Advertisement
E-Paper

ফোনে কোপ, জেল গ্রন্থাগারেও যাওয়া বন্ধ কুণালের

অন্যান্য বন্দির মতো সারদা মামলায় অভিযুক্ত কুণাল ঘোষও এত দিন জেলের সব জায়গায় যেতে পারতেন। কিন্তু এ বার জেলের ভিতরে তাঁর চলাফেরার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করল কারা দফতর। নিষেধাজ্ঞা জারির পরেই কুণাল ফের খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ নয়, বন্দিরা জেলের ল্যান্ডফোন ব্যবহারের যে-সুবিধা পান, কুণালের ক্ষেত্রে তার উপরেও কড়াকড়ি করা হয়েছে। এমনকী জেলের গ্রন্থাগারেও যেতে পারবেন না তিনি। দমদম সেন্ট্রাল জেলের সুপার বুধবার একটি নির্দেশে জানান, জেলে কুণালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৪ ০২:৩৭

অন্যান্য বন্দির মতো সারদা মামলায় অভিযুক্ত কুণাল ঘোষও এত দিন জেলের সব জায়গায় যেতে পারতেন। কিন্তু এ বার জেলের ভিতরে তাঁর চলাফেরার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করল কারা দফতর। নিষেধাজ্ঞা জারির পরেই কুণাল ফের খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

শুধু চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ নয়, বন্দিরা জেলের ল্যান্ডফোন ব্যবহারের যে-সুবিধা পান, কুণালের ক্ষেত্রে তার উপরেও কড়াকড়ি করা হয়েছে। এমনকী জেলের গ্রন্থাগারেও যেতে পারবেন না তিনি। দমদম সেন্ট্রাল জেলের সুপার বুধবার একটি নির্দেশে জানান, জেলে কুণালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত।

এ দিনই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর বিরোধিতার পরে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের ছেলে শুভজিৎ সেনের জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। আদালত তাঁকে ফের জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে বলেছে, ইডি জেলের মধ্যেই ওই অভিযুক্তকে জেরা করতে পারবে।

কিন্তু জেলে কুণালের গতিবিধির উপরে নিয়ন্ত্রণ জারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কুণাল আছেন দমদম জেলের তিন নম্বর সেলে। তাঁর উপরে নজরদারির জন্য ওই সেলে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকলেও এত দিন তিনি অন্য বন্দিদের মতোই জেলের সবর্ত্র যেতে পারতেন। জেলের এক আধিকারিক জানান, তিনি মাঝেমধ্যেই দমদম জেলের গ্রন্থাগারে গিয়ে বই পড়তেন। কিন্তু এ দিন থেকে তিনি সেখানেও যেতে পারবেন না। তবে সেলে বসে খবরের কাগজ পড়ার উপরে কোনও নিষেধাজ্ঞা এখনও পর্যন্ত নেই বলেই জেল সূত্রের খবর। অন্য বন্দিরা সপ্তাহে ছ’দিন জেলের ল্যান্ডফোনের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। কিন্তু এখন থেকে কুণাল সেই সুযোগ পুরোটা পাবেন না। আপাতত তাঁকে মাত্র দু’দিন এই সুযোগ দেওয়া হবে।

হঠাৎ এ-হেন নিষেধাজ্ঞা কেন?

কারা দফতরের ব্যাখ্যা, সম্প্রতি প্রেসিডেন্সি জেলে খাদিম-কর্তা অপহরণ মামলার আসামি হ্যাপি সিংহ অন্য বন্দির হাতে যে-ভাবে খুন হয়েছেন, তাতে তারা আর কুণালের নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। সুপ্রিম কোর্ট গত শুক্রবার সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিকে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মন্তব্য করেছে এবং এই মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে। সারদা কেলেঙ্কারির মতো মামলায় কুণালের বক্তব্য বা সাক্ষ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেল-কর্তৃপক্ষের দাবি, সেই জন্যই তাঁরা ওই অভিযুক্তের ব্যাপারে কোনও ঝুঁকি নিতে চান না এবং সেই জন্যই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

যদিও জেলকর্মীদের একাংশই কারা-কর্তৃপক্ষের এই ব্যাখ্যা মেনে নিতে রাজি নন। তাঁদের মতে, জেলের ভিতরে খবরের কাগজ পড়ার সুবাদে বাইরের সব খবরই পান কুণাল। সংবাদপত্র পড়ার পরে তিনি নিয়মিত ফোন করে নিজের পরিবার এবং আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতেন। জেল থেকে বাইরের জগতের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বন্ধ করতেই এই নির্দেশ বলে ওই কর্মীদের ধারণা।

সাধারণ ভাবে জেলে বন্দিদের চলাফেরার নিয়মটা কী?

কারা দফতর সূত্রের খবর, জেলে সব বন্দিই যে-কোনও জায়গায় ঘোরাফেরা করতে পারেন। এমনকী অন্য ওয়ার্ডে গিয়ে টিভি দেখা কিংবা ভিতরের গ্রন্থাগারও ব্যবহার করতে পারেন। কুণালও এত দিন অন্য বন্দিদের মতো এই সব সুবিধা পেয়ে এসেছেন। কিন্তু এ দিন নির্দেশ দিয়ে তাঁর সব সুযোগই কেড়ে নেওয়া হল।

জেলে যে-দিন কুণালের উপরে বিধিনিষেধ চাপানো হল, সে-দিনই জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় ফের জেল-হাজতে ঠাঁই হল সুদীপ্ত-পুত্র শুভজিতের। সারদা গোষ্ঠীর বিপুল টাকা কোথায় গেল, তার হদিস পেতে সংস্থার শুভজিৎকে আরও জেরা করতে চায় ইডি। এই অবস্থায় তারা এ দিন আদালতে শুভজিতের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে। অভিযুক্তের জামিনের আবেদন খারিজ করে বিচারক ইডি-কে নির্দেশ দেন, জেল-হাজতে থাকাকালীন শুভজিৎকে তারা জেরা করতে পারবে।

সুদীপ্ত, তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী পিয়ালি, ছেলে শুভজিৎকে এ দিন কলকাতার বিচার ভবনের মুখ্য বিচারক মহম্মদ মুমতাজ খানের এজলাসে হাজির করানো হয়। ইডি আদালতে জানায়, শুভজিতের বন্ধুবান্ধবদের মোবাইল ফোনের কল ডিটেলস এবং তাঁদের কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক পরীক্ষা করে নতুন কিছু তথ্যপ্রমাণ তাদের হাতে এসেছে। তবে সেই নথিতে ঠিক কী আছে, ইডি তা জানায়নি। শুভজিতের আইনজীবীরা তাঁর জামিনের আবেদন জানালে ইডি-র পক্ষ থেকে তার বিরোধিতা করা হয়। ইডি-র দায়ের করা এই মামলায় সুদীপ্ত, সারদা গোষ্ঠীর অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায় আগেই জামিন পেয়েছেন। শর্তসাপেক্ষে ইতিমধ্যে জামিন দেওয়া হয়েছে পিয়ালিকেও।

ইডি-র আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র আদালতে জানান, অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হলে তিনি তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে পারেন। তাই শুভজিৎকে জেল-হাজতে রাখা প্রয়োজন। আইনজীবী আরও জানান, সারদা রিয়েলটি প্রাইভেট লিমিটেডের টাকায় শুভজিৎ সেনের নামে দিল্লিতে ছ’কোটি টাকা দিয়ে যে-ফ্ল্যাট কেনা হয়েছিল, সেটি ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে। সেই ফ্ল্যাটে এমন কিছু নথি মিলেছে, যা তদন্তের কাজে লাগবে। তা ছাড়া অভিযুক্তের বন্ধুবান্ধবদের মোবাইলের কল ডিটেলস ও কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক পরীক্ষা করে যে-সব নথি মিলেছে, সেগুলোর ব্যাপারে শুভজিৎকে আরও জেরা করা দরকার। এই অবস্থায় তাঁকে জামিন দিলে তদন্ত ব্যাহত হবে।

শুভজিৎকে ফের জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

kunal ghosh jail library phone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy