Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

শুধু সন্ত্রাস নয়, ব্যর্থতাও কবুল বিমানের রিপোর্টে

ভোটের আগে থেকেই সন্ত্রাসের আবহ ছিল বহু ক্ষেত্রে। ভোটের দিন রিগিং, ভোট-লুঠের ভূরি ভূরি অভিযোগও ছিল। তা সত্ত্বেও মাটি কামড়ে পড়ে থেকে সংগঠন যেখানে লড়াই করতে পেরেছে, সেখানে এই দুর্দিনেও অপেক্ষাকৃত ভাল ফল হয়েছে। সন্ত্রাসের পরিবেশ যে হেতু এখনই স্বাভাবিক হওয়ার আশা নেই, তাই এলাকায় এলাকায় মানুষের পাশে থেকেই পরিস্থিতি বদলানোর লড়াই করতে হবে। সেই লড়াইয়ে প্রয়োজন হলে বদলাতে হবে সৈনিক। নির্বাচনী বিপর্যয়ের পরে দলের রাজ্য কমিটিতে পেশ-করা রিপোর্টে জানিয়ে দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৪ ০৩:৩৫
Share: Save:

ভোটের আগে থেকেই সন্ত্রাসের আবহ ছিল বহু ক্ষেত্রে। ভোটের দিন রিগিং, ভোট-লুঠের ভূরি ভূরি অভিযোগও ছিল। তা সত্ত্বেও মাটি কামড়ে পড়ে থেকে সংগঠন যেখানে লড়াই করতে পেরেছে, সেখানে এই দুর্দিনেও অপেক্ষাকৃত ভাল ফল হয়েছে। সন্ত্রাসের পরিবেশ যে হেতু এখনই স্বাভাবিক হওয়ার আশা নেই, তাই এলাকায় এলাকায় মানুষের পাশে থেকেই পরিস্থিতি বদলানোর লড়াই করতে হবে। সেই লড়াইয়ে প্রয়োজন হলে বদলাতে হবে সৈনিক। নির্বাচনী বিপর্যয়ের পরে দলের রাজ্য কমিটিতে পেশ-করা রিপোর্টে জানিয়ে দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। সেই সঙ্গেই মেনে নিলেন, নেতৃত্বের ভুল কৌশলও পরোক্ষে বিজেপি-র বাড়বাড়ন্তে সহায়ক হয়েছে।

দলের হাফ ডজন পলিটব্যুরো সদস্যের উপস্থিতিতে সোমবার থেকে আলিমুদ্দিনে শুরু হওয়া সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে রাজ্য সম্পাদকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘বিপর্যয়কর ফলের কারণ খুঁজতে গিয়ে আমরা যেন সন্ত্রাসকেই একমাত্র বা প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত না করি। কমিউনিস্টদের প্রধান হাতিয়ার সংগঠন ও প্রধান সম্বল মানুষ’। আক্রমণের মুখেও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিয়েই এগোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে। একই সঙ্গে চাঞ্চল্যকর তথ্য সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, বামেদের পক্ষে এমন কঠিন নির্বাচনের সময়েও প্রতিটি জেলাতেই কিছু নেতা-কর্মী প্রকাশ্যে বা গোপনে বাম প্রার্থীর বিরুদ্ধাচরণ করেছেন!

যেখানে যেখানে আক্রমণের মুখেও তৃণমূল স্তরে মানুষের পাশে দাঁড়ানো গিয়েছে, সেখানে ভোটপ্রাপ্তির হারে একেবারে ভরাডুবি হয়নি বলে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব দেখিয়েছেন। যেমন, তাঁদের উদাহরণ: গোটা রাজ্যে বামফ্রন্ট এ বার ভোট পেয়েছে ২৯.৬০%। কিন্তু তারই মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কোচবিহার, বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম ও জলপাইগুড়ি জেলা ওই ২৯.৬০%-এর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে। সেখানে সন্ত্রাসের কিছু ছিল না, তা তো নয়! লোকসভায় আসনের নিরিখে কিছু করতে না পারলেও এই জেলাগুলি পঞ্চায়েতের থেকে আর বেশি রক্তক্ষরণ হতে দেয়নি। সংগঠনের মিলিত প্রয়াসেই এই কাজটুকু সম্ভব হয়েছে বলে আলিমুদ্দিন মনে করছে।

রিপোর্টে মেনেই নেওয়া হয়েছে, তৃণমূল এখন যে পথে চলছে, সেই গা-জোয়ারির রাস্তা থেকে তারা সরে আসবে বলে মনে করার কোনও কারণ নেই। রাজ্যে ভোটের হার অনেকটা বাড়িয়ে কেন্দ্রেও যে হেতু বিজেপি ক্ষমতাসীন হয়েছে, তাই নিচু তলার কর্মীদের মধ্যে ‘দোদুল্যমানতা’ (অর্থাৎ গেরুয়া শিবিরের দিকে ঝোঁকা) বাড়বে। এই অবস্থায় তা হলে করণীয় কী? রিপোর্টে বলা হয়েছে: ‘পরিস্থিতির এই জটিলতা থেকে মুক্তির কোনও সম্ভাবনা নেই। অন্য দিকে, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতাহীন কমরেডদের দিয়ে আপাত-বিভ্রান্ত মানুষকে জয় করে আনার কাজটি আদৌ সম্ভব হবে না’! কয়েক মাসের মধ্যে নেতৃত্বে রদবদল আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেলেছে সিপিএম। এই রিপোর্টে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, দলের কাজ করতে যাঁরা এখনও অপারগ, দু’বছর আগের সাংগঠনিক সুপারিশ মেনেই তাঁদের এ বার নির্মম ভাবে ছেঁটে ফেলা হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, কোথায় ভুল হল এ বারের ভোটে? কেন এমন বেনজির বিপর্যয়? সন্ত্রাস, ভোট-লুঠ এবং বিজেপি-র উত্থানের মতো চর্চিত বিষয়গুলি ছাড়াও কয়েকটি দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে রাজ্য সম্পাদকের রিপোর্টে। এক দিকে যেমন জেলায় জেলায় দলেরই কিছু কর্মীর বিরুদ্ধাচরণকে দায়ী করা হয়েছে, তেমনই মেনে নেওয়া হয়েছে নেতৃত্বের কৌশলে ব্যর্থতার কথাও। বলা হয়েছে: বহু ক্ষেত্রেই দলের প্রচার ও স্লোগান থেকে মনে হয়েছে, এটা যেন বিধানসভার ভোট! লোকসভার নির্বাচন নয়! রিপোর্টের ভাষায়, ‘আগামী দিনে দেশকে কী ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে সঙ্ঘ পরিবার নিমজ্জিত করতে পারে, সে ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপে রাজ্য নেতৃত্ব-সহ সব স্তরের নেতৃত্বের ঘাটতি ছিল। ফলে, কর্মী বাহিনীর মধ্যে প্রধানত তৃণমূলের প্রতি ক্ষোভ ও ঘৃণাই সামনে এসেছে। রাজ্য সরকারের জনবিরোধী ভূমিকা, দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির সম্পর্কে প্রচারের ফলটা তুলনামূলক ভাবে বামফ্রন্ট অপেক্ষা বিজেপি বেশি পেয়েছে বলে ধারণা’।

দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “আমরা বলতে চাইছি, পালিয়ে গিয়ে সমস্যার কোনও সমাধান হবে না। পরিস্থিতি কঠিন হলেও লড়াই জারি রাখতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sandipan chakrabarty biman basu cpm report
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE