Advertisement
E-Paper

রাজ্য এখনও খড়্গহস্ত

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডের তদন্তভার এনআইএ-র হাতে তুলে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার রাজনীতি করছে বলে শুক্রবার ফেসবুকে অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সেই অভিযোগের প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেও। কিন্তু তদন্তে নেমে প্রথম দিনেই ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়ে দিল, রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতেই তারা এগোতে চায়। এবং তাদের এই সমন্বয় বার্তা যে শুধু কথার কথা নয়, এ দিন প্রতিটি পদক্ষেপে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ (সিআইডি) ও বর্ধমান জেলা পুলিশকে সঙ্গী করে কাজ চালানোর মধ্যে দিয়ে তা বুঝিয়ে দিলেন এনআইএ-র কর্তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১১
খাগড়াগড়ের বাড়িতে এনআইএ দল। শনিবার উদিত সিংহের তোলা ছবি।

খাগড়াগড়ের বাড়িতে এনআইএ দল। শনিবার উদিত সিংহের তোলা ছবি।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডের তদন্তভার এনআইএ-র হাতে তুলে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার রাজনীতি করছে বলে শুক্রবার ফেসবুকে অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সেই অভিযোগের প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেও। কিন্তু তদন্তে নেমে প্রথম দিনেই ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়ে দিল, রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতেই তারা এগোতে চায়।

এবং তাদের এই সমন্বয় বার্তা যে শুধু কথার কথা নয়, এ দিন প্রতিটি পদক্ষেপে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ (সিআইডি) ও বর্ধমান জেলা পুলিশকে সঙ্গী করে কাজ চালানোর মধ্যে দিয়ে তা বুঝিয়ে দিলেন এনআইএ-র কর্তারা। তদন্তের সুবিধার জন্য তাঁরা যে দু’টি দল গঠন করেছেন, তাতে রাজ্য ও জেলা পুলিশের কর্তাদেরও রাখা হয়েছে। এর পরে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লির বিরুদ্ধে রাজনীতি করার যে অভিযোগ তুলেছেন, তার ধার আদৌ থাকল কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গেল প্রশাসনের অন্দরেই।

তদন্তের দায়িত্ব হাতে নিয়ে শুক্রবারই সিআইডি-র সদর দফতর ভবানী ভবনে গিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেছিলেন রাজ্যে থাকা এনআইএ-র কর্তারা। শনিবার সকালে দিল্লি থেকে সংস্থার আইজি সঞ্জীব সিংহের নেতৃত্বে একটি দল কলকাতায় এসে ভবানী ভবনে ঘণ্টা দুয়েক বৈঠক করেন।

এনআইএ সূত্রের খবর, সাধারণ ভাবে কোনও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পরে তারা যে ভাবে তদন্ত করে, খাগড়াগড়ের ক্ষেত্রে তার কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটানো হচ্ছে। ভবানী ভবনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, এক সঙ্গে দু’টি দল কলকাতা ও বর্ধমানে কাজ করবে। ধৃতদের মধ্যে দু’জন মহিলা থাকায় তদন্তকারী দলে মহিলারাও থাকছেন। সিআইডি এবং বর্ধমান জেলার কয়েক জন বাছাই অফিসারকে তদন্তের কাজে সঙ্গে রাখা হবে বলেও বার্তা দিয়েছে এনআইএ। খাতায়-কলমে না-হলেও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এই সমন্বয় চায় তারা।

এর পর বিকেলে সংস্থার এসপি বিক্রম খালাটের নেতৃত্বে পাঁচ জনের দল বর্ধমান পৌঁছয়। তার আগে এ দিন সকাল থেকেই অবশ্য বর্ধমানে আসরে নেমে পড়েছিলেন এনআইএ-র ডিএসপি কাঞ্চন মিত্র। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ তিনি বর্ধমান আদালতে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক সুরেশ বিশ্বকর্মার এজলাসে কলকাতা আদালতের শুক্রবারের নির্দেশের প্রতিলিপি জমা দেন। ওই নির্দেশে এনআইএ-কে তদন্তের জন্য সমস্ত নথি দিতে বলা হয়েছিল সিআইডি-কে।

খালাটের নেতৃত্বে এনআইএ-র দল এসে বর্ধমান (সদর) থানার পুলিশ ও সিআইডি-র এসএসপি সব্যসাচীরমণ মিশ্র-সহ কয়েক জন অফিসারের সঙ্গে কথা বলে। তাদের পরের গন্তব্য ছিল এসপি অফিস। এর পরে সিআইডি, জেলা পুলিশ এবং এনআইএ-র অফিসারেরা এক সঙ্গে খাগড়াগড়ের বাড়িটিতে গিয়ে তার ভিতর, বাইরে ও লাগোয়া এলাকার বিস্তর ছবি তোলে। আজ, রবিবার এনআইএ-র আইজি নিজে বর্ধমানে যেতে পারেন। তদন্তের কাজের জন্য সেখানে কোথায় অস্থায়ী অফিস তৈরি করা যায়, সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা রাজ্যের সঙ্গে কাজ করার কথা জানালেও শাসক দলের সুর কিন্তু বদলায়নি। এনআইএ-এর উপস্থিতি ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী’ বলে শুক্রবারই মন্তব্য করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তিনি চান দলের পক্ষ থেকে এই কথাগুলি আরও তীব্রতার সঙ্গে বলা হোক। ফলে এ দিন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর কথার প্রতিধ্বনি করে এনআইএ-র তদন্ত নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দেগেছেন। পার্থবাবুর অভিযোগ, “উৎসবের সময়ে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি কি এ রাজ্যে তাদের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করেছে? আসলে কোনও কোনও রাজ্যের নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্র অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছে।”

শাসক দলের এই তোপের মুখেও সমন্বয়ের বার্তা কেন দিচ্ছে এনআইএ? বিশেষ করে রাজ্যের পুলিশের বিরুদ্ধে যখন তদন্ত ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। বিস্ফোরণের ক’দিনের মধ্যেই বর্ধমান থানার পুলিশ খাগড়াগড়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক নষ্ট করে ফেলে। আর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এনআইএ-কে তদন্তের ভার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে শুক্রবার দুপুর ও সন্ধ্যায় পুলিশ ও সিআইডি-র দল যে ভাবে অকুস্থল থেকে ব্যাগ বোঝাই করে ‘নমুনা’ নিয়ে গিয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।

এনআইএ-র তদন্তকারীদের একাংশ বলছেন, এমন বিরূপ আবহেও পুলিশ এবং সিআইডি-র সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে চলতে চাওয়ার পিছনে তাৎপর্য রয়েছে। তাঁদের মতে, খাগড়াগড়ের ঘটনা আদতে সিন্ধুর মধ্যে বিন্দু। এই ঘটনা থেকে পাওয়া সূত্র ধরে এগোলে বোমা-কাণ্ডে জামাতের লিঙ্কম্যানদের খোঁজ এবং রাজ্যে বিস্ফোরক ভাণ্ডারের হদিস এক ঢিলে এই দুই পাখিই হাতে আসতে পারে। তদন্তের জাল দরকারে কলকাতা বা বর্ধমানের বাইরেও ছড়াতে পারে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের ধারণা, বছর তিনেক ধরেই জামাত লিঙ্কম্যানরা এ রাজ্যে সক্রিয়। কলকাতা লাগোয়া দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ছাড়াও মালদহ, মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ডেরায় বিস্ফোরক ও অস্ত্র মজুত করেছে তারা। সেই অস্ত্র ভাণ্ডারের খোঁজ পেতে এবং সামগ্রিক তদন্তের স্বার্থে রাজ্য পুলিশের সহযোগিতা একান্ত দরকার বলেই এনআইএ কর্তাদের মত।

তাই বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পরে পুলিশ এবং সিআইডি কী ভূমিকা নিয়েছিল, তা নিয়ে এখন আর কোনও প্রশ্ন তুলতে চায় না এনআইএ। তদন্তকারী দলের এক সদস্যের বক্তব্য, “বর্ধমান বা পশ্চিমবঙ্গের অচেনা জায়গায় কাজ করতে হলে রাজ্য পুলিশই সব থেকে ভাল পথপ্রদর্শক হতে পারে। সুতরাং এই অবস্থায় তাদের সঙ্গে নিয়ে এগোনোটাই পেশাদারিত্ব।” সব দেখেশুনে এক সিআইডি কর্তার মন্তব্য, “ওরা সব বিষয় নিয়েই আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করছে। এখনও পর্যন্ত এনআইএ যা করেছে, কোনওটিই আমাদের থেকে গোপন রেখে করেনি। মনে হচ্ছে আমরাও এই তদন্তের শরিক।”

তদন্তে নেমে কয়েকটি প্রশ্ন ভাবাচ্ছে এনআইএ-কে। l এ দেশে তৈরি হওয়া বিস্ফোরক কি শুধুই বাংলাদেশে পাচার করা হয়েছিল? l বিস্ফোরক তৈরির কারখানা কি শুধু বর্ধমান জেলাতেই গড়ে উঠেছিল?

জামাত-ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সংগঠনের বিষয়েও কেন্দ্রীয় রিপোর্টের ভিত্তিতে খোঁজখবর চালাচ্ছে এনআইএ। এ দিন অবশ্য কিছু নিয়েই মুখে খোলেননি তদন্তকারীরা। সন্ধ্যায় রাজ্য পুলিশের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে সংস্থার এসপি বিক্রম খালাটে শুধু বলেন, “তদন্ত শুরু করেছি। কী অগ্রগতি হল, তা যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে।”

nia state bardwan khagragarh blast
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy