Advertisement
E-Paper

বিমান-বিল নিয়ে বিপাকে দেবব্রত

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও দুর্নীতির মামলা করল সিবিআই। একই মামলা করা হয়েছে আরও দুই বর্তমান ও তিন প্রাক্তন সাংসদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, কম দামের বিমানের টিকিট কিনে ভুয়ো বিল দেখিয়ে তাঁরা রাজ্যসভার সচিবালয় থেকে অনেক বেশি টাকা আদায় করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০৩:১৩

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও দুর্নীতির মামলা করল সিবিআই। একই মামলা করা হয়েছে আরও দুই বর্তমান ও তিন প্রাক্তন সাংসদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, কম দামের বিমানের টিকিট কিনে ভুয়ো বিল দেখিয়ে তাঁরা রাজ্যসভার সচিবালয় থেকে অনেক বেশি টাকা আদায় করেছেন। দিল্লির সাউথ অ্যাভিনিউয়ে দেবব্রতবাবুর বাড়িতে আজ সাত সকালে হানা দিয়ে সিবিআই বেশ কিছু নথিপত্র আটক করে।

দেবব্রতবাবু অবশ্য কলকাতায় ছিলেন। এর পর সিবিআইয়ের ডিআইজি অরুণ বোথরা তাঁকে টেলিফোন করে জানতে চান, কবে তিনি দিল্লিতে আসতে পারবেন। শনিবারই দিল্লিতে পৌঁছচ্ছেন দেবব্রতবাবু। আজ তিনি বলেন, “সকালে দিল্লির ফ্ল্যাটে সিবিআইয়ের কয়েক জন আধিকারিক গিয়েছিলেন। বিমানের খরচ নিয়ে কিছু তথ্য জানতে চেয়েছিলেন তাঁরা। আমার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, সে প্রসঙ্গে আমি কিছুই জানি না।”

আর তৃণমূলের অভিযোগ, এই মামলা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিবিআই-কে কাজে লাগানো হচ্ছে। বহু বছর ধরে কংগ্রেস এই কাজ করে এসেছে। এ বার বিজেপি-ও সেই পথ ধরেছে।

অবসরপ্রাপ্ত আমলা দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পেশা-জীবনে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। রাজীব গাঁধীর জমানায় তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামোন্নয়ন সচিব এবং অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব সচিবের পদে ছিলেন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কেও কাজ করেছেন তিনি। তৃণমূলের বক্তব্য, পেশা-জীবনে কখনওই কোনও বিতর্ক তাঁকে ছুঁতে পারেনি। তাঁর সততা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেনি। ২০১১ সালে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠায় তৃণমূল। আজ সকালে দিল্লির বাড়িতে সিবিআই হানার খবর পেয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সঙ্গে কথা বলেন দেবব্রতবাবু।

সারদা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের আর এক রাজ্যসভার সাংসদ (এখন সাসপেন্ডেড) কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। এ বার দেবব্রতবাবুর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ আনল তারা। যার আর্থিক মূল্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বলে সিবিআইয়ের দাবি। তাদের অভিযোগ, চার বার রাজ্যসভার সচিবালয়ে ভুয়ো বিল জমা পড়েছে দেবব্রতবাবুর তরফে। ২ হাজার টাকা করে বিমানের টিকিট কিনে ১ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা দাবি করেছেন তিনি। রাজ্যসভা সেই বিল অনুমোদন করায় সাংসদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সেই টাকা জমাও পড়েছে।

সিবিআই সূত্রের দাবি, এয়ার ইন্ডিয়া প্রায়ই বিশেষ অফারে একটি টিকিট কিনলে সঙ্গীর টিকিট অনেক কম দামে বিক্রি করে। অভিযুক্ত সাংসদদের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কম দামে টিকিট কেনার পরে বিল জমা দেওয়ার সময় দু’টো টিকিটেরই বেশি দাম দেখানো হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কেউ যাতায়াত না-করেই ভুয়ো বিল জমা দিয়েছেন।

তবে একই সঙ্গে সিবিআইয়ের একটি সূত্রের বক্তব্য, যে সব সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, হতে পারে তাঁদের কেউ কেউ দুর্নীতির বিষয়ে কিছু জানেন না। কারণ সাংসদদের হয়ে তাঁদের ব্যক্তিগত সহায়করাই সাধারণত বিমানের টিকিট কাটেন, বিল জমা করেন। ফলে তাঁরাই কম দামে টিকিট কেটে বেশি দামের টিকিটের ভুয়ো বিল জমা করে থাকতে পারেন। কিন্তু যে হেতু সব বিলেই সাংসদদের সই ছিল, এবং টাকা জমা পড়েছে তাঁদেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে, তাই আইন অনুযায়ী সাংসদরা এর দায় এড়াতে পারেন না। তৃণমূলের তরফে অবশ্য বলা হচ্ছে, ট্রাভেল এজেন্সিগুলোই এয়ার ইন্ডিয়ার কম দামের টিকিট কিনে বেশি দামের টিকিটের বিল ধরিয়েছেন সাংসদদের। দলীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন জানিয়ে দেন, “দেবব্রতবাবু সৎ। ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর একটা চক্র এই কাজ করেছে।”

তৃণমূলের তরফে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হলেও সিবিআই কর্তাদের দাবি, এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। কারণ যে ছয় জন বর্তমান ও প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে সব দলের নেতাই রয়েছেন। রয়েছেন বিজেপির লোকও।

যে তিন জন বর্তমান সাংসদের নাম রয়েছে, তার মধ্যে তৃণমূলের দেবব্রতবাবু ছাড়াও রয়েছেন বিএসপি-র ব্রজেশ পাঠক ও মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের লালমিং লিয়ানা। প্রাক্তন সাংসদরা হলেন, বিজেপি-র জে পি এন সিংহ, রাষ্ট্রীয় লোকদলের মেহমুদ মাদানি ও বিজু জনতা দলের রেণু প্রধান। সকলের বাড়িতেই তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। দিল্লির ন’টি জায়গা ও ওড়িশার একটি জায়গায় তারা তল্লাশি চালিয়েছে। দিল্লির তিনটি ট্রাভেল এজেন্টের অফিসেও হানা দিয়েছে তারা। কী ভাবে এই দুর্নীতির হদিশ পেল সিবিআই?

তার সূত্রপাত কলকাতা থেকেই। গত বছর মার্চ মাসে কলকাতা বিমানবন্দরে এক ব্যক্তিকে ৬০০টি ফাঁকা বোর্ডিং পাস-সহ গ্রেফতার করা হয়। সেখান থেকেই এলটিসি ও সাংসদদের বিমানের টিকিট নিয়ে দুর্নীতির গন্ধ মেলে। জেডি(ইউ)-র রাজ্যসভা সাংসদ অনিলকুমার সাহনি ৯ লক্ষ টাকার বিমানের টিকিট জমা দিয়েছিলেন রাজ্যসভার সচিবালয়ে। সচিবালয়ের আধিকারিকদের সন্দেহ হওয়ায় এয়ার ইন্ডিয়ায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সবই ভুয়ো টিকিট। অভিযোগ যায় কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনে। ভিজিল্যান্স কমিশন সিবিআই-কে তদন্ত করতে বলে। গত নভেম্বরে অনিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সিবিআই। জেরার মুখে অনিল জানান, তাঁর মতো অনেক রাজ্যসভা সাংসদই ভুয়ো টিকিটের বিল জমা দিয়ে বাড়তি টাকা আদায় করেন। এর পরেই শুরু হয় নথিপত্র ঘাঁটাঘাঁটি। আজ সিবিআইয়ের এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, যাবতীয় নথি পরীক্ষার পর দেখা যাচ্ছে, ওই ছয় জনের ক্ষেত্রেই বার বার ভুয়ো বিল জমা পড়েছে। হতে পারে, সাংসদরা নিজেরা কিছু জানেন না। তাঁদের ঘনিষ্ঠ কেউ বা ব্যক্তিগত সহায়করা এই কাজ করছেন। কিন্তু যাঁদের ক্ষেত্রে বার বার এই ধরনের প্রতারণা হচ্ছে, তাঁদের নামেই মামলা করা হয়েছে।

CBI MP from the Rajya Sabha LTC scam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy