হামলায় আহত এবিভিপি সমর্থক। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
বাম, কংগ্রেস বা তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘাত, মারামারি, থানা-পুলিশ এ সবই চেনা ছবি পশ্চিমবঙ্গে। রাজ্যে ছাত্র-রাজনীতির সেই চেনা ছকে এ বার নতুন মুখ অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। শুক্রবার রাজ্যের ২০টি জেলায় কর্মসূচি ছিল বিজেপির এই ছাত্র সংগঠনের। এ রাজ্যে তাদের এত বড় মাপের কর্মসূচি এই প্রথম। কার্যত প্রথম বার ময়দানে শক্তি জাহির করতে নেমেই তারা বুঝিয়ে দিল, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে শাসক দল বা তাদের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে শক্ত চালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য। এবিভিপি এ দিন তার সীমিত শক্তি নিয়েই আগাগোড়া ময়দানে থেকে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনকে মোকাবিলা করেছে। সড়ক অবরোধ করে বেগ দিয়েছে জনতা ও পুলিশ-প্রশাসনকে। বারাসতে এবিভিপি-র মিছিলে এ দিন হামলাও হয়েছে। এবিভিপি-র অভিযোগ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) এ কাজ করেছে।
কেন্দ্রে এখন বিজেপির সরকার। রাজ্যে সংগঠন বাড়ছে তাদের। বিজেপির ছত্রচ্ছায়ায় চলে যাচ্ছে বামেদের জমি। এই রকম একটা সময়ে পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিসর দখলে নেমেছে এবিভিপি। শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্র ফেরানোর দাবি তোলার পাশাপাশি, অনুপ্রবেশ, মৌলবাদী সন্ত্রাসের মতো যে সব বিষয় নিয়ে বিজেপি সরব সেই বিষয়গুলিও সামনে তুলে আনছে তারা। যে কারণে খাগড়াগড়-কাণ্ডের সূত্র ধরে অবৈধ মাদ্রাসা বন্ধ করারও দাবিতেও এ দিন সরব হয় এবিভিপি। যা তাদের উৎস সংগঠন বিজেপির ভোট-মেরুকরণের রাজনীতিরই অঙ্গ।
এবিভিপি-র শ’তিনেক সমর্থক বেলা ১১টা নাগাদ বারাসতের কলোনি মোড়ে জড়ো হন। পথসভা করে তাঁরা মিছিল করে জেলাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি দিতে যান। মিছিল বারাসত কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সামনের ১১ নম্বর লেভেল ক্রসিং বন্ধ ছিল। তখনই বারাসত কলেজের কিছু টিএমসিপি সমর্থকের সঙ্গে এবিভিপি সমর্থকদের বচসা বাধে। হাতাহাতি ও ইট ছোড়াছুড়ি হয়। অভিযোগ, সেই সময় টিএমসিপি সমর্থকরা রড নিয়ে এবিভিপি-র কর্মীদের আক্রমণ করে। আহত ১২ জনের মধ্যে ৯ জন এবিভিপি এবং ৩ জন টিএমসিপি সমর্থক। দু’পক্ষই থানায় অভিযোগ করলেও এবিভিপি-র ৫০ জনকে গ্রেফতার হন। বাকি ১৯ জেলায় অবশ্য এবিভিপি-র এ দিনের কর্মসূচি শান্তিতে মিটেছে।
তবে বারাসতে ওই হামলায় গুটিয়ে যাননি এবিভিপি সমর্থকরা। বরং প্রতিবাদে রেল গেটের সামনে, হৃদয়পুর, হাবরা, ঠাকুরনগর ও চাঁদপাড়া স্টেশনে অবরোধ করেন। কলকাতা থেকে বনগাঁ ও বসিরহাট শাখার সব ট্রেন আটকে পড়ে। কলকাতা-শিলিগুড়ি সড়ক যোগাযোগও থমকে যায়। অবরোধকারীরা লাইনে মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল ও টায়ার পোড়ান। অবরোধে যোগ দেন বিজেপির স্থানীয় নেতারা। অবরোধ তুলতে উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী যায়। নামাতে হয় র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স। এবিভিপি কর্মীরা বারাসত থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সন্ধেয় বারাসত শহরে মিছিল ও সভা হয়।
এবিভিপি-র রাজ্য সহসম্পাদক (সংগঠন) বিশ্বজিৎ সরকারের দাবি, “সিমি-র নেতাকে সাংসদ করেছে তৃণমূল। আমাদের ছাত্র সংগঠনের উপর চড়াও হয়েছে। এমন দেশদ্রোহী শক্তিকে নিষিদ্ধ করতে হবে।” বিজেপি নেতা তথাগত রায় বলেন, “তৃণমূলের বুকে কাঁপন ধরেছে। তাই যত দিন যাবে, তত এমন হামলা বাড়বে।”
তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বারাসত সান্ধ্য কলেজে গিয়ে শনিবার ‘কালা দিবস’ পালন করার ডাক দেন। বিজেপি-সহ সব বিরোধী পক্ষেরই প্রশ্ন, যারা হামলায় অভিযুক্ত, তারাই আবার কালা দিবস পালন করবে কোন মুখে?
তবে বিজেপি বাদে রাজ্যের অন্য বিরোধী শক্তিগুলির অভিযোগ, এবিভিপি-র উপর হামলা করে তৃণমূলই বাড়তি প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। রাজ্য রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ থেকে ফায়দা তুলতেই টিএমসিপি-র ওই হামলা কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছে তারা। অবরোধ না তুলে পুলিশ দু’ঘণ্টা ধরে তা চলতে দিল কেন, উঠেছে সে প্রশ্নও। কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলেন, “তৃণমূল নিজেই হয়তো চাইছে, ভোটটা আরও মেরুকৃত হোক!” বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্ররও বক্তব্য, “তৃণমূলই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে ডেকে এনেছে এবং পুষ্ট করেছে। বিজেপিকে ঠেকাতে হলে তৃণমূলকেই উৎখাত করতে হবে।” টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র অবশ্য সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “হামলা আমাদের সংগঠন করেনি। এবিভিপি-ই হামলা করেছে ফায়দা তোলার জন্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy