Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে স্কুলের কাছে রিপোর্ট চাইবে রাজ্য সরকার

স্কুলের ভিতরে কতটা নিরাপদ পড়ুয়ারা? বেঙ্গালুরুর বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্রথম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা সেই প্রশ্ন তুলে দিল এ রাজ্যের ক্ষেত্রেও। সন্তানকে স্কুলে রেখে অভিভাবকদের নিশ্চিন্ত থাকার অবকাশ সত্যিই কতটা রয়েছে তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করেন সমাজের বিশিষ্টেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০৩:২৩
Share: Save:

স্কুলের ভিতরে কতটা নিরাপদ পড়ুয়ারা? বেঙ্গালুরুর বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্রথম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা সেই প্রশ্ন তুলে দিল এ রাজ্যের ক্ষেত্রেও। সন্তানকে স্কুলে রেখে অভিভাবকদের নিশ্চিন্ত থাকার অবকাশ সত্যিই কতটা রয়েছে তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করেন সমাজের বিশিষ্টেরা। বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে ভাবছে রাজ্য সরকারও। স্কুলের ভিতরে পড়ুয়াদের নিরাপত্তার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা আছে তা জানিয়ে প্রাথমিক

থেকে মাধ্যমিক সব স্কুলকেই কিছুদিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেব।”

শিক্ষক বা কর্মচারী ছাত্রীদের ধর্ষণ কিংবা যৌন হেনস্থা করেছেন এমন অভিযোগ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিকবার শোনা গিয়েছে। কলকাতায় দিন কয়েক আগে এক বাংলা মাধ্যম মেয়েদের স্কুলের শৌচাগারে বহিরাগত যুবক ঢুকে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বছরখানেক আগে পার্ক স্ট্রিটের এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছিল।

শুধু মেয়েরা এই সমস্যায় পড়ে ভাবাটা ভুল। ছাত্রদের যৌন হেনস্থার শিকার হওয়ার হারও কম নয়। অভিভাবক থেকে মনোবিদদের একটা বড় অংশের মত, এর থেকে ছোটরা মানসিক ভাবে দীর্ঘস্থায়ী ট্রমা, অবসাদ, মনঃসংযোগের অভাবে, অস্থিরতায় ভুগতে পারে। অনেকে প্রথম দিকে বুঝতেই পারে না তাদের সঙ্গে কী হচ্ছে, আবার অনেকে ভয়ে, স্কুল-ছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় মুখ বন্ধ করে থাকে।

কলকাতার স্কুলগুলিতে এমন কী কী ব্যবস্থা রয়েছে যাতে অভিভাবকেরা নিজেদের সন্তানের নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন?

লা মার্টিনিয়ার স্কুলের সচিব সুপ্রিয় ধর জানিয়েছেন, তাঁদের ছেলেদের ও মেয়েদের স্কুল চত্বরের বিভিন্ন কোণায় তাঁরা মোট দেড়শোটি ক্যামেরা বসিয়েছেন। অধ্যক্ষের ঘর থেকে এবং টিচার্স রুমে বসানো মনিটর থেকে কোথায় কী হচ্ছে সব নজরে আসে। তা ছাড়া রয়েছেন কাউন্সেলরেরা। তাঁরা নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সঙ্গে কোনও খারাপ আচরণ কেউ করেছে কি না জানার চেষ্টা করেন।

আবার ভারতীয় বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষিকা অনিন্দিতা চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “আমাদের করিডরে সবসময় অ্যাটেন্ড্যান্ট থাকেন। শৌচালয়ে পালা করে সাফাইকর্মী ও ফ্লোর অ্যাটেন্ড্যান্টরা ঘুরে ঘুরে নজরদারি চালান। এ ছাড়া আলাদা নিরাপত্তাকর্মীও রয়েছেন।” এপিজে স্কুলের অধ্যক্ষা রীতা চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমাদের স্কুল সকাল ৮টায় শুরু হলেও শিক্ষক-শিক্ষিকারা পালা করে কয়েক জন সাড়ে সাতটার ভিতর ঢোকেন শুধু বাচ্চাদের উপর নজর রাখতে। স্কুল ছুটি হওয়ার পর প্রত্যেক ক্লাসঘর, শৌচালয়, করিডর ঘুরে দেখে এসে তবে বাড়ি যাই। কাউন্সেলরেরা আছেন যাঁরা শিশুদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ভালমন্দ অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করেন।”

বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে অন্তত কিছু ব্যবস্থা থাকলেও বাংলা মাধ্যম সরকারি স্কুলগুলির পরিকাঠামো যে সন্তোষজনক নয় তা স্বীকার করছেন বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষই।

হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ বসু যেমন বলেন, “আমাদের আলাদা ব্যবস্থা তেমন নেই। আমরা শিক্ষকেরাই সচেতন থাকি। বায়োলজির ক্লাসে ছাত্রদের জীবনশৈলি বোঝানোর সময় কিছুটা সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করি যাতে তাদের সঙ্গে খারাপ কিছু হলে তারা এসে জানায়।”

বেথুন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শুক্লা রায়ের কথায়, “সরকারি স্কুলে এই রকম কখনও ঘটে না। আমরা শিক্ষিকারা ছাত্রীদের সবসময় আগলে রাখি।” আবার “সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সিংহরায়েরও বক্তব্য, “আরও বেশি নিরাপত্তাকর্মী, শিক্ষিকা দরকার। তা না-হলে

স্কুলের সর্বত্র সবসময় নজর রাখা যায় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

students protection report west bengal government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE