জন্মানোর আগেই নামকরণ!
বঙ্গোপসাগরে বিশাখাপত্তনমের ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি গভীর নিম্নচাপ তৈরি হয়। সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হওয়ার কথা শুক্রবার। সেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম কি হবে, তা ঠিক হয়ে গিয়েছে। নতুন ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে ‘অশোবা’। এটি শ্রীলঙ্কার দেওয়া নাম। সিংহলী ভাষায় অশোবা কথাটির মানে ‘অশোভন’ বা ‘অ-সুন্দর’।
শুধু অশোবা নয়। উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অদূর ভবিষ্যতে যে সব ঘূর্ণিঝড় হবে, তাদের নামও ঠিক হয়ে রয়েছে। যেমন অশোবা-র পরের ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে ‘কোমেন’। তার পরেরটি ‘চপলা’। চপলা-র পরে আসবে ‘মেঘ’। যথাক্রমে তাইল্যান্ড, বাংলাদেশ ও ভারতের দেওয়া। এ ভাবে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২৪টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক হয়ে আছে।
আসলে কোন ঘূর্ণিঝড় কবে কোথায় তৈরি হয়েছিল, তাদের গতিবেগ কত ছিল তা সহজে মনে রাখার সুবিধার জন্য উত্তর ভারত মহাসাগরের (আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর সহ) উপকূলবর্তী আটটি দেশ (বাংলাদেশ, ভারত, মলদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও তাইল্যান্ড) মিলে তৈরি করেছিল ৬৪টি নামের একটি তালিকা। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ওই তালিকা অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হচ্ছে। ২০০৯-এর আয়লা ঘূর্ণিঝড়টির নাম এসেছিল ওই তালিকা থেকেই। নামটি মলদ্বীপের দেওয়া। আবার গত মাসের হুদহুদ (বার্তাবাহী পাখি) ঝড়ের নামকরণ করেছে ওমান। গত মাসে শেষের দিকে আরব সাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘নিলোফার’ (শালুক ফুল) নামটি পাকিস্তানের দেওয়া।
দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রে খবর, শুধু ভারত মহাসাগর নয়, বিশ্বের যে সব জায়গায় সামুদ্রিক ঝড় হয়, সেখানে কয়েকটি দেশকে নিয়ে তৈরি হয়েছে এ রকমই বিভিন্ন অঞ্চল। তারা নিজেদের মতো করে সামুদ্রিক ঝড়ের নামের তালিকা তৈরি করেছে। যেমন চিন-জাপান-ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়ার মতো ১৪টি দেশকে নিয়ে তৈরি হয়েছে উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। আমেরিকাও এই অঞ্চলের অর্ন্তভূক্ত। এই অঞ্চলের সামুদ্রিক ঝড়ের নাম টাইফুন। ১৪টি দেশ ১০টি করে নাম দিয়েছে। তার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে ১৪০টি নামের তালিকা। দেশের নামের আদ্যাক্ষর অনুযায়ী দেশগুলিকে পর পর সাজানো হয়েছে। বঙ্গোপসাগর বা আরব সাগরের যেমন হুদহুদের পরে নিলোফার, নিলোফারের পরে অশোবা আসবে, তেমনই উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে পর পর তৈরি হবে সমুদ্র ঝড় মান-ই, উসাগি, পাবুক। প্রথমটি হংকং, দ্বিতীয়টি জাপান এবং তৃতীয়টি লাওসের দেওয়া নাম।
আবার উত্তর অতলান্তিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্রঝড় হারিকেনের নামকরণ হয় সেই অঞ্চলের সদস্য দেশগুলির দেওয়া নাম থেকে। মোট ১২৬টি নাম রয়েছে সেখানে। আর্থার, বার্থ, ক্রিস্টোফার, ডলি নামের সমুদ্রঝড়গুলো একের পর আছড়ে পড়েছে ওই অঞ্চলের দেশগুলোতে। পূর্ব ও মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক ঝড়গুলোর জন্য তৈরি হয়েছে ১৬৪টি নামের তালিকা। একই ভাবে অস্ট্রেলীয় অঞ্চলে সম্ভাব্য হারিকেনদের নামের তালিকায় রয়েছে অ্যালেসিয়া, ব্রুস, ক্রিস্টিন ও ডিলান। তবে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণ অতলান্তিক অঞ্চল এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক ঝড়ের হার খুবই কম। সেখানে তাই কোনও নির্দিষ্ট তালিকা তৈরি হয়নি। কখনও কোনও ঝড় হলে তার তাৎক্ষনিক নাম দেওয়া হয়।
এই নামকরণের সুবিধে কি? হাওয়া অফিসের এক কর্তা বলেন, “১৯৯৯ সালে ওড়িশায় যে সুপার সাইক্লোন হয়েছিল, এখন তার খোঁজ করতে হলে তার দিন, তারিখ সব উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু আয়লা কিংবা হুদহুদ দিয়ে খোঁজ করলেই সবিস্তার তথ্য মেলে। নাম থাকলে তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করতে সুবিধা হয়। ভবিষ্যতের গবেষকদের তথ্য খুঁজতে অযথা সময় নষ্ট করতে হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy