Advertisement
E-Paper

মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা, ছুটিতে পাঠানোর ‘চেষ্টা’ আইসি-কে

এক বিক্ষোভকারীকে চড় মারার অভিযোগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে রবিবার। ৪৮ ঘন্টার মাথায় মঙ্গলবার, শিলিগুড়ি থানার আইসি বিকাশকান্তি দে-কে ছুটিতে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তবে পুলিশের অন্দরের খবর, রাত পর্যন্ত বিকাশবাবু ছুটির আবেদন করেননি। কয়েক দফায় শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহনের সঙ্গে কথাও বলেছেন।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৩২

এক বিক্ষোভকারীকে চড় মারার অভিযোগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে রবিবার। ৪৮ ঘন্টার মাথায় মঙ্গলবার, শিলিগুড়ি থানার আইসি বিকাশকান্তি দে-কে ছুটিতে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তবে পুলিশের অন্দরের খবর, রাত পর্যন্ত বিকাশবাবু ছুটির আবেদন করেননি। কয়েক দফায় শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহনের সঙ্গে কথাও বলেছেন।

কিন্তু তাতেও জট কাটেনি। কারণ, ঘটনার দিন গোড়া থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেননি কেন, সেই প্রশ্নেই শিলিগুড়ি থানার আইসি-কে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী প্রশাসনিক অফিসার ও জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, যখন বিক্ষোভকারীরা মন্ত্রীকে ঘিরে হেনস্থা করছিল, সেই সময়ে তাঁদের সরিয়ে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিতে না। এত সবের পরেও বিক্ষোভকারীর অভিযোগ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করে দেওয়াটাও শাসক দলের নেতা-কর্তারা অনেকেই মানতে পারছেন না। বরং তৃণমূলের অনেকেই জগদ্দলে পূর্ণেন্দু বসুর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভের জেরে সেখানকার আইসি সহ ৪ জনকে সাসপেন্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। থানা সূত্রের খবর, পরিস্থিতি আঁচ করে ছুটিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সহকর্মীদের ইঙ্গিত দিয়েছেন শিলিগুড়ি থানার আইসি-ও। তবে বিষয়টি নিয়ে আইসি বিশদে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর মন্তব্য, “ছুটিছাটার বিষয়টি একান্তই বিভাগীয় ব্যাপার। তাই বলতে পারব না।” শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার জহমোহনও বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। পুলিশ কমিশনার বলেন, “এটা আমার জানা নেই। এ সব নিয়ে আমি কথা বলতে পারব না।”

রবিবার দুপুরে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে একটি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লির শিলান্যাস অনুষ্ঠানে গোলমালের পর থেকেই মন্ত্রী-পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের ভূমিকা নিয়ে নানা মহলে বিতর্ক দানা বাঁধছে। চুল্লির শিলান্যাসে গেলে শ্মশানের পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সদস্যদের একাংশ স্থানীয় কিছু বাসিন্দাকে সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাতে সামিল হন এলাকার ফরওয়ার্ড ব্লক, কংগ্রেসের সদস্যদের একাংশও। মন্ত্রী তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। সেই সময়ে মহানন্দ মন্ডল নামে এক ব্যক্তি মন্ত্রীর মুখের সামনে হাত উঁচিয়ে ‘আমরাই এলাকায় শেষ কথা’ বলে জানিয়ে চুল্লি করতে দেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন বলে অভিযোগ। মহানন্দবাবুর অভিযোগ, তখনই তাঁকে চড় মারেন মন্ত্রী। মন্ত্রীর সহযোগীরা তাঁকে লাথি, ঘুঁষি মেরে জামা ছিঁড়ে দেন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের অনুষ্ঠানের বাইরে নিয়ে যায়।

সে দিন দুপুরেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের অফিসারদের পক্ষ থেকে মহানন্দবাবু সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়। বিকেলে মহানন্দবাবু পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন। রাতে পুলিশ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে। মহানন্দবাবুর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়। খবর পৌঁছয় নবান্নে। সেখান থেকে রিপোর্ট তলব করা হয়। দলীয় পর্যায়ে মুখ্যমন্ত্রী খোঁজখবর নেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

সরকারি সূত্রেই জানা গিয়েছে, প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়ে কেন দুম করে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে, সেই প্রশ্নে ক্ষোভ প্রকাশ করে নবান্ন। সরকারি সূত্রেই জানা গিয়েছে, তাঁর মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের বিরুদ্ধে পুলিশ এমন চড় মারার মামলা দায়ের করে দেওয়ায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বিগ্ন। ঘটনার দিন অনুষ্ঠানস্থলে থাকা অফিসারদের ভূমিকা বিশদে খতিয়ে দেখে কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন পুলিশ কর্তৃপক্ষ। পুলিশের একাধিক শীর্ষ কর্তা জানান, শিলিগুড়ি থানার যে অফিসাররা ঘটনার দিন অনুষ্ঠান স্থলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা এ ধরনের গোলমাল সামলাতে কতটা ‘দক্ষ’ সেই প্রশ্নেই নবান্নের উদ্বেগ বেড়েছে।

পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, একজন মন্ত্রীকে হেনস্থার লিখিত অভিযোগ রয়েছে যাঁর বিরুদ্ধে, তাঁকে পুলিশকে গ্রেফতার করা উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি।

এই অবস্থায় বামেরা লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে। মঙ্গলবার দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের তরফে হিলকার্ট রোডে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে এ কথা জানানো হয়। সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার অভিযোগ করেন, ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “বামেরা উন্নয়নের কাজ বন্ধ করে দিতে চাইছেন। আগেও তারা জানিয়েছিলেন এসজেডিএ অভিযান করে স্তব্ধ করে দেবেন। আমরা দলের তরফে মহামিছিল করে পাল্টা বার্তা দিয়েছি। তাঁরা কী চান না শ্মশানের অত্যাধুনিকরণ হোক। সরকারি উন্নয়ন কাজে বাধা দেওয়ার জন্য অভিযোগ করা হয়েছে।”

kishore saha gautom deb bikashkanti dey
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy