Advertisement
E-Paper

ভুল করেছি, দলে নিন, মমতাকে চিঠি আরাবুলের

ক্ষমা চেয়ে শাস্তি এড়িয়েছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। ‘স্লিপ অব টাং’ (মুখ ফস্কে কথা বলা)-র কারণ দেখানো বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও দলনেত্রীর সহানুভূতি পেয়েছেন। সেই পথেই হাঁটলেন ভাঙড়ের বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে আরাবুল জানালেন, তিনি ভুল করে ফেলেছেন। ভুলটা ঠিক কী ধরনের সে প্রশ্নের জবাব অবশ্য দেননি এই প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতেও তা ভেঙে বলেননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৬
ভাঙড় ২ ব্লক অফিসে আরাবুল ইসলাম। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।

ভাঙড় ২ ব্লক অফিসে আরাবুল ইসলাম। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।

ক্ষমা চেয়ে শাস্তি এড়িয়েছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। ‘স্লিপ অব টাং’ (মুখ ফস্কে কথা বলা)-র কারণ দেখানো বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও দলনেত্রীর সহানুভূতি পেয়েছেন। সেই পথেই হাঁটলেন ভাঙড়ের বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম।

শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে আরাবুল জানালেন, তিনি ভুল করে ফেলেছেন। ভুলটা ঠিক কী ধরনের সে প্রশ্নের জবাব অবশ্য দেননি এই প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতেও তা ভেঙে বলেননি। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে মেনেছেন, “ভাঙড়ে দলীয় প্রধানদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার পরিস্থিতি তৈরি করা এবং ভাইফোঁটার দিন ভাঙড়ে দলীয় কর্মী খুনের ঘটনায় থানায় গিয়ে একে-তাকে শাসানি দেওয়ার অভিযোগে নাম জড়িয়ে গিয়েছে। সেটা উচিত হয়নি।” নেত্রীর কাছে আরাবুলের বার্তা, তিনি দলের অনুগত কর্মী। ভুলের জন্য তাঁকে ক্ষমা করা হোক। দলেও ফিরিয়ে নেওয়া হোক।

এই ক্ষমাপ্রার্থনার পরে কি আরাবুলকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে? তৃণমূলের মহাসচিব তথা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কোনও মন্তব্য করেননি।

তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা, খাগড়াগড়-বিস্ফোরণ, মাখড়া-কাণ্ড নিয়ে শাসক দলের অস্বস্তির অভাব নেই। তৃণমূল নেতা হিসেবে আরাবুলের যে সব কীর্তি পরপর সংবাদ শিরোনামে এসেছে, তাতেও রাজ্যবাসীর একটা বড় অংশের কাছে দল সম্পর্কে ভুল বার্তা গিয়েছে। গত কয়েক বছরে কখনও পুলিশের উপরে চড়াও হওয়া, কখনও শিক্ষিকাকে জলের জগ ছুড়ে মারা, কখনও বা সিপিএম নেতা রেজ্জাক মোল্লাকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।

তৃণমূলের একটি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশি হেফাজতে থাকার সময়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আরাবুল। সে সময় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেখানে আরাবুলের সঙ্গে দেখা না করে, মমতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষুব্ধ। এর পরেও আরাবুলকে সংযত হতে দেখা যায়নি। তা ছাড়া, ভাঙড় ২ ব্লকে দলের দুই পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার বিষয়টিও নেতারা ভাল চোখে দেখেননি। সর্বোপরি ভাইফোঁটার দিন বেঁওতার তৃণমূল নেতা রমেশ ঘোষাল হত্যায় যুক্ত হওয়ার অভিযোগ ওঠে আরাবুলের বিরুদ্ধে। তার পরে থানায় গিয়ে রীতিমতো ‘দাদাগিরি’ করে অভিযোগকারীদের উপরে চাপ সৃষ্টি করাতেও অভিযুক্ত আরাবুল। রাজ্যে বিরোধীরা, বিশেষ করে বিজেপি যখন ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে, তখন এই ঘটনার পরে আরাবুলকে শাস্তি দেওয়া ছাড়া দলনেত্রীর কাছে আর কোনও উপায় ছিল না বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

অভিযুক্ত পাঁচু মণ্ডলের স্ত্রী লক্ষ্মী মণ্ডল (বাঁ দিকে) ও নিহত রমেশ ঘোষালের
আত্মীয়া লক্ষ্মী ঘোষাল। শুক্রবার বারুইপুর আদালতে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

তবে ক্ষমা প্রার্থনার চিঠি পাঠানোর পরে আরাবুলের প্রতি দলনেত্রী কি কিছুটা নরম হবেন? তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, নেত্রীর মনোভাব এখনও যথেষ্টই কড়া। পরিস্থিতি খারাপ বুঝেই ক্ষমাপ্রার্থনার চিঠি নিয়ে আরাবুল সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেননি। এ দিন দুপুরে তাঁর এক সঙ্গী এই চিঠি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসে। মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি দলের আরও তিন শীর্ষ নেতার কাছে আরাবুল ক্ষমাপ্রার্থনা করে চিঠি পাঠাবেন বলে জানা গিয়েছে। আরাবুলের এক ঘনিষ্ঠ নেতার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর রাগ কমাতে ওই তিন নেতা যাতে সচেষ্ট হন, সে জন্যই চিঠি পাঠাচ্ছেন আরাবুল।”

তবে শাস্তি ঘোষণার পর থেকে নিজেকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখলেও, এ দিন ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন আরাবুল। দুপুর আড়াইটে নাগাদ গাড়িতে চেপে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। পরনে নীল জিন্স ও হাল্কা গোলাপি চেক-শার্ট। চোখেমুখে উদ্বেগের ছাপ। গাড়ি নিয়ে ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে যান তিনি। ভিড় করেন অনুগামীরা। অফিসে অবশ্য অচেনা কারও সঙ্গে দেখা করেননি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরাবুল। ঘণ্টা দু’য়েক পরে অফিস ছাড়ার আগে বলেন, “বহু প্রকল্পের কাজ চলছে। অনেক ফাইলে সই করার প্রয়োজন ছিল। তাই এসেছিলাম।”

এ দিন নিহত রমেশ ঘোষাল ও বাপন মণ্ডলের খুনের ঘটনায় বারুইপুর আদালতে হাজির করানো হয়েছিল প্রাক্তন প্রধান পাঁচু মণ্ডল ও তাঁর দুই ছেলেকে। বিচারক ধৃতদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। পাঁচুর আইনজীবী হাফিজুর রহমান বলেন, “পুলিশ জোর করে আমার মক্কেলদের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে। সেই বিষয়টি বিচারককে জানিয়েছি।”

arabul islam TMC murder bhangar case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy