Advertisement
E-Paper

রেললাইন না দিঘি, দ্বিধায় গোঘাট

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১০
এই দিঘির জন্যই আটকে রেললাইন পাতার কাজ। ছবি: মোহন দাস।

এই দিঘির জন্যই আটকে রেললাইন পাতার কাজ। ছবি: মোহন দাস।

নদ-নদী অধ্যুষিত আরামবাগ মহকুমাকে রেলপথের সঙ্গে যুক্ত করার দাবি একশো বছরেরও বেশি পুরনো। সেই আরামবাগ এলাকাতেই রেললাইন বসাতে গিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে রেল-কর্তাদের। এলাকার একটি প্রাচীন দিঘিকে রক্ষা করার দাবিতে গ্রামবাসীরা এককাট্টা। রেললাইন পাতার বিরোধী না হলেও, তাঁরা চাইছেন দিঘিটি অক্ষত থাক। তাতেই বেধেছে গোল।

ওই দিঘির জন্যই হাওড়া থেকে বিষ্ণুপুর পর্যন্ত ১১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন পাতার কাজ কামারপুকুরের কাছে গোঘাটের ভাবাদিঘি গ্রাম এলাকায় পৌঁছে থমকে গিয়েছে। বাকি কাজ অবশ্য প্রায় পুরোটাই হয়ে গিয়েছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘ঠিক হয়েছে, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ওই এলাকায় যত দূর সম্ভব রেললাইন পাতার কাজ শেষ করা হবে। তবে ওই জলাশয়টিকে ঘিরে যে জটিলতা দেখা দিয়েছে, সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কথাবার্তা বা সিদ্ধান্ত কিছুই হয়নি। ’’

রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরামবাগে রেললাইন পাতার কাজের অনুমোদন করেন। জরুরি ভিত্তিতে সে কাজ শুরুও হয়ে যায়। মমতা তখন ঘোষণা করেছিলেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, হুগলির তারকেশ্বর এবং ফুরফুরাকে রেল মারফত যুক্ত করবেন। একই সঙ্গে হিন্দু এবং মুসলিমদের পবিত্র ধর্মস্থানকে যোগ করা সম্ভব হবে রেলের মানচিত্রে। কিন্তু পরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। মমতা রেলমন্ত্রক ছেড়ে দেন। ফুরফুরায় রেল লাইন পাতার কাজ তখন থমকে যায়। যদিও আরামবাগ মহকুমায় রেললাইন পাতার কাজ পূর্ব ঘোষণা মতোই হয়। মমতা নিজে সেই রেল লাইনের উদ্বোধন করেন।

বিষ্ণুপুর এবং তারকেশ্বরের দিক থেকে রেলপথ পাতার কাজ দ্রুতগতিতে চলতে থাকে। দ্বারকেশ্বর নদের উপরে রেল চলাচলের উপযুক্ত বড় সেতু নির্মাণের কাজও শেষ হয়ে যায় নির্দিষ্ট সময়ে। কিন্তু জটিলতা হয় গোঘাটের ভাবাদিঘি এলাকায় রেল লাইনের কাজ করতে গিয়ে। লাইন পাততে পুরোটা না হলেও ৫২ বিঘার ওই জলাশয়ের একাংশ বুজিয়ে ফেলার কথা ভেবেছিল রেল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ দাবি তোলেন, এলাকার প্রাচীন ওই দিঘিটি কোনও ভাবে বো়জানো যাবে না। সেটিকে অক্ষত রেখেই লাইন পাততে হবে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের নথিতেও ওই দাগ-খতিয়ান নম্বরের জমি জলাশয় বলেই উল্লিখিত রয়েছে। দিঘির নামেই গ্রামের নাম।

স্থানীয় ওই বাসিন্দাদের যুক্তি, ওই দিঘিটি গ্রামের ১৭৫টি পরিবারের প্রায় ৭০০ মানুষ প্রতিদিন ব্যবহার করেন। বেশ কিছু পরিবারের রুটি-রুজি হচ্ছে ওই দিঘিতে করা মাছ চাষ। রেল প্রকল্পে দিঘি ক্ষতিগ্রস্ত হলে টান পড়বে তাঁদের সংসারে। তাই তাঁরা রেল যোগাযোগের যাবতীয় সুবিধার কথা মাথায় রেখেও দিঘিটি বাঁচাতে চান। এই দাবি নিয়ে মামলাও হয়েছে। কিন্তু রেলের প্রকল্পে ওই লাইন পাতার মানচিত্র যে ভাবে হয়েছে, তা গ্রামবাসীদের দাবির পরিপন্থী।

ভাবাদিঘি এলাকার বাসিন্দা তথা ওই দিঘির অন্যতম অংশীদার স্বপন রায়, লক্ষ্মীকান্ত রায়, শান্ত মালিক, শ্যামদেব পোড়েলদের বক্তব্য, ‘‘রেল লাইন দিঘির উপর দিয়ে না গিয়ে পাড় দিয়ে যাক। না হলে দিঘির উপরে সেতু তৈরি হোক।’’ গ্রামবাসীদের দাবিমতো রেলপথ তৈরি হলেও সে ক্ষেত্রে ভাঙা পড়বে ১৬টি বাড়ি। পুকুর পাড়ের উপর দিয়ে রেলপথ গেলে ভাঙা পড়বে ভাবাদিঘি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যদিও সে ক্ষেত্রে নতুন স্কুলবাড়ি তৈরির জন্য গ্রামবাসীরা জমি দিতে রাজি বলে দাবি করেছেন।

পূর্ব রেলের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘স্থানীয় সুবিধার কথা ভাবতে গিয়ে ওই এলাকার কিছু মানুষ আগামীকে অস্বীকার করছেন। প্রকল্প কার্যকর হলে ভবিষ্যতে শুধু ভাবাদিঘি গ্রাম নয়, গোটা তল্লাটের চেহারাটাই আমূল বদলে যাবে। দেখা যাক, সেটা কী ভাবে ওঁদের বোঝানো যায়।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy