Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিজেপি-জুজুতে ‘তোমাকে চাই’, সুমনকে মমতা

দলীয় নেতৃত্ব বা খোদ নেত্রীর কিছু পদক্ষেপের নিন্দা করে বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যে তখ্তে বসার বছরখানেক আগে থেকে এখনও পর্যন্ত তাঁর কাছে কার্যত ব্রাত্যই থেকেছেন কবীর সুমন। সেই ছবিটা এ বার সম্ভবত পাল্টাতে চলেছে। সঙ্গীতকার সুমন এখন বিজেপির বিরুদ্ধ অবস্থানে সরব। বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা সোশ্যাল মিডিয়ায় রাখঢাক না-করেই বলছেন, বিজেপির প্রতিপক্ষ হিসেবে তিনি এখন মমতারই সমর্থক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৯
Share: Save:

দলীয় নেতৃত্ব বা খোদ নেত্রীর কিছু পদক্ষেপের নিন্দা করে বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যে তখতে বসার বছরখানেক আগে থেকে এখনও পর্যন্ত তাঁর কাছে কার্যত ব্রাত্যই থেকেছেন কবীর সুমন। সেই ছবিটা এ বার সম্ভবত পাল্টাতে চলেছে।

সঙ্গীতকার সুমন এখন বিজেপির বিরুদ্ধ অবস্থানে সরব। বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা সোশ্যাল মিডিয়ায় রাখঢাক না-করেই বলছেন, বিজেপির প্রতিপক্ষ হিসেবে তিনি এখন মমতারই সমর্থক। এর পরেই নেত্রীর তরফে বরফ গলার ইঙ্গিত মিলছে। একুশের ঢাকায় মুখ্যমন্ত্রীর সফর-সঙ্গীদের তালিকায় সুমনের নাম আগেই রাখা হয়েছিল। সুমন অবশ্য ‘শারীরিক অসুস্থতা’র কারণে এখনও পর্যন্ত এই সফরে যেতে গররাজি। এ বার রাজ্য সরকারের তরফে সুমনকে ‘মহাসঙ্গীত সম্মানে’ ভূষিত করা হচ্ছে বলেও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। কাল, শুক্রবার নজরুল মঞ্চে সরকারি সঙ্গীত-মেলার উদ্বোধনী আসরে সুমন-সহ অন্য শিল্পীদের পুরস্কৃত করার কথা।

সুমনের সম্মান-প্রাপ্তির বিষয়টি ‘জানা নেই’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন রাজ্যের তথ্য-সংস্কৃতি সচিব অত্রি ভট্টাচার্য। বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে শুধু বলা হয় বলিউডের অভিজিৎ-সহ কয়েক জন মহাসঙ্গীত সম্মান পাবেন। সন্ধ্যায় সুমন আনন্দবাজারকে জানান, ছ’সাত দিন আগেই কোনও এক সরকারি আধিকারিক তাঁকে এই মনোনয়নের বিষয়টি জানান। এ দিনও জনৈক সরকারি আমলা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন।

সুমনের মন্তব্য, “আমি দেশের নাগরিক, আয়কর দাতা। এর আগে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি পুরস্কার নিয়েছি। রাজ্য সরকারের পুরস্কারও শিষ্টাচারের সঙ্গে গ্রহণ করব।” কিন্তু তিনি বিজেপি-বিরোধী অবস্থান গ্রহণের পরই মুখ্যমন্ত্রীর তরফে এই ‘কাছে টানার’র মধ্যে অনেকেই রাজনীতির ঘ্রাণ পাচ্ছেন।

জনমানসে এমন একটা ধারণার জন্ম হতে পারে তা সুমন নিজেও অস্বীকার করছেন না। সুমন সহাস্য বলছেন, “বিষয়টা রাজনৈতিক হতেও পারে, না-ও হতে পারে! তবে প্লাজমা ফিজিক্স বা ফুটবলের জন্য তো ওঁরা আমায় পুরস্কার দিচ্ছেন না। শুনেছি, গানের জন্যই পুরস্কার পাব! মন্দ কী?”

তবে বর্ষীয়ান দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অরুণ ভাদুড়ী, আরতি মুখোপাধ্যায়, অজয় চক্রবর্তী এমনকী, সুমনের থেকে বয়সে ছোট নচিকেতাও এই সম্মান পেয়ে গিয়েছেন। এত দিন বাদে সুমনকে মনে পড়ল কেন? শাসক দলের ঘনিষ্ঠ তাঁর সমসাময়িক ও অনুজ শিল্পীদের কারও কারও সঙ্গে তাঁর নাম উচ্চারিত হওয়া নিয়ে সুমনের নিজেরও প্রবল আপত্তি রয়েছে। কিন্তু এখন মমতার তরফে সৌহার্দ্যের বার্তার পরে বেসুরে গাইছেন না শিল্পী।

পুরস্কার কখনওই শিল্পীর মাপকাঠি নয়। এ কথা মনে করিয়েও সুমন বলছেন, “দ্বিজেনদা, সন্ধ্যাদি-রা যে সম্মান পেয়েছেন, আমি তা পাচ্ছি ভাবতেই রোমাঞ্চ হচ্ছে।” আর একটা বাস্তব দিকও তাঁর কাছে ফেলনা নয়। “আমি পেনশনভোগী মানুষ, পুরস্কারের টাকাটাও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ,” বলছেন সুমন।

কিন্তু তাঁর নাম কেন ঘোষণা করলেন না উদ্যোক্তারা? সরকারি তরফে বলা হচ্ছে, অভিজিতের পুরস্কারপ্রাপ্তির বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন। বাকি নামগুলোতে চমক থাকাই ভাল। সুমন ও মমতার সাম্প্রতিক অতীতে ‘মধুুর’ সম্পর্কের কথাও মাথায় রেখেছেন প্রশাসনিক কর্তারা। একদা তৃণমূলের টিকিটে ভোটে জিতে সাংসদ হলেও দু’জনের সম্পর্ক কার্যত তলানিতে ঠেকেছিল। শেষ মুহূর্তে দু’জনের যে কেউ মত বদলাতে পারেন বলে অনুষ্ঠানের কার্ড ছাপানো পর্যন্ত উদ্যোক্তারা ঝুঁকি নিতে চাননি।

তবে পুরস্কার নিতে রাজি হলেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ সফরে যেতে বহু পীড়াপীড়িতেও সুমন রাজি হননি। এ দিনই তাঁর কাছে বিমানের টিকিট নিয়ে গিয়েছিলেন সরকারি প্রতিনিধি। সুমন তা নেননি। তাঁর কথায়, “আমি ওঁদের আগেও বলেছি, আমি অসুস্থ। সফরের ঝক্কি নিতে পারব না। তবু ওঁরা এসেছিলেন। বোধ হয়, কোনও বোঝার ভুল হয়েছে। আমি দুঃখিত।”

সুমনের দাবি, ভবিষ্যতেও দরকারে মমতা-সরকারের সমালোচনা করতে তিনি পিছপা হবেন না। শাসক দলের কর্মসূচিতে সামিল হওয়ারও প্রশ্ন নেই। কিন্তু বিজেপি-বিরোধী অবস্থানে এই সরকারের পাশে থাকতে তিনি এককাট্টা। “বিজেপির রাজনীতি দেশে সাম্প্রদায়িক ফাটল ধরাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে যারাই থাকবে, আমি তার পাশে। বামফ্রন্ট বা অন্য কেউ সরকারে থাকলেও তাদের সমর্থন করতাম।”

মমতার সঙ্গে তাঁর ‘অতীত’ ভুলছেন না। কিন্তু পিছনে হাঁটতেও রাজি নন। নন্দীগ্রাম-পর্বে নিজের বাঁধা গানের লিরিক গুণগুণ করছেন গানওলা। ‘কার পাশে আছি বড় কথা নয়, কার বিরুদ্ধে আছি / শত্রুর শত্রুকেই পেয়েছি সংগ্রামে কাছাকাছি!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mamata kabir suman bjp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE