‘দাদা’ বলছেন, “সব নেতাই জেলে যান। এটাই স্বাভাবিক। জওহরলাল নেহরু, গাঁধীজি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সবাই জেলে গিয়েছেন।”
আড়ালে এক অনুগামী বলছেন, “কোথায় দাদা, আর কোথায় গাঁধী-সুভাষ! কোথায় স্বাধীনতা সংগ্রাম, আর কোথায় সারদার টাকা চুরির অভিযোগ। কীসে আর কীসে!”
আজ, শুক্রবার বেলা ১১টায় তাঁকে সারদা মামলায় জেরার জন্য ডেকেছে সিবিআই। সাক্ষী হিসেবেই ডেকেছে। অথচ বৃহস্পতিবার মদন মিত্রের কথাবার্তা শুনলে মনে হবে, তিনি ধরেই নিয়েছেন যে, জেলে যাচ্ছেনই!
আর সেই কারণেই হয়তো গাঁধী-নেহরু-সুভাষের শরণ নেওয়া। দলীয় অফিসে গিয়ে চেলাদের সাহস জোগানোর চেষ্টা। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাতঃস্মরণীয় তিন স্তম্ভের জেলযাত্রার কথা বলে তাঁদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা। এবং প্রাণপণে বোঝানোর চেষ্টা, ‘দাদা’ জেলে যেতে হলে যাবেন। কিন্তু এ নিয়ে তিনি তেমন উদ্বেগে নেই।
প্রশ্ন হল, সে কথায় কর্মীরা ভরসা পেলেন তো? আর পরিবহণমন্ত্রী নিজে?
মদনের ‘প্যানিক-অ্যাটাক’-এর পূর্ব ইতিহাসের কথা মাথায় রেখেই তাঁর পরিচিত কেউ কেউ ঈষৎ চিন্তিত। এসএসকেএমে থাকার সময় সতীর্থ সাংসদ সৃঞ্জয় বসুর গ্রেফতার হওয়ার খবর পেয়ে প্রায় দম আটকে গিয়েছিল মদনের। বলেছিলেন, “মনে হচ্ছে কেউ যেন গলা টিপতে আসছে।” তাই পরিচিতরা বলছেন, সিবিআই-সাক্ষাতের সময় যত এগিয়ে আসছে, নিজের স্নায়ুর সঙ্গেই লড়াইটা ততই কঠিন হয়ে উঠছে মদনের। তাই খুঁজছেন ভরসার খড়কুটো।
অনুগামীদের এক জন অবশ্য হাল ছেড়ে দেওয়া গলায় বললেন, “এ সব ছেলেভোলানো কথায় কি আর ভরসা পাওয়া যায়? আমাদের এখন একটাই কাজ। শুক্রবার কী করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।”
অর্থাৎ, ব্যবস্থা হবে অবস্থা বুঝে। সে জন্যই এ দিন সকাল থেকে মদন-অনুগামীদের আনাগোনা বেড়েছে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের আশপাশে। নীল টি-শার্ট, কালো জিন্স, স্নিকার্স পরা ছ’ফুটের এক যুবক বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন সিজিও কমপ্লেক্সের প্রবেশপথগুলি। কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী জিজ্ঞেস করেন, “কাকে খুঁজছেন?” উত্তর না দিয়ে হনহন করে পিছন দিকের গেটের বাইরে চলে যান ওই যুবক। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মোটরবাইকে চড়ে রওনা হন সিটি সেন্টারের দিকে।
এই রকম বেশ কিছু চরিত্রকে বৃহস্পতিবার দিনভর সিজিও কমপ্লেক্সে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে। কেউ বাইরে গাড়ি রেখে দোকানে খাবার খেয়েছেন। কেউ সিজিও কমপ্লেক্সে ঘোরাফেরার পর নিজে থেকেই অন্য একটি অফিসের খোঁজ করেছেন। ভাবটা এমন, যেন ভুল করে ঢুকে পড়েছেন। তবে হাঁটাচলা থেকে কথা বলা চাপা টেনশনটা লুকোতে পারেননি এঁরা কেউই।
ঠিক যেমন সারাদিন টেনশন লুকোনোর বৃথা চেষ্টা করে গিয়েছেন তাঁদের ‘দাদা’। এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন মদন। পরিবহণ ভবনে না গেলেও দফতরের সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজকর্ম নিয়ে বার কয়েক কথা হয় তাঁর। বেলার দিকে নব মহাকরণে ক্রীড়া দফতরে যান মদন। দুপুরে যান বড়বাজারে। পরে মধ্য কলকাতার কলাবাগান এলাকায় অনুগামীদের সঙ্গে এক দফা বৈঠক সেরে বাড়ি ফেরেন সন্ধের পর।
ইতিমধ্যে আবার ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-র মতো মদনের যন্ত্রণা বাড়িয়েছেন ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ। হাওড়ার চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় সিসিটিভি-র রেকর্ডিংয়ে সোনালিদেবীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘মদন মিত্রকে ফোন করবেন? উনি তো কাল সিবিআইয়ে যাচ্ছেন!’’ অনুগামীদের মুখে এই কথা শুনে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন মদন। পরে আবার স্তোকবাক্য দিয়েছেন, “সিবিআইয়ের সব প্রশ্নের উত্তর তৈরি আছে। কোনও চিন্তা নেই।”
চেলাদের অবশ্য চিন্তা অনেক। একজন বললেন, “কাল কারা কারা দাদার সঙ্গে যাবে, ঠিক করা হচ্ছে।” জানা গেল, সিবিআই যদি জেরার পরে মন্ত্রীকে ছেড়ে দেয় তা হলে ওখানেই মালা-টালা পরিয়ে সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হবে।
আর যদি তা নয় হয়? তা হলে তৈরি ‘প্ল্যান বি’। ব্যবস্থা করা হচ্ছে বড়সড় মাপের প্রতিবাদ মিছিলের। প্রস্তুতি তুঙ্গে। শুধু রাতটা পোহানোর অপেক্ষা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy