Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

লগ্নি প্রতারণার সব মামলা এক সূত্রে গাঁথছে সিবিআই

বিভিন্ন লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে মামলার সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে সারদার বিরুদ্ধেই ৫৮৫টি। রাজ্যের বিশেষ তদন্ত দলের (সিট) আওতায় এই পাহাড়প্রমাণ মামলা খুঁটিয়ে দেখতে কার্যত হিমশিম অবস্থা সিবিআইয়ের। তাই সব মামলা একত্র করে একটি মামলার মধ্যে নিয়ে আসার কথা ভেবেছে ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০৩:১৪
Share: Save:

বিভিন্ন লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে মামলার সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে সারদার বিরুদ্ধেই ৫৮৫টি। রাজ্যের বিশেষ তদন্ত দলের (সিট) আওতায় এই পাহাড়প্রমাণ মামলা খুঁটিয়ে দেখতে কার্যত হিমশিম অবস্থা সিবিআইয়ের। তাই সব মামলা একত্র করে একটি মামলার মধ্যে নিয়ে আসার কথা ভেবেছে ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। অথবা, দায়ের হওয়া মামলা থেকে গোটা ছয়েক আলাদা করে মূল তদন্ত শুরুর কথাও ভাবছে সিবিআই। চলতি মাসের শেষেই সারদা-কাণ্ডে প্রথম মামলাটি দায়ের করতে চলেছে সিবিআই।

কেন্দ্রীয় সংস্থার বক্তব্য সিট এত দিন তদন্ত করলেও তাদের কাছে সব মামলার খুঁটিনাটি তথ্য নেই। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের থানায় সে সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। থানায় থানায় ঘুরে ওই সব মামলার তথ্য জোগাড় করা কোনও মতেই সম্ভব নয়। তা ছাড়া এফআইআরের বয়ান নিয়েও অসন্তুষ্ট সিবিআই। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, “যে ক’টি এফআইআর আমরা দেখেছি, তার অধিকাংশই এক লাইন বা তিন লাইনের। সেখানে কেবল অভিযুক্তের নামধাম উল্লেখ করে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কী ভাবে ওই প্রতারণা হয়েছে, তার কোনও কথা নেই!”

সিবিআই তো বটেই, রাজ্যের পুলিশকর্তাদের একাংশও বলছেন, এফআইআরে দেওয়া তথ্যই তদন্তের অভিমুখ নির্দিষ্ট করে। পরে তদন্ত এগোলে নতুন নতুন তথ্যের খোঁজ মেলে, যা পরবর্তী কালে মামলাটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। কিন্তু সারদা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত এফআইআরগুলির অধিকাংশ এতই কমজোরি যে, সেই তথ্য ধরে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণ করা কার্যত অসম্ভব। সিবিআই দেখেছে, সারদার বিভিন্ন সংস্থায় অর্থ লগ্নি করে টাকা ফেরত না পাওয়ার অভিযোগে যে এফআইআরগুলি হয়েছে সেগুলির বয়ানও প্রায় এক। এবং সেই সূত্র ধরে কেবল নির্দিষ্ট কয়েক জনের নামেই রাজ্যের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করেছে সিট।

রাজ্যের একাধিক পুলিশকর্তার মতে, এর পিছনে যত না তদন্তের তাগিদ রয়েছে, তার চেয়ে বেশি কাজ করেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। মূলত অভিযুক্তদের হেনস্থা করতে, তাঁরা যাতে মামলার জাল কেটে বেরোতে না পারে, তার জন্য রাজ্যজুড়ে শ’য়ে শ’য়ে মামলা হয়েছে। এক গোয়েন্দা-কর্তা বলেন, “বছর দুয়েক আগে কঙ্কাল-কাণ্ডের বহু মামলায় গড়ে একশোর বেশি লোককে অভিযুক্ত করে তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশ। অভিযুক্ত বেশি হলে যেমন মামলা কমজোরি হয়, তেমন এফআইআর বেশি হলে তদন্ত লঘু হয়।”

এই পরিস্থিতিতে সারদা কেলেঙ্কারির বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের শিকড় খুঁজতে ময়দানে নেমেছে সিবিআই। কিন্তু এ কাজে কতটা রাজ্য পুলিশের সাহায্য মিলবে, তা নিয়েই সংশয়ে তারা। নবান্ন সূত্রের খবর, দু’দিন আগে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র ও রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডির সঙ্গে দেখা করে পুলিশি সাহায্যের আর্জি-ই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীরা। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, “সারদা-সহ অন্য লগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে অধিকাংশ অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারণার মামলা দায়ের করেছে সিট। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যা জানতে চেয়েছে, অর্থাৎ, সারদার টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়েছে, তার কোনও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হয়নি।”

সিবিআই বলছে, মল্লিকা চট্টোপাধ্যায় নামে এক আমাতকারী গত বছরের মে-তে নরোত্তম দত্ত নামে এক সারদা-এজেন্টের বিরুদ্ধে বিধাননগর (উত্তর) থানায় একটি মামলা করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, সারদার চারটি সংস্থায় তিনি ছ’লক্ষের বেশি টাকা রেখে ঠকেছিলেন। পরে ওই মামলায় নরোত্তমের সঙ্গে সারদার কয়েক জন কর্ণধারের নাম জুড়ে দিয়ে প্রতারণার পাশাপাশি ষড়যন্ত্রের ধারাও যোগ করে সিট। সারদা কেলেঙ্কারিতে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের নমুনা হিসেবে এই মামলাটিকেই সুপ্রিম কোর্টে তুলে ধরেছিল রাজ্য সরকার। সেই ষড়যন্ত্র কতটা গভীর, তা এখন মাপতে চাইছে সিবিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

debjit bhattacharya cbi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE