Advertisement
E-Paper

বিজেপি নেতারা আসায় বজ্রআঁটুনি নবান্নে

যেন অঘোষিত কার্ফু। অন্তত ঘণ্টা কয়েক তেমনই মালুম হল। কেবল পুলিশ আর পুলিশ। তার বাইরে কাকপক্ষীও চোখে পড়ছে না। উপলক্ষ ছিল, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে দলীয় সমর্থকদের উপর শাসকদলের হামলার অভিযোগ জানাতে বিজেপি-র এক কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল নবান্নে যাবেন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের সঙ্গে দেখা করতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৪ ০২:০৯
জখম দলীয় কর্মী-সমর্থকদের দেখতে এসএসকেএম হাসপাতালে বিজেপি-র প্রতিনিধি দল। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

জখম দলীয় কর্মী-সমর্থকদের দেখতে এসএসকেএম হাসপাতালে বিজেপি-র প্রতিনিধি দল। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

যেন অঘোষিত কার্ফু। অন্তত ঘণ্টা কয়েক তেমনই মালুম হল। কেবল পুলিশ আর পুলিশ। তার বাইরে কাকপক্ষীও চোখে পড়ছে না।

উপলক্ষ ছিল, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে দলীয় সমর্থকদের উপর শাসকদলের হামলার অভিযোগ জানাতে বিজেপি-র এক কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল নবান্নে যাবেন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের সঙ্গে দেখা করতে। তাই শনিবার বিকালে নবান্ন ও তার আশপাশ নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল!

শুধু রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতরই নয়, দ্বিতীয় হুগলি সেতুর টোলপ্লাজা থেকে মন্দিরতলা পর্যন্ত বিরাট এলাকা কয়েক ঘণ্টার জন্য পুলিশের দখলে চলে যায়। সেই সময় নবান্নগামী প্রতিটি গাড়ি পরীক্ষা করে দেখার পাশাপাশি যাঁরাই ওই চত্বরে গিয়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে কড়া নজরদারির মুখে পড়তে হয়েছে।

মুখ্যসচিবের সঙ্গে বিজেপি প্রতিনিধি দলের পূর্ব নির্ধারিত সাক্ষাতের সময় ছিল বিকেল পাঁচটায়। নবান্নের মূল ফটকে প্রহরায় থাকা এক পুলিশকর্মী জানান, সাড়ে তিনটে থেকে তাঁদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। শনিবার হাওড়া পুলিশেরও বিশাল বাহিনী নবান্নের চারপাশে মোতায়েন করা হয়।

হাওড়া পুলিশ সূত্রের খবর, এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও কয়েকজন ডিএসপির নেতৃত্বে বড়সড় বাহিনী এ দিন নবান্নের প্রবেশ পথে ছিল। বিজেপি-র কনভয় যাতে নবান্ন পর্যন্ত যেতে না পারে, তা দেখার দায়িত্ব ছিল হাওড়া পুলিশের উপর। সেই মতো আট জনের প্রতিনিধি দলের জন্য দু’টি গাড়ি নবান্নের গেট পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয়। বাকি সব গাড়ি টোলপ্লাজাতেই আটকে দেয় পুলিশ।

নবান্নের অন্দরেও মাছি গলতে দেওয়া হয়নি। বাড়ির ১৩ তলায় মুখ্যসচিবের অফিস। অন্যান্য দিন কয়েক জন পুলিশকর্মী পাহারায় থাকেন। কিন্তু এ দিন সাদা পোশাক এবং উর্দিধারী পুলিশে তেরো তলা ছেয়ে ফেলা হয়। কারও সেখানে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। এক পুলিশ কর্তার কথায়, “মুখ্যসচিবের অফিসের কাছে যাতে কেউ ঘেঁষতে না পারেন, সে রকমই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।” পুলিশি ব্যবস্থা তদারকি করতে লালবাজার থেকে নবান্নে যান ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) অশোক বিশ্বাস। যান কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ইন্টেলিজেন্স) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ১৪ তলায় মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে কেউ ছিলেন না। তবুও বেশ কয়েক জন পুলিশ কর্মী মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ওঠার যাবতীয় দরজা আগলে দাঁড়িয়েছিলেন। বিকেল সোয়া পাঁচটায় বিজেপির গাড়ি নবান্নে আসার সময় প্রবেশ দ্বারের দ্বায়িত্ব নেন স্বয়ং ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স)। আধ ঘন্টার সাক্ষাৎ পর্বে নবান্নের ভিতরে থাকা কেউ কার্যত নড়াচড়া করতে পারেননি।

সন্দেশখালির ঘটনার প্রতিবাদ জানাতেই ২৮ মে নবান্নে গিয়েছিলেন বিজেপি-র কয়েক জন নেতা। সে দিন মুখ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। তাঁদের সে দিন ব্রিফিং রুম (যেখানে সাংবাদিক সম্মেলন হয়)-এর পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। বাধ্য হয়ে ওই নেতারা নবান্নের বাইরে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

এ দিন সেই ব্রিফিং রুমে আগে থেকেই তালা ঝুলিয়ে বোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। তাতে লেখা ছিল, ‘ক্লিনিং ইন প্রগ্রেস’। সেই কাজ কী, তা পূর্ত দফতরের কোনও কর্তা জানাতে পারেননি। নবান্নে যাওয়া বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরাগুলিও পোডিয়ামের সামনে রাখতে দেওয়া হয়নি। এমনকী, বিজেপি-র প্রতিনিধি দলের ছবি তুলতেও প্রথমে বাধা দিয়েছিল পুলিশ।

পরে অবশ্য প্রতিনিধি দলের নবান্নের গেটে এসে পৌঁছলে দূর থেকে ছবি তোলার অনুমতি দেয় পুলিশ। যাঁরা সেই ছবি তুললেন, তাঁদের ছবি আবার পুলিশের ভিডিওগ্রাফার তুলে রাখেন। বিজেপি-র প্রতিনিধি এবং তাঁদের গাড়ির ছবিও তুলে রাখে পুলিশ। বাধ্য হয়ে, নবান্নে সাংবাদিকদের সঙ্গে একটি কথাও বলতে পারেননি বিজেপি-র নেতারা।

কেন এই বজ্রআঁটুনি?

এক সরকারি কর্তার সাফ জবাব, “আমাদের তেমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।”

sskm bjp nabanna
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy