর মন্তব্য, “এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলে দলের কর্মীরা সরাসরি আমাকে বলতে পারতেন, এ ভাবে বিষয়টি প্রকাশ্যে নিয়ে আসা বামপন্থা বিরোধী।”

সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, জেলা কার্যালয়ে বাহুল্যের কথা ধরলে সিপিএমের মধ্যে বাঁকুড়া অবশ্য সামনের সারিতে আসে না। বর্ধমান বা শিলিগুড়ির কার্যালয় তার চেয়ে অনেক এগিয়ে! আবার গাড়ি ব্যবহার নিয়ে বিতর্কও বাঁকুড়ায় সীমাবদ্ধ নয়। কলকাতা জেলা কমিটির অন্দরেই এই নিয়ে বিস্তর অসন্তোষ আছে। পাশাপাশি এটাও ঘটনা, রাজ্যে অন্যান্য দলের দফতর অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা সংবলিত। কিন্তু নিচু তলার বাম কর্মীদের সিংহ ভাগই তাঁদের নেতাদের কৃচ্ছসাধন দেখতে আগ্রহী। এ বার উপুর্যপুরি বিপর্যয়ের পরে সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা নেতাদের জীবনযাত্রা নিয়ে ক্ষোভকে তাই প্রকাশ্যে এনে ফেলেছেন। ঘটনাচক্রে, তার প্রকাশ ঘটেছে বাঁকুড়ায়। সিপিএমের এক রাজ্য নেতার মন্তব্য, বাঁকুড়া থেকেই তৃণমূলের যে তারকা-প্রার্থী এ বার নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি নিশ্চয়ই কৃচ্ছসাধন করার ফলে জেতেননি। কিন্তু বাম কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের নেতাদের অন্য ভাবে দেখতে চান। এ সবই তাঁদের ভালবাসা-জনিত ক্ষোভ।

বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের ছাত্র সায়ক সিংহ পোস্টারের ছবি এ দিন ফেসবুকে দিতেই মন্তব্য আসতে শুরু করে। সায়কের আবেদন, ‘যে সব কমরেডরা নেতাদের বদল চান, তাঁরা এটা শেয়ার করুন। সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিবাদ গড়ে তুলুন’। ওই পোস্টারে লেখা ছিল বাঁকুড়া জেলার সিপিএম পার্টি অফিসে কয়েক জন যুবকর্মী বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কর্মীরা অফিসের ভিতর পোস্টার দেন, ‘বামপন্থায় ফিরে আসুন’। জেলা সম্পাদকের গাড়িতে পোস্টার মারা হয়, ‘এসি গাড়ি ছাড়ুন, রোদে ঘুরুন’! সেই সঙ্গে প্রকাশ কারাট, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসুর পদত্যাগের দাবিও তোলা হয়।

জনৈক নেপাল মণ্ডল ফেসবুকে প্রশ্ন ছুড়েছেন, ‘যুদ্ধে হারলে সেনাপতিকেই হারার দায় নিতে হয়, সেই ট্র্যাডিশন বামফ্রন্টে নেই কেন’? সরিৎ মজুমদার নামের এক জনের মন্তব্য, “সব ক’টাকে আন্দামানে পাঠাও!” দু-এক জন অবশ্য এই ধরনের ‘প্রতিবাদ’ দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জনৈক আমি সইফ-এর শেয়ার করা একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘যারা সত্যিকারের নেতা, যারা ভোট করতে জানেন, সেই রেজ্জাকদা, লক্ষণ শেঠ (দু’জনেই দল থেকে বহিষ্কৃত) নাকি বেনো জল! যারা পরিশুদ্ধ করতে বসেছে, সেই বুদ্ধ-বিমানরাই অরিজিনাল বেনো জল’!

কর্মীরা নতুন নেতা চাইলেও দল যাঁদের ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে খাড়া করতে চাইছে, সেই ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, শতরূপ ঘোষদের নিয়েও তির্যক মন্তব্য গত দু’দিনে উড়ে বেড়াচ্ছে ফেসবুকে। বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি তথা বাঁকুড়া কেন্দ্রের প্রার্থী সুভাষ সরকারের কটাক্ষ, “মানুষের হয়ে আন্দোলন করার মানসিকতা সিপিএম অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে। সে কারণেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উপরে মানুষের আস্থা চলে গিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। দিনে দিনে বিজেপি-ই রাজ্যের বিকল্প বিরোধী শক্তি হয়ে উঠেছে।” তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা কো-চেয়ারম্যান অরূপ চক্রবর্তীর মন্তব্য, “মানুষ আগেই ওদের পাশ থেকে সরে গিয়েছে। এ বার সাচ্চা নেতা-কর্মীরাও সরছেন। পার্টি অফিসটাই ফাঁকা পড়ে থাকবে!”

rohan islam rajdeep banerjee kolkata bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy