Advertisement
E-Paper

মুকুল তোলাবাজ, প্রকাশ্যেই তৃণমূল নেতার বিষোদ্গার

খাতায়-কলমে মুকুল রায় এখনও তৃণমূলের নেতা। কিন্তু দল থেকে তাঁর প্রস্থান আসন্ন ধরে নিয়ে বিষোদ্গার শুরু করেছেন সংগঠনে অনেক নীচের স্তরে থাকা নেতারাও। বুধবার সকালে যেমন বর্ধমানের মঙ্গলকোটে এক কর্মিসভায় জেলা পরিষদ সদস্য বিকাশ চৌধুরী দাবি করেন, “মুকুল রায়ের ক্ষমতা কমায় তৃণমূল রাহুমুক্ত হল। মুকুল রায় এক জন তোলাবাজ। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় তোলাবাজের নাম মুকুল রায়।”

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৫

খাতায়-কলমে মুকুল রায় এখনও তৃণমূলের নেতা। কিন্তু দল থেকে তাঁর প্রস্থান আসন্ন ধরে নিয়ে বিষোদ্গার শুরু করেছেন সংগঠনে অনেক নীচের স্তরে থাকা নেতারাও।

বুধবার সকালে যেমন বর্ধমানের মঙ্গলকোটে এক কর্মিসভায় জেলা পরিষদ সদস্য বিকাশ চৌধুরী দাবি করেন, “মুকুল রায়ের ক্ষমতা কমায় তৃণমূল রাহুমুক্ত হল। মুকুল রায় এক জন তোলাবাজ। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় তোলাবাজের নাম মুকুল রায়।”

বিকাশবাবুর কাছে দলের সদ্যপ্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে তোলাবাজির কী প্রমাণ আছে, তা অবশ্য জানা যায়নি। মন্তব্যের সপক্ষে কোনও প্রামাণ্য নথি পেশ করেননি ওই কর্মাধ্যক্ষ। তাঁর অনুগামীদের অভিযোগ, মঙ্গলকোট-সহ গোটা জেলা জুড়ে দলের নাম করে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের ঠিকাদার এবং আরও নানা লোকের থেকে তোলা নেওয়া হয়। মুকুলের মদতেই দিনের পর দিন এই তোলাবাজি চলত, তার ভাগও মুকুল পেতেন বলে বিকাশ-ঘনিষ্ঠদের দাবি।

বিকাশবাবুর বক্তব্য প্রসঙ্গে সন্ধ্যায় নয়াদিল্লি থেকে মুকুল বলেন, “একটা মানুষ তো সবার কাছে ভাল হতে পারে না। আমাকে হয়তো ওঁর ভাল লাগে না।” তবে মুকুল-ঘনিষ্ঠ এক নেতার মন্তব্য, “ও তো বলবেই। কেননা, ওর নামে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় মুকুলদা ওকে ব্লক সভাপতি পদ থেকে সরাতে বাধ্য হয়েছিলেন।”

বিকাশবাবুর অবশ্য সন্ধ্যার পরে তোলাবাজির অন্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “তোলাবাজ বলতে শুধু টাকার কথা ভাবলে ভুল হবে। আমি বলতে চেয়েছি, মঙ্গলকোটের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা অসাধু নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করেছেন। ওই সব নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, তাঁদের অভিযোগপত্রই অসাধু নেতাদের হাতে চলে আসত।” এত দিন এ নিয়ে মুখ খোলেননি কেন? বিকাশবাবুর দাবি, “এত দিন সেই পরিস্থিতি ছিল না।”

এ দিন সকাল ৯ টা নাগাদ খুদরুন মোড়ে কমবেশি আড়াইশো কর্মী নিয়ে সভা করেন বিকাশবাবুরা। দলে মুকুল-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী ছিলেন তাঁদের অন্যতম নিশানা। গত বিধানসভা নির্বাচনে তিনি সামান্যের জন্য হেরে গিয়েছিলেন। পরের বার তাঁকেই ফের প্রার্থী করা হতে পারে বলে বারবার জানিয়েছেন মঙ্গলকোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত, তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (তিনিও মুকুল-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন)। এঁদের দাপটে এক সময়ে রক্ত দিয়ে তৃণমূল করে আসা কর্মীরা বঞ্চিতদের দলে ভিড়ে গিয়েছেন বলে বিকাশবাবুদের ক্ষোভ।

বস্তুত, অপূর্ব গোষ্ঠীকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেদের শক্তি দেখানোই ছিল এ দিন বিকাশবাবুদের সভার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। তাঁদের দাবি, নিগন, কৈচর ১ ও ২, ক্ষীরগ্রাম ও শিমুলিয়া ১ এলাকা থেকে কর্মীরা এসেছিলেন। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যেরাও হাজির ছিলেন। প্রত্যেক বক্তাই নাম না করে অপূর্ববাবুর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। তাঁকে ব্লক সভাপতি পদ থেকে অপসারণের দাবিও তোলা হয়। বক্তাদের এক জন বলেন, “মুকুল রায়ের মদতে এক নেতা নিজেকে দলের চেয়ে বড় ভাবতে শুরু করেছেন। তিনি পুরনো কর্মীদের মর্যাদা দেন না। এ বার ওই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।” মঙ্গলকোটে তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের নেতা লিয়াক আলি বলেন, “গোটা রাজ্যের মতো মঙ্গলকোটেও তৃণমূল রাহুমুক্ত হোক, তাই চাই। এখানকার ১৫টি পঞ্চায়েতের কর্মী-সমর্থকরা ওই নেতার অপসারণ চেয়ে দলের সভানেত্রীকে চিঠি দেবেন।” যা শুনে অপূর্ববাবু বলেন, “দলই সব বিচার করবে।”

তবে তৃণমূলেরই একাংশের প্রশ্ন, মুকুল রায় যেখানে এখনও দলের নেতা, প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে কুকথা বলা শৃঙ্খলাভঙ্গ বলে গণ্য হবে না কেন? দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকের মতেই, এ ভাবে প্রকাশ্যে বিষোদ্গার করা আদৌ উচিত হচ্ছে না। যদিও সে ক্ষেত্রে যে কড়া অবস্থান নেওয়ার কথা, তা-ও তাঁরা নিচ্ছেন না। কেননা দলনেত্রীর নেকনজরে পড়ার জন্যই অনেকে এ ভাবে মুখ খুলছেন বলে তাঁদের ধারণা। আর সেই কারণেই এই নিয়ে কেউ বিবৃতি দিতে চাইছেন না। এ দিন দলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও শুধু বলেন, “আমি সবটা না জেনে কিছু বলতে পারব না।”

mukul roy extotioner tmc leaders
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy