Advertisement
১৯ মে ২০২৪

বিরোধী-চক্রান্তের আশঙ্কা, ঘরে সিসিটিভি বসালেন খাদ্যমন্ত্রী

সাবধান! ক্যামেরা চলছে। খাদ্য ভবনে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগে এখন থেকে এ কথা মাথায় রেখেই আপনাকে এগোতে হবে। কারণ, মন্ত্রীমশাই দফতরে তাঁর ঘরে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরা বসিয়ে রেখেছেন। ফলে তাঁর ঘরে দর্শনার্থীর প্রবেশ থেকে বেরিয়ে আসা পর্যন্ত সবই রেকর্ড করে রাখা থাকছে।

সিসিটিভির সামনে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —নিজস্ব চিত্র।

সিসিটিভির সামনে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —নিজস্ব চিত্র।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৪ ০৪:২০
Share: Save:

সাবধান! ক্যামেরা চলছে।

খাদ্য ভবনে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগে এখন থেকে এ কথা মাথায় রেখেই আপনাকে এগোতে হবে। কারণ, মন্ত্রীমশাই দফতরে তাঁর ঘরে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরা বসিয়ে রেখেছেন। ফলে তাঁর ঘরে দর্শনার্থীর প্রবেশ থেকে বেরিয়ে আসা পর্যন্ত সবই রেকর্ড করে রাখা থাকছে। খাদ্যমন্ত্রীর কথায়, ভবিষ্যতে কেউ যদি অভব্য আচরণ, খারাপ ব্যবহার বা অন্য কোনও অভিযোগ তোলেন, ছবির ফুটেজ দেখিয়ে তিনি তার অসারতা প্রমাণ করে দেবেন।

কেন ঘরে ক্যামেরা বসাতে হল? জ্যোতিপ্রিয়বাবুর যুক্তি, “সিপিএম নানা ভাবে আমাকে ফাঁসাতে চাইছে বলে খবর পেয়েছি। আমার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসাররাও সতর্ক করেছেন। তাই পরিস্থিতি বিচার করেই ক্যামেরা বসিয়েছি। আমার কাছে কে আসছে বা ঘরে কী কী হচ্ছে, সবই রেকর্ড থাকছে।” খাদ্যমন্ত্রীর কথায়, “স্বচ্ছতার এর থেকে বড় নিদর্শন আর কী হতে পারে? ক্যামেরা বসিয়ে তো শুধু দর্শনার্থীদের ছবি তুলে রাখছি তা নয়, আমার ছবিও তোলা থাকছে। সিসিটিভি এখন আমার কাজকর্মের আয়নায় পরিণত হয়েছে।”

কিন্তু এ ভাবে ক্যামেরা বসানো কি ন্যায়সঙ্গত?

এক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের কথায়, কোনও প্রকাশ্য স্থানে সিসিটিভি বসানো থাকলে তা জানিয়ে দিতে হয়, যাতে যাঁদের ছবি তোলা হচ্ছে তাঁরা সেটা জানতে পারেন। সে জন্য হয় বিজ্ঞপ্তি দিতে হয় অথবা যে ছবি তোলা হচ্ছে তা মনিটরে দেখাতে হয়। যদি খাদ্যমন্ত্রী দর্শনার্থীদের জানিয়ে ছবি তুলে রাখেন, তাতে অন্যায় কিছু নেই।

খাদ্য দফতরের কর্তারা বলছেন, মন্ত্রীর ঘরে দুটি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ক্যামেরায় ওঠা ছবি মনিটরে দেখানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সুতরাং অনিয়ম কিছু হয়নি।

সত্যিই কি সিপিএমের ষড়যন্ত্রের কারণে এমন পদক্ষেপ, না কি অন্য কিছু? খাদ্য দফতরের অন্দরে এ নিয়ে নানা চর্চা চলছে। দফতরের একাংশের মতে, মন্ত্রী যে জেলায় রাজনীতি করেন, সেখানে সিপিএমের সঙ্গে তাঁর লড়াই তীব্র। প্রকাশ্যেই তিনি সিপিএমের সঙ্গে সংস্রব রাখার বিরুদ্ধে সওয়াল করেন। ফলে সিপিএম তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতেই পারে। পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনায় দলের পর্যবেক্ষক হিসাবে তাঁকে নানা গোষ্ঠীর মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলতে হয়। সে ক্ষেত্রে দলের গোষ্ঠীর নেতারাও মন্ত্রীকে ফাঁসাতে পারেন। কেউ কেউ আবার বলেছেন, খাদ্য দফতরের চুরি-জোচ্চুরি সর্বজনবিদিত। মন্ত্রী মৌচাকে ঢিল মারতে গেলে পাল্টা ষড়যন্ত্রও হতে পারে। জ্যোতিপ্রিয়বাবুও এ যুক্তি মেনে নিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “দফতরে চোর ধরতেই দিন কাবার হচ্ছে। তার প্রতিক্রিয়ায় একটা আঘাত তো আসতেই পারে।”

খাদ্য দফতরের অন্য একটি অংশ আবার মনে করছে, সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার জেরেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে গত বছর এক মহিলা আইনজীবীর অস্বাভাবিক মৃত্যু, গোয়ার হোটেলে সাংবাদিক তরুণ তেজপালের যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া কিংবা প্রাক্তন বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মহিলা ইন্টার্নের অভিযোগ তার পর থেকেই অনেকে সতর্ক হয়েছেন। কলকাতার বিভিন্ন সিনিয়র আইনজীবী মহিলা সহকারী নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বলে খবর। খাদ্য দফতরের অনেকের মতে, খাদ্যমন্ত্রীর ঘরে ক্যামেরা বসানোর পিছনে এই সব কথাও মাথায় রাখা হয়েছে।

তবে খাদ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে সাধুবাদই জানিয়েছেন মন্ত্রিসভার সহযোগীরা। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “সাবধানের মার নেই।” পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র তো জ্যোতিপ্রিয় মডেল অনুসরণের পক্ষপাতী। তিনি বলেন, “প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। দিনকাল যা পড়েছে তাতে, আমাকেও সেই পথে যেতে হবে।” যুব কল্যাণ ও আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এখনই ক্যামেরা বসানোর পক্ষপাতী নন। তিনি বলছেন, “মহাকরণে সিসিটিভি বসানো রয়েছে। নতুন করে আর ঘরে ক্যামেরা বসাব কেন? তবে জ্যোতিপ্রিয়বাবু নিশ্চয় প্রয়োজনীয়তা বুঝেছেন।” ক্যামেরা বসানোর কথা শুনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু খোলাখুলিই বলেন, “যথাযথ সিদ্ধান্ত। অনেক সময় মহিলা দর্শনার্থীরা বিপদের কারণ হতে পারেন। মন্ত্রীর আশঙ্কা অমূলক নয়।” তিনিও কি ক্যামেরা বসাবেন? ব্রাত্যবাবুর জবাব, “না না। এখনও তার প্রয়োজন হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jyotipriyo mallick
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE