Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

লাভপুরে এসেই হুমকি শুনলেন নিহতদের মা

তিন ছেলে খুন হওয়ার পর থেকেই তিনি এলাকাছাড়া। বারবার চাপ এসেছে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। চার বছর পরে রবিবারই লাভপুরে আর এক ছেলের বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানেও তাঁকে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন লাভপুরে নিহত সিপিএম সমর্থক তিন ভাইয়ের মা জরিনা বিবি।

নিহত ভাইদের মা জরিনা বিবি। ফাইল চিত্র

নিহত ভাইদের মা জরিনা বিবি। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
লাভপুর শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৪ ০৩:৪৮
Share: Save:

তিন ছেলে খুন হওয়ার পর থেকেই তিনি এলাকাছাড়া। বারবার চাপ এসেছে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। চার বছর পরে রবিবারই লাভপুরে আর এক ছেলের বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানেও তাঁকে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন লাভপুরে নিহত সিপিএম সমর্থক তিন ভাইয়ের মা জরিনা বিবি।

লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম (যিনি ওই খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত) এবং তাঁর অনুগামীরাই ওই হুমকি দিচ্ছেন বলে পরিবারটির অভিযোগ। আতঙ্ক এতটাই যে, রবিবার রাত পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে থানা অবধি গিয়ে পরিবারের কেউ এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে পারেননি। বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “পরিবারটির পক্ষ থেকে কোনও হুমকির অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে, লাভপুর থানার পুলিশকে ওই এলাকায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলছি।” জরিনা বিবির পাল্টা প্রশ্ন, “যে পুলিশ চার্জশিট থেকে বিধায়কের নাম বাদ দিয়েছে, তাদের কাছে ফের অভিযোগ জানিয়ে কী লাভ? পুলিশ তো শাসক দলের হয়েই কাজ করবে!” আর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে মনিরুলকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, “ওই পরিবার তো আর অভিযোগ করছে না, করছেন আপনারা! নো-কমেন্টস।”

২০১০ সালের ৪ জুন লাভপুরের নবগ্রামে মনিরুলের বাড়িতে সালিশি সভায় খুন হন তিন সিপিএম সমর্থক ভাই জাকের আলি, কোটন শেখ এবং ওইসুদ্দিন শেখ। তৃণমূলের তৎকালীন জেলা সহ-সভাপতি মনিরুল-সহ ৫১ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। নিহতদের পরিবারের দাবি, তৃণমূলের চাপে পড়েই তাঁদের পরিবারের সাত জন মনিরুলকে নির্দোষ বলে আদালতে জবানবন্দি দিতে বাধ্য হন। সেই বিষয়টিকে ঢাল করে বোলপুর আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে মনিরুলের নামই বাদ দিয়েছে বীরভূম জেলা পুলিশ। পরে অবশ্য পুরনো জবানবন্দি প্রত্যাহার করে নতুন করে তা নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে হলফনামা জমা দেন নিহতদের এক ভাই সানোয়ার শেখ। গত বুধবার পুলিশ ওই মামলায় অস্ত্র আইনে মনিরুলের নামে চার্জশিট দেওয়ার জন্য জেলাশাসকের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল। সেই অনুমতি এখনও মেলেনি বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

চার বছর আগের সেই ঘটনার পর থেকেই ঘরছাড়া গোটা পরিবার। বাড়ির লোকেরা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়েছেন। গত চার বছর বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় কাটানোর পরে রবিবারই ফের বীরভূমে এসেছেন নিহত তিন ভাইয়ের মা। লাভপুর থানা এলাকায় বাস করেন তাঁর এক ছেলে মজল শেখ। জীবিত ভাইদের মধ্যে মজলই একমাত্র লাভপুরে থাকেন। অবশ্য নিজেদের গ্রামে থাকতে পারেননি তিনি। রয়েছেন অন্য গ্রামে, আত্মগোপন করে। এ দিন বেলা ২টো নাগাদ তাঁরই বাড়িতে পৌঁছন জরিনা বিবি। অভিযোগ, সেখানে পৌঁছনোর খবর পাওয়ার পর থেকেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে হুমকি দিতে শুরু করে।

মজল বলেন, “মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত মনিরুলের অনুগামী যাদব শেখ-সহ আরও কয়েক জনকে পুলিশ আজও ধরতে পারেনি। যদিও ওরা আজও লাভপুর এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ দিন তারাই হুমকি দেয়, মামলা প্রত্যাহার করে না নিলে বা পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুললে তিন ভাইয়ের মতো অবস্থা হবে আমাদেরও।” এ দিনের অভিজ্ঞতার পরে মাকে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মজল। জরিনা বিবি বলেন, “খুনের পর থেকেই বিভিন্ন আত্মীয় ও ছেলেদের বাড়ি বাড়ি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। নিজের ভিটেতে ঢোকার সাহস নেই। সংবাদমাধ্যম পাশে থাকায় ফের এ দিকে আসার সাহস পেয়েছিলাম। কিন্তু এসে যা দেখলাম, সোমবারই হয়তো এলাকা ছাড়তে হবে!”

তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওই এলাকায় সন্ত্রাসের আবহ তৈরির অভিযোগ এনেছেন সিপিএমের লাভপুর জোনাল সম্পাদক পল্টু কোঁড়াও। তাঁর দাবি, “তিন দলীয় সমর্থক খুনে অভিযুক্তদের একাংশ এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এমনকী, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে ঠিকাদার হিসেবে কাজও করছে। অথচ পুলিশ তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। এই চিত্র গোটা রাজ্যেরই।” যদিও জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের বক্তব্য, “অভিযোগকারী পক্ষই যেখানে জবানবন্দি দিয়ে জানাচ্ছে, মনিরুল ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন, সেখানে হুমকি দেওয়ার প্রশ্ন উঠছে কী করে? সব সাজানো।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

monirul islam zarina bibi labhpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE