Advertisement
E-Paper

বোমায় জখম ‘ফেরার’ আসগর, জল্পনা

পুলিশের খাতায় তিনি গত দেড় বছর ধরে পলাতক। আদালত একসময় তাঁর সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশও জারি করেছিল। ছ’মাস আগে আদালতে চার্জশিট জমা করে অভিযুক্তকে ফেরার বলে দাবি করেছে বিশেষ তদন্তকারী দলও (সিট)। পাড়ুইয়ের সাগর ঘোষ হত্যা মামলার অন্যতম সেই অভিযুক্ত শেখ আসগরই বুধবার সকালে নিজের গ্রাম সাত্তোরে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে জখম হয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে!

নিজস্ব সংবাদদাতা পাড়ুই

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২২
অশান্তির পর চলছে পুলিশি টহল। সাত্তোরে বুধবার। —নিজস্ব চিত্র

অশান্তির পর চলছে পুলিশি টহল। সাত্তোরে বুধবার। —নিজস্ব চিত্র

পুলিশের খাতায় তিনি গত দেড় বছর ধরে পলাতক। আদালত একসময় তাঁর সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশও জারি করেছিল। ছ’মাস আগে আদালতে চার্জশিট জমা করে অভিযুক্তকে ফেরার বলে দাবি করেছে বিশেষ তদন্তকারী দলও (সিট)। পাড়ুইয়ের সাগর ঘোষ হত্যা মামলার অন্যতম সেই অভিযুক্ত শেখ আসগরই বুধবার সকালে নিজের গ্রাম সাত্তোরে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে জখম হয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে!

আর তার পরেই ফের প্রশ্নের মুখে বীরভূম পুলিশের ভূমিকা।

অভিযুক্ত আসগর এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা তথা দলের সাত্তোর অঞ্চল কমিটির সম্পাদক শেখ মুস্তফার (যিনি নিজেও ওই হত্যা-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত) ছেলে। বিজেপি-র অভিযোগ, ওই কারণেই সব জেনেও হাত গুটিয়ে বসেছিল পুলিশ। তাই এ দিন খুনের মামলায় ফেরার ওই ব্যক্তির জখম হওয়ার খবর পেয়েও পুলিশ আসগরকে গ্রেফতার করতে পারেনি। উল্টে, এ রকম কিছু ঘটেছে বলেও মানতে চায়নি জেলা পুলিশ। বীরভূমের পুলিশ সুুপার অলোক রাজোরিয়া দাবি করেন, “সাত্তোরের সংঘর্ষে কেউ জখম হয়েছেন বলে পুলিশের কাছে খবর নেই। ফলে কার কী হয়েছে, তা বলা সম্ভব নয়।” তাঁর সংযোজন, “ওখানে একটা ঝামেলা হয়েছে। বোমাবাজিও হয়েছে। পুলিশ দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করেছে। এখন এলাকা পুরোপুরি শান্ত।” যদিও পুলিশের ওই দাবি ভুল প্রমাণিত হয়েছে সাত্তোর-কসবা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে খোঁজ নিয়ে। জখম হয়ে শেখ আসগরের ভর্তি হওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সেখানকার মেডিক্যাল অফিসার সন্তোষকুমার রায়। এ দিন দুপুরে তিনি বলেন, “সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ শেখ আসগর নামে এক যুবককে কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এনেছিলেন। ডান পায়ের হাঁটুর নীচে পুড়ে যাওয়ার ক্ষত ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।” এ রকম ক্ষেত্রে পুলিশে কেন খবর দিলেন না? সন্তোষবাবুর যুক্তি, “আমার মনে হয়েছিল, কোনও ভাবে আগুনে পুড়ে ক্ষত হয়েছে। তাই পুলিশে খবর দেওয়ার কথা মনে হয়নি। তা ছাড়া কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আছে, আমি কী করে জানব! চিকিৎসক হিসেবে যতটুকু করার দরকার, সেটুকুই মাত্র করেছি।”

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই পঞ্চায়েত ভোটের মুখে পাড়ুইয়ের কসবায় সভা করে নির্দল প্রার্থীদের (মূলত বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী) বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া এবং পুলিশকে বোমা মারার নির্দেশ দলীয় কর্মীদের দিয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। আর ২১ জুলাই রাতে পাড়ুই থানার বাঁধনবগ্রামে গুলিবিদ্ধ হন স্থানীয় কসবা পঞ্চায়েতে নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হৃদয় ঘোষের বাবা সাগরচন্দ্র ঘোষ। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার পরে অনুব্রত, বিকাশ-সহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন নিহতের পুত্রবধূ শিবানী ঘোষ। গত ১৬ জুলাই সিউড়ি আদালতে সিট-এর জমা করা চার্জশিটে অবশ্য মাত্র আট জনের নাম রয়েছে। তাঁরা হলেন, তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল কমিটির সম্পাদক শেখ মুস্তফা, তৃণমূলের কসবা অঞ্চল সভাপতি শেখ ইউনুস-সহ, শেখ আসগর (মুস্তফার ছেলে)। সিট-এর দাবি, ফেরার আসগরই সাগরবাবুর উপরে যারা গুলি চালায়, তাদের অন্যতম।

এ দিন ঠিক কী হয়েছিল? গত এক সপ্তাহ ধরে সাত্তোর পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের জেরে উত্তপ্ত হয়েছে। পুলিশ কোনও ঘটনাই ঠেকাতে পারছে না। তৃণমূলের অভিযোগ, এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বোমা ছুড়তে ছুড়তে সাত্তোর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢুকে পড়ে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই সময় বাসস্ট্যান্ডের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন আসগর এবং তাঁর কিছু অনুগামী। দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় জখম হন তিনি। ঘটনায় আরও দু’জন দলীয় কর্মী-সমর্থকের শরীরে বোমার আঘাত লেগেছে বলে তৃণমূলের দাবি। অভিযোগ, এর পরে তৃণমূলের লোকেরাও পাল্টা বোমাবাজি শুরু করে। পিছু হঠে দুষ্কৃতীরা। জানা গিয়েছে, আহত আসগরকে স্থানীয় সাত্তোর-কসবা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তৃণমূলের নেতারা তাঁকে গোপন কোনও আস্তানায় নিয়ে চলে যায় বলে দলেরই একটি সূত্রের খবর। ঘটনার পরে এ দিন দুপুর সাত্তোর বাসস্ট্যান্ডে দলীয় কার্যালয়ের কাছে মুস্তফা দাবি করে, “ওরা আসলে আমাকেই খুন করার জন্য এসেছিল। সকালের দিকে বাসস্ট্যান্ডে থাকি, সে খবর ওদের কাছে ছিল। বিজেপি নেতা নিমাই দাসের নেতৃত্বে এলাকার এবং বহিরাগত কিছু দুষ্কৃতী বোমাবাজি করতে করতে ঢোকে। বোমার ঘায়ে আমার ছেলে জখম হয়েছে।” কোন ছেলে জখম হয়েছে, তা অবশ্য তিনি খোলসা করেননি। এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই মুস্তফার ইঙ্গিতপূর্ণ জবাব, “জানেন যখন, জিজ্ঞেস করছেন কেন? আমার মুখ দিয়েই কি বলাবেন?”

নিমাইবাবু অবশ্য অভইযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “অপরাধীদের মুখে এ সব কথা মানায় না। মুস্তফা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা বলছেন। ঘটনার সময় আমি বাড়িতেই ছিলাম।” অন্য দিকে, দলের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের অভিযোগ, “কিছু হোক না হোক, তৃণমূল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিজেপি-র নেতা-কর্মীদের নামে অভিযোগ জানাচ্ছে। বুধবার সকালের ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই।” তাঁর দাবি, পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে পদক্ষেপ করল পাড়ুইয়ে শান্তি ফিরে আসবে। এ দিকে, যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি অনুব্রত।

এ দিন ঘটনার খবর পেতেই সিআই (বোলপুর) চন্দ্রশেখর দাস এবং পাড়ুই থানার ওসি অমরজিৎ বিশ্বাসের নেতৃত্বে কম্ব্যাট এবং র্যাফ ঘটনাস্থলে চলে আসে। গ্রামে টহলদারি শুরু হয়। চলে তল্লাশিও। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ঘটনাস্থলে আসেন বোলপুরের এসডিও অম্লানকুসুম ঘোষ। পুলিশকে গ্রামে ঢুকতে দেখে দু’পক্ষের বেশ কিছু লোক পালিয়ে যায়। পুলিশ যদিও সাগর ঘোষ হত্যা মামলার ওই গুরুত্বপূর্ণ অভিযুক্তকে এ দিনও গ্রেফতার করতে পারেনি। এ নিয়ে প্রবল ক্ষুব্ধ নিহত সাগরবাবুর পরিবার। ফোনে এ দিন হৃদয় বলেন, “আমরা পুলিশ-প্রশাসনের কাছে বহুবার জানিয়েছি, আসগর এলাকায় বহাল তবিয়তে ঘুরে বেরাচ্ছে। তাঁর নেতৃত্বে নানা অপরাধ ঘটছে। এ দিনের ঘটনা সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিল।”

sagar ghosh murder parui asghar shaikh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy