Advertisement
E-Paper

বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে ওয়েবকুটার মঞ্চে পার্থ

রাজ্যে বিজেপির উত্থান রুখতে কোনও দলই যে এখন তাঁর কাছে অচ্ছুত নয়, ইদানীং প্রায় নিয়ম করেই সে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী সিপিএমকেও যে তিনি ব্রাত্য করে রাখার পক্ষপাতী নন, তেমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন মমতা। শনিবার বাম-নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা)-র রাজ্য সম্মেলনে কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর সেই বার্তাই দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বললেন, “আমাদের পথ ও মত আলাদা হতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য একটাই, রাজ্য ও দেশে শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়ন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৮
খোশমেজাজে। ওয়েবকুটা-র রাজ্য সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার বিরাটির তরুণ সেনগুপ্ত স্মৃতি ভবনে।  ছবি:সুদীপ ঘোষ।

খোশমেজাজে। ওয়েবকুটা-র রাজ্য সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার বিরাটির তরুণ সেনগুপ্ত স্মৃতি ভবনে। ছবি:সুদীপ ঘোষ।

রাজ্যে বিজেপির উত্থান রুখতে কোনও দলই যে এখন তাঁর কাছে অচ্ছুত নয়, ইদানীং প্রায় নিয়ম করেই সে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী সিপিএমকেও যে তিনি ব্রাত্য করে রাখার পক্ষপাতী নন, তেমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন মমতা।

শনিবার বাম-নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা)-র রাজ্য সম্মেলনে কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর সেই বার্তাই দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বললেন, “আমাদের পথ ও মত আলাদা হতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য একটাই, রাজ্য ও দেশে শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়ন। তাই শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে খোলা মনে আবেদন জানাতে এসেছি আসুন সবাই একজোট হয়ে কাজ করি।” তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী বিশেষ কিছু হিন্দু সংগঠনের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন, দীর্ঘ সময় কাটাচ্ছেন জ্যোতিষীর সঙ্গে। তাতে ছাত্রদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।”

লড়াইটা যে বিজেপির সঙ্গে এবং সেই লড়াইয়ে বামপন্থী সংখ্যাধিক্যের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটাকে পাশে চান তাঁরা, তৃণমূলের মন্ত্রী ও সাংসদের কথায় তারই ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্য-রাজনীতিতে বিজেপির উত্থান যে তাঁদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে, মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কথাবার্তায় তা বার বার এসেছে। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তথা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ানোর পাশাপাশি এই বিরেধিতায় রাজনৈতিক বন্ধুর খোঁজ করে চলেছেন ক্রমাগত। সে বন্ধু সিপিএম-সহ বামপন্থীরা হলেও যে তাঁর তেমন আপত্তি নেই, সে কথাও এ দিন আবার বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

রাজ্য রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রেও ঢুকে পড়ছে বিজেপি। এক দিকে ছাত্র সংগঠন এবিভিপি কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের শাখা খুলছে, পথে নেমে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। অন্য দিকে বামপন্থী ও তৃণমূলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ শিক্ষকদের একাংশ বিজেপির ছত্রচ্ছায়ায় পৃথক সংগঠন গড়ার কথা ভাবছেন। সব দিক বিচার করে তাই বামপন্থী শিক্ষকদের পাশে পেতে মরিয়া তৃণমূল সরকার।

শনিবার সম্মেলনে হাজির ওয়েবকুটা-র অনেক সদস্যেরই মনে হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী এবং তাঁর সঙ্গী তৃণমূল সাংসদ মুখ্যমন্ত্রীর সেই বার্তাই তাঁদের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। সম্ভবত সেই কারণেই ওয়েবকুটা-র বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সংগঠন ছেড়ে আসা শিক্ষক-নেত্রী কৃষ্ণকলি বসুও এ দিন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। ওয়েবকুটা-র নেতৃত্ব এখনও বামপন্থীদেরই হাতে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ এবং সভাপতি সিপিআই অনুগামী শুভোদয় দাশগুপ্ত। ওয়েবকুটা ছেড়ে বেরিয়ে আসা কৃষ্ণকলিদেবী এখন শাসক দলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র সভানেত্রী।

নিজেদের বক্তৃতায় পার্থবাবু এবং সৌগতবাবু এ দিন ওয়েবকুটা সম্পর্কে নানা প্রশংসা-বাক্য শুনিয়েছেন। অন্য দিকে, শ্রুতিনাথবাবুও রাজ্য সরকারের সমালোচনার বদলে সৌহার্দ্যের কথাই বলেন। যদিও শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, নয়া বেতনক্রম কার্যকর হওয়ার পরে তাঁদের মোটা অঙ্কের বেতন বকেয়া রয়েছে। তা নিয়ে সংগঠন জোরদার আন্দোলন না-করায় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমছে। সেই বকেয়া আদায় করাই এখন নেতৃত্বের পাখির চোখ। সংগঠনের সভাপতি অবশ্য এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের কোনও অভিসন্ধি নেই। আমরা চাই, শিক্ষক আন্দোলন চলুক একটিই ছাতার তলায়।” শ্রুতিনাথবাবুও একই দাবি জানান।

সম্মেলনের মঞ্চে লাগানো ব্যানারে সাবেক লালের বদলে এ বার যে নীল-সাদাই প্রধান, সেটাও এ দিন হাজির সদস্যদের নজরে পড়েছে। তাঁদের মতে, মনের কথা যা-ই হোক, সংগঠন কার্যত সরকারকে বন্ধুত্বের বার্তাই দিতে চেয়েছে। পার্থবাবু, সৌগতবাবু ছাড়াও এ দিন মঞ্চে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও।

এ দিন বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ ওই অনুষ্ঠানে আসেন শিক্ষামন্ত্রী। আনুষ্ঠানিক ভাবে বরণ করে নেওয়ার পরে পার্থবাবুর পিএইচডি পাওয়া উপলক্ষে তাঁকে কলম উপহার দেন শ্রুতিনাথবাবু। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “ছাত্রাবস্থা থেকে এই সংগঠনকে দেখছি। এর আন্দোলন, মিছিল দেখেছি। এই সভায় নিজের কথা জানানোর সুযোগ পেয়ে আমি খুশি।”

সৌগতবাবু বলেন, “ওয়েবকুটার মতো সর্বদলের প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠনের অনুষ্ঠানে হাজির থেকে পার্থবাবু মন্ত্রী-সুলভ কাজই করেছেন।” তা হলে ওয়েবকুটার থেকে আলাদা হয়ে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন গড়ার প্রয়োজন কী ছিল, তা অবশ্য ব্যাখ্যা করেননি তৃণমূলের ওই সাংসদ।

partha chattopadhyay jadavpur university
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy