Advertisement
E-Paper

মমতা-সারদা যোগের খুঁটিনাটি জানতে কুণালকে চায় সিবিআই

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সারদা-রেলের চুক্তির নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ। তদন্তে নেমে এ রকমই তথ্য পেয়েছেন সিবিআই-এর গোয়েন্দারা। ইডি-কে লেখা চিঠিতে কালিম্পঙে মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সারদা-কর্তার যে বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছেন কুণাল, সিবিআই সে সম্পর্কেও সবিস্তার জানতে চায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৯

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সারদা-রেলের চুক্তির নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ। তদন্তে নেমে এ রকমই তথ্য পেয়েছেন সিবিআই-এর গোয়েন্দারা। ইডি-কে লেখা চিঠিতে কালিম্পঙে মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সারদা-কর্তার যে বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছেন কুণাল, সিবিআই সে সম্পর্কেও সবিস্তার জানতে চায়। আর সে জন্যই এ বার কুণালকে জেরা করতে চায় সিবিআই। শীঘ্রই ওই সাংসদকে নিজেদের হেফাজতে নিতে আর্জি জানানো হবে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি।

রেলের অধীনস্থ সংস্থা ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং ও ট্যুরিজম কর্পোরেশনের (আইআরসিটিসি) সঙ্গে সারদার বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছিল। সিবিআই সূত্রের খবর, ২০১০ সালে ওই চুক্তির সময়ে রেলমন্ত্রী ছিলেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। সেই চুক্তি সংক্রান্ত তথ্যও ইতিমধ্যে সংগ্রহ করেছেন গোয়েন্দারা। সিবিআই কর্তাদের একাংশ বলছেন, সারদা তদন্তে মুখ খুলতে চেয়ে বার বার সরব হয়েছেন কুণাল। সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে নানা তথ্য জুগিয়ে চিঠিও লিখেছেন আর এক কেন্দ্রীয় সংস্থা, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর কর্তাদের। সেই চিঠিও সিবিআই অফিসারেরা সংগ্রহ করেছেন।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, জেল থেকে আদালতে যাওয়ার পথে কুণালের নানা মন্তব্য এবং ওই চিঠি দেখে গোয়েন্দারা মনে করছেন, জেরায় কুণাল তাঁদের সাহায্য করতে পারেন। সিবিআই সূত্রের খবর, ইডিকে লেখা চিঠিতে ২০১২ সালে কালিম্পঙের ডেলোর গেস্ট হাউসে মমতার সঙ্গে সুদীপ্ত সেনের একটি বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছেন কুণাল। তিনি ওই চিঠিতে বলেছেন, সরকারের পর্যটন সংক্রান্ত ভাবনাচিন্তা রূপায়িত করার ক্ষেত্রে সারদাকে এগিয়ে আসতে বলেছিলেন মমতা। এক আইএএস অফিসারকে ডেকে এ ব্যাপারে সুদীপ্তকে সাহায্য করার নির্দেশও দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

সিবিআই অফিসারেরা বলছেন, রেলের পর্যটন সংস্থা, আইআরসিটিসি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে পর্যটন ব্যবসায় নেমেছিল সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস। সে সময় রেলমন্ত্রী ছিলেন মমতা। সেই সূত্রেই রাজ্যের পর্যটন দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে কোনও প্রকল্প রূপায়ণেও সারদাকে ডাকা হয়েছিল কি না, সেটা জানার চেষ্টা করবেন তদন্তকারীরা। সেই প্রসঙ্গেই কুণালকে জেরা করা হতে পারে বলে গোয়েন্দাদের ইঙ্গিত।

সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, ইডিকে লেখা চিঠিতে তাঁকে সুদীপ্তর মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার আর্জি জানিয়েছেন কুণাল নিজেও। পাশপাশি, অনেককে আড়াল করার জন্যই রাজনৈতিক কারণে তাঁকে এই কেলেঙ্কারিতে জড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন কুণাল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একাংশের বক্তব্য, সারদা কেলেঙ্কারিতে ইতিমধ্যেই রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র-সহ শাসক দলের বেশ কয়েক জন তাবড় নেতার নাম নাম তাঁরা জানতে পেরেছেন। তৃণমূলে থাকার সময় ওই রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল কুণালেরও। সেই সূত্র ধরেই কুণালকে জেরা করে শাসক দলের নেতাদের সঙ্গে সারদার সম্পর্ক নিয়ে তথ্য মিলতে পারে বলে মনে করছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। তৃণমূলের আরও এক নেতা আসিফ খানকে জেরা করেও সারদার সঙ্গে শাসক দলের এক গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ নেতার যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ মিলবে বলে আশাবাদী সিবিআই। ইতিমধ্যেই আসিফের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। শুক্রবার আসিফ খানিকটা হতাশার সুরেই বলেন, “আগে দলের নেতারা অনেকেই খালি পেটে ঘুমোতে যেতেন। আজ শুনি তাঁদের কারও ১০০ কোটি, কারও ৫০০ কোটি, কারও বা হাজার কোটি টাকা রয়েছে।” উত্তরপ্রদেশে দলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করা কলকাতার বাসিন্দা আসিফ বলেন, “সবই শুনি। কিন্তু কে তাঁদের টাকা দিয়েছে, কী জন্য দিয়েছে, কোথায় সে টাকা রয়েছে এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।” তৃণমূলের এই নেতা জানান, এখনও সিবিআই বা ইডি তাঁকে কোনও সমন পাঠায়নি। পাঠালে যাবেন, কিন্তু কিছুই জানাতে পারবেন না। তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, সারদার মিডিয়া ব্যবসাতেও এ রাজ্য এবং অসমের কয়েক জন মন্ত্রী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সুদীপ্ত অভিযোগ করেছেন, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহ, তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী মনোরঞ্জনা সিংহ, অসমের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা-সহ কয়েক জন তাঁকে ঠকিয়েছেন। পাশাপাশি, সারদার ব্যবসা ভেঙে পড়ার আগে কুণাল এবং তাঁর কয়েক জন সহযোগী জোর করে চ্যানেল টেনের মালিকানা লিখিয়ে নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন সুদীপ্ত। সিবিআই কর্তাদের বক্তব্য, কুণাল সারদার গ্রুপ মিডিয়া সিইও ছিলেন। মিডিয়া ব্যবসার অনেক ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন শেষ কথা। সেই সূত্রেই সারদার বিভিন্ন সংবাদপত্র ও চ্যানেল কেনা নিয়ে তাঁর কাছে তথ্য রয়েছে। সারদার টাকা মিডিয়া ব্যবসার মাধ্যমে কোথাও সরানো হয়েছে কি না, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতেও কুণালকে জেরা করার প্রয়োজন রয়েছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন।

ইডিকে লেখা চিঠিতে কালিম্পঙের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সারদার মিডিয়া ব্যবসা নিয়েও সুদীপ্তর আলোচনা হয়েছিল বলে কুণাল দাবি করেছেন। তদন্তকারীরা প্রশ্ন তুলেছেন, লোকসানে চলছে জেনেও কেন সুদীপ্ত বেশ কিছু সংবাদপত্র ও চ্যানেল কিনেছিলেন? তা হলে কি রাজ্যের শাসক দলের কোনও শীর্ষ নেতার নির্দেশেই তিনি এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেও কুণালকে জেরা করা হতে পারে বলে সিবিআই সূত্রের ইঙ্গিত।

saradha case kunal ghosh cbi mamata bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy