Advertisement
০১ মে ২০২৪

বিতর্ক ঠেকাতে আনিসুরের মুখ বন্ধ করছে আলিমুদ্দিন

ভোটের মরসুম আসতেই ফের শুরু কুকথার স্রোত! গোড়াতেই গলদের ইঙ্গিত পেয়ে এ বার ঠেকে শিখছে আলিমুদ্দিন। বারবার অবাঞ্ছিত মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ানোয় দলের বিধায়ক এবং প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমানকে আপাতত লোকসভার ভোটের প্রচারে আর বক্তা হিসাবে রাখতে চাইছেন না সিপিএম নেতৃত্ব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৪
Share: Save:

ভোটের মরসুম আসতেই ফের শুরু কুকথার স্রোত! গোড়াতেই গলদের ইঙ্গিত পেয়ে এ বার ঠেকে শিখছে আলিমুদ্দিন। বারবার অবাঞ্ছিত মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ানোয় দলের বিধায়ক এবং প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমানকে আপাতত লোকসভার ভোটের প্রচারে আর বক্তা হিসাবে রাখতে চাইছেন না সিপিএম নেতৃত্ব।

বীরভূমে দু’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ-সহ রাজ্যের অন্যান্য মন্ত্রী সম্পর্কেও অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন আনিসুর। তাঁর ওই মন্তব্য দলের রাজ্য নেতৃত্ব অনুমোদন করছেন না। বিতর্কের মুখেও আনিসুর অনড় থাকায় তাঁরা ওই বিধায়ককে আপাতত প্রচার থেকে সরিয়ে নিতেই চাইছেন।

আলিমুদ্দিনে আজ, মঙ্গলবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক বসছে। সেখানেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্তের উপরে সিলমোহর পড়তে পারে বলে দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত। স্নায়ুরোগে আক্রান্ত আনিসুর এর আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে কৃষক সভার এক সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জড়িয়ে অশালীন মন্তব্য করেছিলেন। দলের নির্দেশে সে বার তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। এ বার আনিসুর নিজে ভুল মানতে নারাজ ছিলেন। কিন্তু বামফ্রন্টের মহিলা সংগঠনগুলির তরফে তাঁর ওই মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছিল। বাম নেত্রীরা বিষয়টি দলীয় নেতৃত্বকেও জানিয়েছিলেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যেরা আলোচনা করে দেখেছেন, এই অবস্থায় আনিসুরকে বক্তৃতা চালিয়ে যেতে দিলে নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি আরও বেফাঁস কিছু বলে ফেলতে পারেন। ভোটের মুখে তাতে জনমানসের কাছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে, বিধিভঙ্গ নিয়ে জটিলতাও হবে। তার চেয়ে রাজ্য কমিটির সদস্য আনিসুরকে আপাতত আড়ালে রাখাই ভাল বলে সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন।

ঠেকে শিখে আলিমুদ্দিন বিতর্কিত মন্তব্যকারীদের লাগাম পরাতে উদ্যোগী হলেও শাসক দলের নেতাদের নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। ঘটনাচক্রে, আনিসুরের মন্তব্য নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে বিধিভঙ্গের অভিযোগ করেছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল! যিনি নিজেই একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে! আনিসুরের মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের মাঝেই যিনি আবার বলেছেন, বিরোধীরা ইঁদুরের মতো। ইঁদুরকে বিষ দিয়ে মারা উচিত! ওই মন্তব্য সংক্রান্ত সংবাদও খতিয়ে দেখছে কমিশন। দুই ক্ষেত্রেই অভিযোগ খতিয়ে দেখে পাঠিয়ে দেওয়া হবে দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে। তৃণমূল নেতৃত্বও অনুব্রতের ওই ধরনের মম্তব্যকে সমর্থন করছেন না। কিন্তু তাঁকে নিরস্ত করার কোনও প্রক্রিয়া এখনও চোখে পড়ছে না।

আনিসুরের বিরুদ্ধে সোমবারই স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস দিয়েছেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিধানসভার সচিবের কাছে চিঠি দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানিয়েছেন তিনি। পার্থবাবুর কথায়, “আনিসুর মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে ধরনের অশালীন মন্তব্য করেছেন, তা নারী জাতির পক্ষেই অবমাননাকর। ওই ধরনের মন্তব্য করে আনিসুর বিধানসভার মহিলা বিধায়কদেরও অপমান করেছেন। এই উক্তি অমর্যাদাকর, অপমানকরযা বিধায়ক হিসেবে সমাজের কাছে আমাদের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করেছে, স্বাধিকার ভঙ্গ হয়েছে।’’ কিন্তু তাঁদের দলের অনুব্রত সম্পর্কে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন? অনুব্রত বিধানসভার সদস্য নন বলে পরিষদীয় সচিব হিসাবে এই ব্যাপারে প্রথমে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি পার্থবাবু। পরে তৃণমূলের মহাসচিব হিসাবে তিনি অবশ্য বলেন, “কারওরই অসংসদীয় কথা বলা উচিত নয়। এটা আমাদের সংস্কৃতিবিরোধী। কেউ এমন বললে তা সমর্থনযোগ্য নয়।”

অনুব্রতবাবুরও কিছু শারীরিক সমস্যা আছে। তাঁকে ‘দক্ষ সংগঠক’ বলে আগেই শংসাপত্র দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী। বীরভূম জেলায় অনুব্রতবাবুর উপরে সংগঠন যে ভাবে নির্ভর করে, তার জন্যই ভোটের মরসুমে দলীয় স্তরে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন বলে তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা।

বস্তুত, এলাকায় সংগঠনের জোর থাকলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নেতাই যে কুকথা বলে ছাড় পেয়ে গিয়েছেন, অতীতেও বারবার তা দেখা গিয়েছে। সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, তাঁদের দলে এমন মন্তব্য করলে সাংগঠনিক স্তরে তা খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু তৃণমূলে সে সব হয় না। তৃণমূল নেতৃত্বের আবার পাল্টা দাবি, বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দেওয়া আর মহিলাদের সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য দু’টো এক জিনিস নয়। সে দিক থেকে আনিসুরেরা বেশি অপরাধী। চাপানউতোর যা-ই হোক, ঘটনা হচ্ছে, কুকথার বাণ থেকে রাজ্যের মানুষ মুক্তি পাচ্ছেন না।

দলের অন্দরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর মত, সহজে হাততালি পাওয়ার লক্ষ্যে কিছু নেতা প্রতিপক্ষকে আক্রমণের সীমা ছাড়াচ্ছেন। ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসছেন। যা আদৌ বাঞ্ছনীয় নয়। বিতর্কিত মন্তব্য করে অতীতে স্বয়ং বিমানবাবুকেও ভুল স্বীকার করতে হয়েছে। আনিসুর সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে এ দিন অবশ্য বিমানবাবু বলেছেন, “কোনও ব্যক্তিকে ধরে কথা বলা উচিত নয়। নীতিভিত্তিক মন্তব্য করা উচিত। বামপন্থীরা নীতি ভিত্তিক কথা বলেন। এই ধরনের মন্তব্য করেন ডানপন্থীরা। তাঁদেরও সেটা করা উচিত নয়।” সেই সঙ্গেই বিমানবাবুর অভিযোগ, “তবে বামপন্থীরা মন্তব্য করলে বেশি বিতর্ক হচ্ছে! আর ডানপন্থীরা বললে সেটা হয় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anisur tmc alimuddin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE