শিক্ষাক্ষেত্রকে রাজনীতি-মুক্ত করার অঙ্গীকার থেকে সরে এসে রাজ্যের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলে (ইসি) তৃণমূলের দুই বিধায়কের ঢোকার পথ করে দিল রাজ্য সরকার। সোমবার বিধানসভায় যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধনী) বিল পাশ হয়েছে, তার জোরেই বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসিতে ঠাঁই পেয়ে যাবেন তৃণমূলের দুই স্থানীয় বিধায়ক।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ইসি-র গঠনের এই রূপরেখা বিধায়কদের মধ্যে বিলি করা বিলে ছিল না। সোমবার শেষ মুহূর্তে মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে সংশোধনী আনিয়ে এই পরিবর্তন করা হয়। বিল নিয়ে বিতর্কের পরে সংশোধনী পেশ হওয়ায় এর প্রতিবাদও জানাতে পারেননি বিরোধীরা। যদিও বিল পাশের পরে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তাঁরা।
তবে এ দিন একই সঙ্গে সংশোধনী এনে এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে সার্চ বা সন্ধান কমিটিতে শিক্ষাবিদদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, সার্চ কমিটিতে যোগ্যতার মাপকাঠি ঠিক করে দিয়ে শুধু শিক্ষাবিদদের এনে যদি দলতন্ত্রে রাশ টানার চেষ্টা থাকে, তা হলে আবার একই বিলে ইসি-র ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ রাখা হল কেন?
বিধানচন্দ্র এবং উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য বাছাইয়ে এর আগে ইসি-র ভূমিকাই ছিল সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইসি যাঁকে পছন্দ করত, উপাচার্য হিসেবে তাঁকেই নিয়োগপত্র দিতেন আচার্য-রাজ্যপাল। ইসি-তে মতানৈক্য থাকলে তিনটি নাম রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হলে তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে এক জনকে উপাচার্য-পদে নিয়োগ করতেন। এ বার থেকে রাজ্যের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও সার্চ কমিটি উপাচার্য বাছবে। সার্চ কমিটির জন্য যে পাঁচ সদস্যের কথা সংশোধনী বিলে বলা হয়েছিল, শোভনদেববাবুর পেশ করা সংশোধনীতে আবার তা বদলে তিন জন শিক্ষাবিদের কথা বলা হয়েছে!
কিন্তু ইসি-র ক্ষেত্রে এক জন করে বিধায়ককে সদস্য হিসাবে মনোনীত করার সুযোগ রাজ্য সরকারকে দেওয়া হয়েছে। এবং সেই কাজও করা হয়েছে একই ভাবে বিশ পাশের সময় সংশোধনী বিলি করে! যা দেখে কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী মন্তব্য করেছেন, “এটা কি বিল না খাল? এত সংশোধনী যখন সরকারকেই দিতে হচ্ছে, তার চেয়ে এই বিল বিধানসভার বিধিপ্রণয়ন সংক্রান্ত কমিটিতে পাঠিয়ে দিলেই ভাল হতো!” কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মারও বক্তব্য, “ইসি-তে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ নিয়ে আমরা কিছু বলতেই পারলাম না! কারণ, বিতর্কের পরে সংশোধনী পেশ হল।”
মূল বিলের উপরে এত সংশোধনী কেন, তা নিয়ে রাতে শোভনদেববাবুর বক্তব্য জানা যায়নি। শিক্ষা ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, কিছু ভুল-ভ্রান্তি নজরে এসেছিল বলেই সংশোধনী আনা হয়েছে। এত পরিবর্তন না করে বিভ্রান্তি এড়াতে বিলটি কেন নতুন করেই আনা হল না, তার সদুত্তর অবশ্য মেলেনি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy